|
ভারত প্যাভিলিয়ন বিশ্বমেলা পার্কের 'এ' এলাকায় অবস্থিত। ইট-লাল রঙের স্থাপত্যের প্রধান অংশ, সবুজ ঔষধি জাতীয় বৃক্ষ-ঢাকা গম্বুজাকৃতির ছাদ এবং গভীর দক্ষিণ এশীয় ধর্মীয় রীতিনীতি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এর মধ্য ৩৭ মিটার ব্যাসের কেন্দ্রীয় গম্বুজাকৃতি ছাদ হচ্ছে সারা প্যাভিলিয়নের প্রতীকী স্থাপত্য। এর প্রেরণা বৌদ্ধ ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ শহরের সাচি বৌদ্ধ স্মৃতিসৌধ থেকে এসেছে। এটা হিন্দু, বৌদ্ধ, ইসলাম, শিখ ও খৃষ্ট ধর্মে সবসময় তৈরি হওয়া স্থাপত্যের স্টাইল।
সাচি বৌদ্ধ স্মৃতিসৌধ হচ্ছে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন বৌদ্ধ ধ্বংসাবশেষ। পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধন তীর্থস্থান। বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে সূত্র থাকার কারণে সাচি বৌদ্ধ স্মৃতিসৌধের প্রতি চীনাদের বিশেষ অনুভূতি রয়েছে। সুতরাং ভারত প্যাভিলিয়নের কেন্দ্রীয় গম্বুজাকৃতি ছাদ হচ্ছে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্ম মেশানোর প্রতীক।
ভারত প্যাভিলিয়নের ডিজাইনার নাইডু সংবাদদাতাকে বলেন, তাদের প্যাভিলিয়নের প্রসঙ্গ হচ্ছে 'সম্প্রীতিময় শহর'। তারা আশা করেন, এবারের বিশ্বমেলার মাধ্যমে বিশ্ব জনগণ উপলব্ধি করবেন যে, ভারত জ্বালানী সাশ্রয় ও পরিবেশ সংরক্ষণ প্রযুক্তি নিজের সংস্কৃতিতে মেশানোর চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে প্রকৃতির সঙ্গে উত্তমরূপে সংযুক্ত করার মাধ্যমে সৃজনশীল সমাধান পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা যায়। সুতরাং বাঁশ দিয়ে কেন্দ্রীয় গম্বুজাকৃতি ছাদ নির্মাণ করা সে প্যাভিলিয়নের উল্লেখযোগ্য বিষয়। নাইডু ব্যাখ্যা করে বলেন,
(রি-১)
"বাঁশের দ্রুত পুনর্ব্যবহার উপযোগী হওয়ার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কল্যাণকর এবং পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য এটি লাভপ্রদ। ঔষধি জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে বাঁশ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বড় হওয়া বৃক্ষগুলোর মধ্যে অন্যতম। ৩/৪ বছরই বাঁশ বড় হয়। কেটে নেওয়ার পরও আবারো দ্রুত বড় হয়। পাশাপাশি বাঁশের কার্বনডাই-অক্সাইড গ্রহণের পরিমাণ সাধারণ গাছের ৪ গুণ। এ কারণে ভারত প্যাভিলিয়ন বাঁশ দিয়ে গম্বুজাকৃতি ছাদ নির্মাণ করে। এটা পুরোপুরিভাবে ভারতের যথাযথভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার এবং প্রকৃতির সঙ্গে সহঅবস্থানের ধারণা প্রতিফলিত হয়েছে।"
এছাড়া সৌরশক্তি বোর্ড, জলপর্দা জলপ্রপাত ও বায়ু বিদ্যুত্ কলসহ বিভিন্ন পরিবেশ সংরক্ষণ ডিজাইন ভারত প্যাভিলিয়নের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জ্বালানী সাশ্রয় ও পরিবেশ সংরক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়নের ধারণা প্রতিফলিত হয়।
ভারত প্যাভিলিয়নে বেড়ালে ইতিহাসে চিন্তার পরিক্রমের মধ্য দিয়ে শহর ও গ্রাম, ঐতিহ্য ও আধুনিকতা কীভাবে মিশে আছে তা দেখা যাবে। ভারতের মানুষ বিশ্বাস করেন, ঐক্য ও জীব বৈচিত্র এক সাথে থাকে। তারা মনে করেন, বহুমুখী সংস্কৃতিকে সম্প্রীতির সাথে সংযুক্ত করা হচ্ছে 'শহর, জীবনযাপনকে আরো সুন্দর করে তোলার' চাবিকাঠি।
যদি পরিবেশ সংরক্ষণের ধারণা এবং আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার ভারত প্যাভিলিয়নে প্রাকৃতিক আমেজ এনে দেয়, তাহলে প্যাভিলিয়নে ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পজাত পণ্যের প্রদর্শন সত্যিকার অর্থে ভারত সম্পর্কে দর্শকদের মধ্যে অন্য এক অনুভূতি নিয়ে আসে। রঙিন শাড়ি, বহু ধরনের ভারতীয় হস্তশিল্পজাত পণ্য, অতিসূক্ষ্ম ও সুন্দর স্বর্ণ ও রৌপ্য অলংকার বা তাজমহলের মডেল সবকিছুতেই সুদীর্ঘকালের গঙ্গা অববাহিকার সংস্কৃতি রয়েছে।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |