|
দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম বড় শহর সাও পলোতে ১ কোটি ১০ লাখ নাগরিক আছেন। ১ হাজার ৫৩০ বর্গকিলোমিটারের সে শহর হচ্ছে ব্রাজিলের অর্থনৈতিক ও আর্থিক কেন্দ্র। আপনি যদি ২০০৭ সালের আগে সাও পলো যেয়ে থাকেন, তাহলে হয়তো সে শহর আপনার ভালো নাও লাগতে পারে। কারণ শহরের প্রত্যেক জায়গায় বিজ্ঞাপনী বোর্ড আপনার দৃষ্টিগোচর হতো। ফলে আপনি কোন দৃশ্য দেখতে পেতেন না। ২০০৭ সালে 'শহরের দূষণমুক্ত আইন' প্রণয়ণের পর বিজ্ঞাপনী বোর্ড ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। শহরের আগের চেহারা ফিরে এসেছে। আজ আমরা শাংহাই বিশ্বমেলা উদ্যানে 'শহরের শ্রেষ্ঠ অনুশীলন অঞ্চলে' অবস্থিত সাও পলো প্যাভিলিয়নে যাবো। আমরা এক সাথে দূষণমুক্ত শহরের সুন্দর জীবন উপলব্ধি করবো।
সাও পলো প্যাভিলিয়নের বাইরের আকার ওই শহরের একটি প্রতীকী স্থাপত্য কোপান ভবনের মতো। আমাদের সংবাদদাতা দেখেছেন যে, বাইরের দেয়ালে কয়েক হাজার চৌকো প্রদর্শনী বোর্ড - ঠিক আবাসিক ভবনের এক একটি পরিবারের জানালার মত। ডিজাইনার প্যাভিলিয়নের বাইরের দেয়ালের রং কালো থেকে ধীরে ধীরে সাদাতে পরিবর্তিত করেছেন। এটা শহরের আগের ময়লা অবস্থা থেকে পরিচ্ছন্নতায় পরিবর্তনের প্রতীক।
প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকলে প্রথমেই 'শহরের দিগন্ত' নামের প্রদর্শনী কেন্দ্র সামনে পড়বে। তারপর সারি সারি স্থাপত্যের ছায়ারেখা ভেসে আসবে। সাও পলো দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম বড় শহরের ব্যাপকতা মানুষদের মনকে আহত করবে। এসব বিরাট স্থাপত্যের মধ্যে চললে, কিছু বিরক্তিকর অনুভুতি হয়। কিন্তু দ্বিতীয় প্রদর্শনী কেন্দ্রে প্রবেশ করে স্থাপত্যে বিপুল পরিমাণ বিজ্ঞাপন দেখলে সে বিরক্তির অনুভূতি আরো বাড়বে।
দ্বিতীয় প্রদর্শনী কেন্দ্রের প্রসঙ্গ 'বিজ্ঞাপন ঘর'। সেখানে সত্যিকারভাবে আগের সাও পলো শহরের সড়কের দৃশ্য উঠে এসেছে। সাও পলো প্যাভিলিয়নের কর্মী সিয়াও উ সংবাদদাতাকে বলেন,
"সে সময় সাও পলোর অনেক অধিবাসী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন যে, বিজ্ঞাপন শহরটিকে ঢেকে দিয়েছে। তারা শুধু শহরটিকে পড়তে পারতেন বরং উপলব্ধি করতে পারতেন না। কারণ বিজ্ঞাপনী বোর্ডের সংখ্যা ছিল অত্যন্ত বেশি। কোন কোন অধিবাসী জানালা খুললে শুধু বিজ্ঞাপন দেখতে পেতেন। স্থাপত্যের আগের চেহারা দেখার জন্য আমাদেরকে শুধু বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলতে হয়েছে।"
দৃষ্টি দূষণ ছাড়াও বিজ্ঞাপনগুলো প্রাচীনকালের স্থাপত্যের রক্ষণাবেক্ষণের ওপরও প্রভাব ফেলে। সে প্রদর্শনী অঞ্চলে সড়কের পাশে একটি ভবনের বাইরের মডেল স্থাপিত হয়েছে। এর ওপরে ফাঁক রয়েছে। সিয়াও উ ব্যাখ্যা করেন,
"কোন কোন দর্শক জিজ্ঞাস করবেন যে, কেন এখানে ফাঁক রয়েছে? বিজ্ঞাপনে ঢাকার কারণে অধিবাসীরা স্থাপত্যের ক্ষতি হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখতেন না। যদি বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলা হয় তাহলে তারা বাইরের দেয়ালের ক্ষতির ওপর মনোযোগ দেবেন এবং মেরামত করবেন।"
সাও পলোর অধিবাসীরা প্রত্যেক জায়গার বিজ্ঞাপন বর্জ্যের প্রতি যখন ঘৃণা প্রকাশ করছিল সেই সময় ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারী পৌর সরকার প্রণয়ন করা 'শহরের দূষণমুক্ত আইনের' আওতায় বাইরের সব বড় বড় বিজ্ঞাপনী বোর্ড সরানোর পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানের বিজ্ঞাপনের আকার নির্ধারণ করে দেয়া হয়, যাতে শহরের দৃষ্টি দূষণ রোধ করা যায়। সাও পলো প্যাভিলিয়নের সাধারণ প্রতিনিধি, শহরের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক প্রধান আলফ্রেডো কোটাইট নেটো বলেন,
"পৌর সরকার একটি শক্তিশালী আইন 'শহরের দূষণমুক্ত আইন' প্রণয়ন করেছে। এ আইন লঙ্ঘনকারীকে ব্যক্তি বা বিজ্ঞাপন ব্যবসায়ীদের উচ্চ অর্থদণ্ড দিতে হয়। আইনটি ইতিবাচক ফলাফল এনে দিয়েছে। বিজ্ঞাপনগুলো অবিলম্বে সরিয়ে নেয়ার পর শুধু বিজ্ঞাপনী বোর্ডের কাঠামো পড়ে ছিল। পৌর সরকার বিপুল সংখ্যক লোক লাগিয়ে চূড়ান্তভাবে এসব বিজ্ঞাপনী কাঠামোও সরিয়ে ফেলে। শহরবাসীরা আবিষ্কার করেন যে, তাদের শহরটি অতি সুন্দর এবং আগের চেয়ে অনেক পরিষ্কার।"
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |