|
ভাগ্য ভাল হলে পান্ডা কেন্দ্রে বিভিন্ন পর্যায়ের পান্ডা দেখা যায়। কেন্দ্রের পথনির্দেশক লিউ ইচুন বলেন,
"পান্ডার বাচ্চা হয় সাধারণত জুলাই ও আগস্ট মাসে। জন্ম নেয়ার পর পান্ডা বাচ্চাগুলোকে ডেলিভারি রুমে রাখা হয়। কোন কোন মা পান্ডা বাচ্চা আগলে রাখতে জানে না। আমরা পান্ডা বাচ্চাদের একটি ইনকিউবেটরে রাখি। চার মাস পর পান্ডা বাচ্চারা বাইরে খেলতে পারে। আরো বড় হলে তারা 'কিন্ডারগার্টেনে' খেলতে পারে। পান্ডার বয়স যখন ২ বছর হয় তখন তাদেরকে 'শৈশব পান্ডা ভিলাতে' স্থানান্তর করা হয়, যেখানে তারা তাদের বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে পারে। তারপর আধা-বয়সী পান্ডা ভিলা থেকে প্রান্তসয়স্ক পান্ডা ভিলাতে তাদেরকে স্থানান্তর করা হয়। সে সময় পান্ডা শারীরিকভাবে মিলিত হয় এবং তাদের বংশধর প্রজনন করে।"
একটি বয়স্ক পান্ডার ওজন একশ' কেজি ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু তাদের প্রধান খাবার হচ্ছে সুবিনয় মাও বাঁশ। একক খাদ্য উত্স অতিকায় পান্ডার বেঁচে থাকা কঠিন হওয়ার মূল কারণ। পথনির্দেশক লিউ ইচুনের নির্দেশনায় আমরা পান্ডা রেস্তোঁরায় এসেছি। লিউ ইচুন বলেন,
"আমাদের কেন্দ্র একটি নারী পান্ডার জন্য দিনে ৪০ কেজি এবং পুরুষ পান্ডাদের জন্য ৫০ কেজি টাটকা বাঁশ প্রস্তুত করে । অবশ্যই শুধু বাঁশই তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। অন্য কিছু পুষ্টিকর জিনিসের সঙ্গে যেমন অপ্রধান খাদ্যশস্য উও উও থৌ অর্থাত্ ভুট্টা ও সয়াবীনের সঙ্গে কিছু কণামাত্রিক উপাদান, ভিটামিন যোগ করা হয় খাবার। বয়স্ক পান্ডা দিনে ৩ থেকে ৫টি এরকম খুব ছোট উও উও থৌ খেলে তার ৯০ শতাংশ পুষ্টি বজায় থাকে।
ভালো খাবার ছাড়াও কেন্দ্রে অতিকায় পান্ডার জীবন যাত্রার মানও খুব ভালো। নিজেদের বসবাস করার একক কক্ষ ছাড়া ক্রিয়াকলাপ কক্ষ ও ভিলা কক্ষও আছে তাদের জন্য। লিউ ইচুন ব্যাখ্যা করেন, অতিকায় পান্ডারা আগে উচ্চ সমুদ্রতল অঞ্চলে ছিল। তারা উচ্চ ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া পছন্দ করে, গরম পছন্দ করে না। তাদের জন্য আরামদায়ক জীবনযাপনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রত্যেক পান্ডা কক্ষে বিশেষ করে তাপানুকুল যন্ত্র বসানো হয়।
গবেষণা তত্ত্ব অনুযায়ী, যখন কোন জাতের বন্য প্রাণীর সংখ্যা ১ হাজারের চেয়ে কমে যায় তখন অচেনা জায়গায় তাদেরকে সংরক্ষণ করতে হয়। ছেংতু অতিকায় পান্ডা প্রজনন গবেষণা কেন্দ্রটি এরকম দায়িত্ব পালন করে। পথনির্দেশক লিউ ইচুন ব্যাখ্যা করেন, স্থায়ী প্রজনন সংরক্ষণের লক্ষ্য হলো, চূড়ান্তভাবে অতিকায় পান্ডাকে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। তিনি বলেন,
"এ প্রজাতির আয়ু বাড়ানোর এবং চারণভূমিতে পান্ডা দর্শকদের চাপ প্রশমিত করার জন্য প্রতি বছর আমাদের কেন্দ্র ৬ লাখ পর্যটককে অভ্যর্থনা জানায়। যদি এসব পর্যটক এরকম পান্ডাকে দেখার সুযোগ না পেতেন, তাহলে তারা সম্ভবত চারণভূমিতে গিয়ে পান্ডা দেখার চেষ্টা করতেন। ফলে চারণভূমিতে দর্শকদের চাপ বাড়তো এবং বন্য প্রাণী দ্রুত নিশ্চিহ্ন হতো। আমাদের কেন্দ্রের একটি একশ' বছরের পরিকল্পনা আছে। এই একশ' বছরে কিছু সংখ্যক পান্ডা প্রজনন করিয়ে দেয়ার পর এবং তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রকৃতিতে মুক্ত করে দেবো আমরা। কারণ চূড়ান্তভাবে তারা প্রকৃতির।"
এ প্রাচীন ও বিরল প্রজাতির পান্ডার প্রাণশক্তি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করা পান্ডা কেন্দ্রের সব কর্মীর স্বপ্ন। যখন অতিকায় বন্য পান্ডা খুব কম দেখা যায় এমন সময়ে ছেংতু পান্ডা প্রজনন গবেষণা কেন্দ্রে বেড়ানো এবং খুব কাছ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের একটি ভাল বাছাই। পেশাদার কর্মীদের চেষ্টায় 'জীবিন্ত জীবাশ্ম' হিসেবে অতিকায় পান্ডা প্রজাতি তার আগেকার দিগন্ত পুনরায় শুরু করতে পারবে বলে প্রত্যাশা করি।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |