![]( /mmsource/images/2010/01/14/dfdaf8eaa3ff4ed48961bc4eb7c2f362.JPG)
সদর দফতরের অভ্যন্তরে ঘরগুলোকে সংযুক্ত করা সরু রাস্তা
যাই হোক, আমরা চারজন গেটে দায়িত্ব পালনরত কর্মকর্তাকে আমাদের কাছে থাকা টিকিটগুলো দিলে টিকিটের একটি অংশ ছিড়ে রেখে বাকিটা ফিরিয়ে দিলেন, যে গুলো পরে আবার লাগবে । সাত সকালের এই ভীড়ের মাঝে আমরাও ঢুকে গেলাম এক সময়কার স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহাসিক ঘাটিতে । ঢুকেই আমরা বিশ্ময়ের সংগে চোখ তুলে তাকালাম চারদিকে আর শিহরণের আবেগে আপ্লুত হলাম । পাহাড়ের ভেতর উঁচু নিচু সমতল ভূমিতে সবুজ গাছ আর লতায় পাতায় ছাওয়া ছোট ছোট বেশ কয়েকটি একতলা ভবন । প্রতিটি বাড়িই দেয়াল দিয়ে ঘেরা । আবার প্রতিটি বাড়িকে ঘীরে রয়েছে পাথর দিয়ে তৈরি পরিচ্ছন্ন সরু রাস্তা । কৌশলগত দিক থেকে এ সব বাড়িগুলো এমনভাবে নির্মান করা হয়েছে যে, প্রতিটি বাড়ীর সদর দরজা থাকলেও পেছনে বা যে কোন একপাশে থাকা দরজা দিয়ে সহজেই বেড়িয়ে যাওয়া যায় । অর্থাত্ প্রয়োজনে প্রতিটি বাড়ির সংগে খুব দ্রুত যোগাযোগ করা যায় । এ ছাড়াও পাহাড়ের উল্টো দিকে থাকা বাড়ীগুলোর সংগে যোগাযোগ রক্ষার জন্য রয়েছে পাহাড়ের ভেতর দিয়ে সংকীর্ণ সুরঙ্গ পথ । যা কি না খুব কাছে না গেলে দূর থেকে দেখে বোঝা যাবে না । কারন, পাহাড়ের লতায় পাতায় তা ঢেকে থাকে । প্রতিটি বাড়ির ভেতর রয়েছে থাকার জন্য একটি কক্ষ এবং ক্ষণিকের বিশ্রাম ও দাপ্তরিক কাজ সম্পাদনের জন্য একটি কক্ষ । খুব অবাক হতে হয় যে সব নেতারা থেকেছেন তারা সবাইতো কম্যুনিস্ট পার্টির উচ্চ পদস্হ নেতা ছিলেন । যারা পুরো স্বধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন । শোবার কক্ষে তাদের বিছানা বলতে মেঝে থেকে নির্দিস্ট উচ্চতায় মাটি দিয়ে তৈরি বিছানা । যার উপরে রয়েছে কাঠের আচ্ছাদন ও প্রয়োজনীয় লেপ, তোষক ও বালিস । পাশের খুব ছোট কক্ষে রয়েছে চেয়ার, টেবিল ও পদস্হ নেতাদের জন্য একটি পুরোনো সোফা । প্রতিটি ঘরেই রয়েছে সবুজ চা খাওয়ার কেটলির সাথে মগ বা চায়ের কাপ । এ সব কক্ষে এখন ঝুলানো রয়েছে নেতাদের ছবি, কারো কারো ছবিতে স্ত্রীও রয়েছেন । এখানে রয়েছে চীনের প্রথম বার্তা সংস্হা শিন হুয়ার দপ্তর । শিন হুয়া বার্তা সংস্হা প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় জাপ বিরোধী সময়কালে ১৯৩১ সালে । তখন এর নাম ছিল 'রেড চায়না নিউজ এজেন্সী' । ১৯৩৭ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্তমান নাম – অর্থাত 'শিন হুয়া নিউজ এজেন্সী'। ১৯৪৪ সালে শিন হুয়া বার্তা সংস্হাটি বিদেশের জন্য তার প্রথম ইংরেজী সম্প্রচার শুরু করে । এ সংস্হার প্রথম বৈদেশিক দপ্তর চালু হয় ১৯৪৭ সালে লন্ডনে । সেই যে তার যাত্রা শুরু আর এখন তার রয়েছে সারা পৃথিবীতে অসংখ্য শাখা । খুব ছোট আকারের দু'টি কক্ষেই যুদ্ধকালিন সময় ছিল তার দপ্তর । সাজ সরন্জামের আধিক্য তেমন একটা ছিল না । যা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না । দেখতে দেখতে ভাবছিলাম মাও সে তুং এর কথা । কেমন করে তিনি এ ধরনের একটি ছোট্ট ঘরে দিন কাটিয়েছেন তার সারা জীবনের সংগী অসংখ্য বই পত্র নিয়ে । আমরা শিন হুয়া থেকে বেড়িয়ে পড়লাম মাও সে তুং এর বাসস্হানের উদ্দেশ্যে । (চলবে) – আ বা ম. ছালাউদ্দিন
1 2