![]( /mmsource/images/2010/01/14/449894f4463a493b8d3b25ee54070918.JPG)
শি বাই পুও'র সদর দফতরের অভ্যন্তরে যাতাকল যা দিয়ে শস্য গুড়ো করা হতো
কম্যুনিস্ট পার্টির এ সদর দপ্তরটি অগণিত উঁচু নিচু পাহাড় যার সবটাই গ্রীষ্মকালে ঘন বনে ছাওয়া থাকে । শীতকালে থাকে উদোম শরীরের মত লাল মাটি ও জলাধার বেষ্টিত । আমরা যতই কুয়াশা ঘেরা শীতের সকালে এগুতে থাকি ততই হাসের পালকের মোটা জ্যাকেট, তার নিচে সার্ট ও সোয়েটারসহ উলের হাত মোজা ও মাথায় উলের টুপি থাকা সত্বেও উত্তেজনায় ঘর্মাক্ত শিহরণ অনুভব করতে থাকি । দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে যাই দেয়াল ঘেরা সদর দপ্তরের মূল গেটে । এখানে একটি কথা না বললেই নয় যে, চীনে যেখানেই যা কিছু পরিদর্শনে গেছি সব খানেই দেখেছি রয়েছে টিকিটের ব্যবস্হা । কোথাও এমনি এমনি দেখার সুযোগ বলতে গেলে নাই । এখানেও রয়েছে সেই টিকিটের ব্যবস্হা । তবে তা বিনামূল্যে । এটি একটি নিয়ম, এটি একটি চলমান পদ্ধতি । আরো বলতে গেলে এটি একটি শৃঙ্খলা । যা একটি জাতিকে নীতি ও শৃঙ্খলা মেনে চলার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠার শক্তি যোগায় । এ কথা বলতে গিয়ে আজ আমার মনে পড়ছে আমার দেশের কথা, আর আমার সাবেক কর্মস্হল শিল্পকলা একাডেমীর কথা । আমার দেশে লোকজন পয়সা দিয়ে দূরে থাক, বিনা পয়সায়ই ইতিহাস ঐতিহ্য দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করে না । এমনকি আশে পাশের গ্রামটিও সাধারণত একবার ঘুরে দেখে না; সপরিবারে না হোক একাও ! এ ধরণের ঐতিহ্য তেমন একটা গড়ে ওঠে নি । সত্যি, বিদেশ বিভুইয়ে এসে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিজ দেশ সম্পর্কে অভাবিত উত্সাহ দেখে ভাবতেই নিজের কাছে কেমন যেন লজ্জা বোধ মনে হচ্ছে । আমার মনে পড়ছে তখন শিল্পকলা একাডেমীর চারুকলা বিভাগের পরিচালক ছিলেন দেশের খ্যাতিমান প্রবীণ ও বিশিষ্ট চারুশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর । একজন সত্যিকারের শিল্পী হওয়া সত্বেও চারু শিল্পের উন্নয়নে সুষ্ঠুভাবে প্রশাসনিক কাজ করেছেন তা বলা এখানে সমীচিন । সে সময় আমি ছিলাম জনসংযোগ শাখার প্রধান । তখন তার সংগে আমার আনেক বিষয়েই আলাপ আলোচনা হতো । একাডেমীতে যে চারুকলা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়ে থাকে তাকে আরো বেশি মূল্যায়ন ও জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষে অনেক ভেবে চিন্তে দর্শকদের জন্য মাত্র এক টাকার টিকেট সিস্টেম চালু করা হয়েছিল । সাড়াও ভালো ছিল । কিন্তু, তত্কালিন দু'একজন কর্মকর্তার অপরিপক্ক আচরণের জন্য সে ব্যবস্হা বাতিল করতে হয়েছিল বাধ্য হয়েই । পরবর্তীকালে দেখা গেছে টিকিট দিয়ে যে পরিমান দর্শক প্রতিদিন প্রদর্শনী দেখেছে, সেখানে বিনা টিকিটে অনেক কম দর্শকের উপস্হিতি ছিল। মূল্যহীন টিকিটের ব্যবস্হা থাকাও যে অনেক ভালো, তা তখন বোঝাতে পারি নি কাউকেই । আমাদের জাতীয় জাদুঘরে প্রতিদিন বহু দর্শক দেখতে আসছে তাদের জন্য যদি এমন টাকা ছাড়া টিকিটের ব্যবস্হা করা হতো তাও সাধারণ জনগণ একটা নিয়ম শৃঙ্খলার আদর্শে অনুপ্রাণিত হতো । ভাবতে ভালো লাগছে যে, আমাদের প্রাণ প্রিয় ভাষা আন্দোলনের মাসে প্রতি বছর বই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে । এখন এ বই মেলায় সবাইকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে মেলায় ঢুকতে হয় । আমি দেখেছি কোন হুড়ো হুড়ো নেই, আগে পিছের ধাক্কা ধাক্কিও নেই । অনেক শৃঙ্খল । আসলে একটি জাতিকে নিজের উপর নির্ভর করে গড়ে তুলতে হলে এমন ধরনের কিছু সাধারণ শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্হা থাকা খুবই প্রয়োজন । যেটা আমি চীনের সর্বত্রই দেখেছি । দেখেছি আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধের উত্সাহ ।
1 2