|
হোসুন ইয়ুননান প্রদেশের পাওশান শহরের থেংছোং জেলায় অবস্থিত। জেলা শঞর থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও মসৃণ রাস্তা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের সবুজ ধান-ক্ষেতে পাড়ি দিয়ে, আঁকাবাঁকা নদী অতিক্রম করে এগিয়ে যাবার সময় পর্বতগাত্রে সারিসারি থাকা বৈশিষ্ট্যময় বসতবাড়ী ক্রমে ক্রমে চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে। এটা হোসুন নগর।
হোসুনে প্রবেশ করলে বাগানের কবিতার মত অনাড়ম্বর প্রাচীন শৈলী ও শান্তিকামী আমেজে মন ভরে উঠবে। প্রাচীন এ নগরে এক ধরনের বৈশিষ্ট্যময় স্থাপত্য রয়েছে। তা হলো কাপড় ধোয়া ছত্বর অর্থাত্ সি ই থিং। সি ই থিং-এর কথা উল্লেখ করলে হোসুন যে ঐতিহ্যপূর্ণ প্রবাসী মহকুমার কথাই বলতে হবে। হোসুন চীনের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত এবং মিয়ানমারের সীমান্ত সংলগ্ন। প্রাচীনকালে হোসুনের অধিবাসীরা দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে অন্য অঞ্চল অথ্যাত ই ফাং বলে মনে করতেন। বয়স্ক পুরুষেরা সাধারণত অন্য অঞ্চলে গিয়ে ব্যবসা করতেন। বাসা ত্যাগকারী পুরুষেরা আত্মীয়স্বজনকে খুব মিস করতেন এবং কাপড় ধোয়া নারীদের একটি বাতাস ও বৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়ার জায়গা দেয়ার জন্য ছিং রাজবংশের সম্রাট কুয়াংস্যু বর্ষ থেকে শুরু করে কালক্রমে কেউ কেউ অর্থবরাদ্দ করে নদীর তীরে এক একটি বিভিন্ন আকারের কাপড় ধোয়া ছত্বর প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন।
সময় বয়ে গেল। ছত্বর নির্মাণকারীদেরও আর নেই। তবু কাপড় ধোয়া ছত্বরে কাপড় ধোয়ার শব্দ আজও অন্তর্হিত হয়নি। বড় শহরের হৈচৈ দূরে রেখে এখানকার অধিবাসীরা সবসময় নিজেদের প্রাকৃতিক ও সরল জীবনযাপনের পদ্ধতি বজায় রাখছেন। নারীরা সবসময় এক সাথে কাপড় ধোয়া ছত্বরে কাপড় পরিষ্কার করেন। স্থানীয় অধিবাসী চাও সিউসিং বলেছেন, যদিও তিনি ওয়াংশিং মেশিন কিনেছেন, তবুও তিনি কাপড় ধোয়া ছত্বরে কাপড় ধূয়ে নিতে পছন্দ করেন। তিনি বলেন,
প্রতিদিন আমি কাপড় ধোয়া ছত্বরে যাই। যেমন আমার বাসার লেপ ও সাবান নিয়ে আমি কাপড় ধোয়া ছত্বরে যাই। আমার বাসায় ওয়াংশিং মেশিন আছে। তবে ওয়াংশিং মেশিন ব্যবহার করতে আমার ভাল লাগে না। বেশী বিদ্যুত ও গুঁড়ো সাবান আপচয় করে। তবে কাপড় ধোয়া ছত্বরে গিয়ে ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে কথাবার্তাও বলা যায়। এটা মানুষের মধ্যে যোগাযোগের একটি ক্লাসরুম।
হোসুনে যদি আপনি একটু হেটে বেড়ান তাহলে সেখানকার দীর্ঘ ইতিহাস এবং গভীর সাংস্কৃতিক আমেজ অনুভব করতে পারবেন। সেখানে চীনের গ্রাম ও জেলার সবচেয়ে আগের ও বৃহত্তম গ্রন্থাগার—হোসুন গ্রন্থাগার রয়েছে। এ গ্রন্থাগারে প্রায় ৮০ হাজার বই রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু চীনের বিরল সংস্করণ বা অদ্বিতীয় কপি। গ্রন্থাগারের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিককে জানিয়েছেন, হোসুনের বর্তমান অধিবাসীর সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। তাদের মধ্যে ৩ হাজারেরও বেশি লোকের গ্রন্থাগারের কার্ড আছে। হোসুন গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সম্পর্কে হোসুন গ্রন্থাগারের সাবেক অধ্যক্ষ ছুন মাওহোং বলেন,
কয়েকশ' বছরের সুদীর্ঘ সময়ে আমাদের পিতৃপুরুষ ক্রমে ক্রমে উপলব্ধি করেছেন যে, জন্মস্থানের পশ্চাত্পদ অবস্থার পরিবর্তন এবং বংশধরদের জীবনযাত্রার উন্নতি ও সমৃদ্ধি বাস্তবায়নের জন্য সংস্কৃতি ও শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়ন করতে হবে। সুতরাং ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হোসুন গ্রন্থাগার এবং ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত ই ছুন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হলো এ ধরনের ভাবাদর্শের ফলাফল।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |