|
স্থাপত্য শিল্পের ইতিহাসে মৌ পরিবারের খামারের ৯টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার আগেই খামারের সকল নীল ইট ও ধূসর টালি গাঁজানো শুঁটি পানীয়ে ডোবানো হয়। ডুবিয়ে রাখার পর পানি ইটের দেয়ালের মধ্য দিয়ে আর আসবে না। পাশাপাশি বাতাস বা বৃষ্টি স্থাপত্যের ক্ষয়ক্ষতিও করতে পারবে না। উঁচু ও ওজনদার ইট-পাথর দেয়ালকে আরো শক্ত করার জন্য দেয়ালে পাথরের পেরেক ঠুকে দেয়া হয়।
মৌ পরিবারের প্রাক্তন আবাসস্থান হুপেই-এ। সুতরাং সামগ্রিক দিক থেকে মৌ পরিবারের খামার উত্তরাঞ্চলের স্থাপত্যের ভাবগম্ভীর ও মহিমাময় সৃজনশীলতা হওয়ার পাশাপাশি খুঁটিনাটি বিষয়ে দক্ষিণাঞ্চলের স্থাপত্যের নিপূণতাও দেখা যায়।
খামারটি নির্মাণ করার সময় পরিদর্শন ও এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য মৌ পরিবার বহু বার কারুশিল্পীদের দক্ষিণাঞ্চলে পাঠিয়েছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের শিল্প-কর্ম মৌ পরিবারের খামারে ভালোভাবে ফুটে উঠেছে।
জানা গেছে, সবচেয়ে সমৃদ্ধ সময়ে মৌ পরিবারের খামারের ১২ হাজার হেকটর ভূমি এবং ৫ হাজার ৫শ'রও বেশি বাড়িঘর ছিল। প্রতি বছর তারা ৩৩ লাখ কেজি খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতেন। ধনী হওয়ার কারণে মৌ পরিবার নিজের খামার নির্মাণ করার সময় আভিজাত্য খুঁজে বের করার পাশাপাশি স্থাপত্যের নিরাপত্তা ও আরামের দিকটির ওপরও গুরুত্ব দিয়েছে। সাধারণত স্থানীয় অধিবাসীরা বাড়িঘরে রান্না করতো। তবে মৌ পরিবার তাদের মত ছিল না। তারা কী করতো? তাহলে আমরা এক সাথে পথপ্রদর্শক সুন চিয়া'র ব্যাখ্যা শুনবো। তিনি বলেন,
এই দিকে আসুন এবং দেখুন, এর নিচে দুটো সমচতুর্ভুজ গুহা রয়েছে। আপনারা জানেন এর ভুমিকা কি? হ্যাঁ, তা খাংটি গরম করার জন্য। এটা খামার স্থাপত্যের একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। তাকে 'খাং গুহা' বলে গণ্য করা হয়। ফলে বাড়িঘরের বাইরে আবহাওয়া উষ্ণ করে দেয়। তা নিরাপদ ও পরিষ্কার।
মৌ পরিবারের খামারের স্থাপত্যের ডিজাইন সুন্দর ও বৈশিষ্ট্যময় হওয়ার কারণে ১৯৮৮ সালে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের অনুমোদনের মধ্য দিয়ে মৌ পরিবারের খামার সারা দেশের বহু সংরক্ষিত খামারগুলোর মধ্যে প্রথম জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ইউনিটে পরিণত হয়েছে। এ বহু বিশেষজ্ঞ মহিমাময় স্থাপত্য ও বৈশিষ্ট্যময় স্থাপত্যকে 'ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের মূল্যাবানমুক্তা' ও 'শতাধিক বছরের খামারের জীবাশ্ম' বলে গণ্য করেন।
কয়েকশ' বছরের ইতিহাসের পর মৌ পরিবারের খামার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থাপত্য শিল্প হিসেবে ভালোভাবেই সংরক্ষিত হয়েছে। আজ তা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের অবকাশ ও ছুটি কাটানোর দর্শনীয় স্থানেও পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় পর্যটন বিভাগ নিয়মিতভাবে এখানে 'চীনা খামার সাংস্কৃতিক উত্সব'-এর আয়োজন করে। উত্সব চলাকালে খামারে বিভিন্ন ধরনের লোক রীতিনীতি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এ সময় এ স্থানটি সরগরম হয়ে উঠে। বিয়ের অনুষ্ঠান ও কাগজ কাটা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন মজার মজার তত্পরতা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের বিমুগ্ধ করে। এখানে আসা প্রতিটি মানুষকেই তারা তৃপ্তি আনন্দ এনে দেন।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |