|
৬শ' বছরেরও বেশি ইতিহাস সমৃদ্ধ শহর হিসেবে উত্তর চীনের থিয়ান চিন শহরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের গভীর স্থানীয় সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে বৈদেশিক বাণিজ্যিক বন্দর হিসেবে উন্মুক্ত হওয়ার কারণে পশ্চিমা-স্টাইলের বিভিন্ন স্থাপত্য বসন্ত বৃষ্টির পর বাঁশ শাখার মতো থিয়ান চিনের উন্নয়ন হয়েছে এবং শহরের বৈশিষ্ট্যময় দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের দুটো প্রতিনিধিস্থানীয় স্থাপত্যে নিয়ে যাবো এবং সেখান থেকে থিয়ানচিনের আধুনিক ইতিহাস এবং স্থানীয় লোক রীতিনীতি অনুভব করবো।
চীনের আধুনিক স্থাপত্যের ইতিহাসে পেইচিংয়ের চতুর্ভুজ বসতবাড়ির মতো থিয়ানচিনের পশ্চিমা-স্টাইলের স্থাপত্যের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী থিয়ানচিন শহরের হোপিং এলাকায় ২৩০টিরও বেশি স্থাপত্য রয়েছে। এতে ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানী ও স্পেনসহ বিভিন্ন দেশের স্থাপত্যের সংমিশ্রন ঘটেছে বলে তা 'বিশ্ব স্থাপত্য মেলা' হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে একটি স্থাপত্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তা হলো ছিং রাজবংশের সর্বশেষ সম্রাট আইসিন জিওরো পু ই'র থিয়ানচিনের বাসস্থান—চিং ইউয়ান অর্থাত শান্তির বাগান।
১৯২১ সালে চিং ইউয়ানের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর আগের নাম ছিল ছিয়ান ইউয়ান। ১৯২৫ সালে পু ই পেইচিং রাজপ্রাসাদ অর্থাত্ বর্তমান নিষিদ্ধ নগরী জাদুঘর ত্যাগ করে থিয়ানচিনে আসেন। ১৯২৭ সালে তিনি সম্রাজ্ঞী ওয়ানরোং এবং উপ-গৌণ পত্নী ওয়েনসিউকে নিয়ে ছিয়ান ইউয়ানে স্থানান্তর করেন এবং 'ছিয়ান ইউয়ান' নামটি 'চিং ইউয়ানে' পরিবর্তন করেন। তিনি আশা করতেন, ছিং রাজবংশ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং তিনি আবারো সম্রাট হিসেবে থাকবেন।
চিং ইউয়ানের আয়তন ৩ হাজারেরও বেশি বর্গমিটার। বাড়ির সামনে ও পিছনে দু'টি উঠান ছাড়া পশ্চিম দিকে আরেকটি উঠান রয়েছে। চিং ইউয়ানের ম্যানেজার লিউ চিং বলেন,
বাইরে থেকে দেখে চিং ইউয়ানের প্রধান স্থাপত্য দেখে মনে হবে মধ্য শতাব্দীর স্প্যানিশ স্টাইলের। ভেতরে প্রবেশ করার পর দেখা যাবে এর অভ্যন্তরীণ কাঠামো সবই কাঠের। কাঠে খোদাই করা রয়েছে মাদুরের ডিজাইন। তা হলো বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে জাপানের জনপ্রিয় সাজসজ্জার পদ্ধতি। এখানকার সাজসজ্জায় গভীর জাপানী স্টাইল বিদ্যমান। প্রথম তলা হচ্ছে খাবার ঘর, মিটিংরুম, বৈঠকখানা ও উপ পত্নী ওয়েনসিউ'র শোবার ঘর। দ্বিতীয় তলা হচ্ছে পু ই'র পূর্ব-পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের ঘর এবং তিনি ও সম্রাজ্ঞী ওয়ানরোং'র পড়ার ও শোবার ঘর।
২০০৫ সালের আগস্ট মাসে থিয়ানচিন পৌর সরকার চিং ইউয়ানকে বিশেষ সংরক্ষণ পর্যায়ের ঐতিহাসিক স্থাপত্য হিসেবে নির্ধারণ করেছে। এর পর দ্বিতীয় বছরে বড় আকারের মেরামত প্রকল্প শুরু হয়। বর্তমানে চিং ইউয়ানের সামনের উঠান একটি ফুল বাগানে পরিণত হয়েছে। বাগানে পপলার গাছ ও প্যাগোডা গাছ ছাড়া আগের পদ্ম পুকুর ও ছোট্ট ছত্বর পুনরায় নির্মাণ করা হয়। বাগানের অলিন্দে নুড়ি দিয়ে বাঁধানো হয়। মেরামতের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকের রান্নাঘর, গ্যারেজ ও টেনিস খেলার স্থান আগের দৃশ্যের মতই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে চিং ইউয়ান পুনরায় উন্মুক্ত হওয়ার পর প্রতি বছর অসংখ্য দেশী-বিদেশী পর্যটক এখানে আসেন। ম্যানেজার লিউ চিং বলেন,
পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ব্রাজিল, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানী ও সুইডেনসহ অনেক দেশের পর্যটক। কিছু দিন আগে চীনে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা বিশেষ করে চিং ইউয়ানে এসে ভোরের শরীরচর্চা ও পরিদর্শন করেন। তারা মনে করেন, চিং ইউয়ানের সংস্কার কাজ অত্যন্ত ভালো। এছাড়া এখানকার স্থাপত্যের বিস্তারিত খুঁটিনাটি খুব মানবিক। এই বিষয়ে জাপানের পর্যটকদের অনুভুতি আরো গভীর। কারণ এর অভ্যন্তরীণ কাঠামো জাপান স্টাইলের। যা তাদের জন্য বিশেষ আগ্রহের।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |