|
পেইচিং-এর হু থোং সংস্কৃতির সুদীর্ঘ ইতিহাস এবং বৈশিষ্ট্যময় আকর্ষণশক্তি রয়েছ। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে পেইচিংয়ের ঐতিহাসিক হু থোং-এ একটি বৈশিষ্ট্যময় রেস্তরাঁ রাজকীয় বিং চিয়াও-এ নিয়ে যাবো। সেখানে আপনারা বরফ-সংরক্ষণ কক্ষটি দেখে সত্যিই মুগ্ধ হবেন।
বন্ধুরা, যদি আপনারা পেইচিং-এর হৌ হাই এলাকায় ঐতিহ্যবাহী রঙিন রিকশা নিয়ে হু থোং ভ্রমণের সুযোগ পান, তাহলে রিকশাওয়ালা অবশ্যই আপনাকে পুরনো রাজপ্রাসাদের উত্তর দিকে, হৌহাই এলাকার কোং চিয়ান হু থোং-এ নিয়ে একটি বড় লাল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরের রাজকীয় বরফ সংরক্ষণ কক্ষের অতীত ইতিহাসের গল্প বলবেন।
আসলে এটা হচ্ছে একটি পুরোপুরিভাবে রুদ্ধদ্বার ও ব্যক্তিগত শান্তিপ্রিয় ছোট চত্বর। দরজার সামনে লাল লণ্ঠনে 'হুয়াং চিয়া বিং চিয়াও' চারটি অক্ষর আছে। পর্যটকদেরকে এ অক্ষর আকৃষ্ট করে এই ছোট্ট আংগিনা ৪৫০ বর্গমিটারের একটি ভূ-গর্ভস্থ বরফ সংরক্ষণ কক্ষ রয়েছে। কক্ষটি দক্ষিণ ও উত্তরাংশ বিভক্ত। বরফ-সংরক্ষণ কক্ষ ছিং রাজবংশের শেষ দিকে নির্মাণ করা হয়। এটা ছিল একটি রাজকীয় বরফ-সংরক্ষণ কক্ষ। শীতকালে এখানে বরফ সংরক্ষণ করা যায় এবং শরতকালে নানা ধরনের ফল রাখা যায়। এ কক্ষের প্রায় শতাধিক বছরের ইতিহাস রয়েছে।
বর্তমানে এই জায়গাটি বরফ-সংরক্ষণ কক্ষ সংস্কৃতি হিসেবে একটি বৈশিষ্ট্যময় রেস্তরাঁয় পরিণত হয়েছে। চীনের ঐতিহ্যবাহী নীল ক্যালিকো কাপড় পড়া রেস্তরাঁর মালিক ওয়াং লি হুই সব সময় অতিথিবত্সলতায় পর্যটকদেরকে রাজকীয় বরফ-সংরক্ষণ কক্ষের ইতিহাস বলেন। তিনি বলেন,
বরফ-সংরক্ষণ কক্ষের নাম 'সুন তে'। এখানে দীর্ঘ সময় বরফ-সংরক্ষণ করা যায়। শীতকালের সবচেয়ে ঠাণ্ডা সময় যখন বাইরের তাপমাত্রা শূন্যের নিচে দশ-বারো ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, তখন এর ভেতরের তাপমাত্রা প্রায় ৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। গ্রীষ্মকালে বাইরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যখন ৩৭ বা ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, তখন এর ভেতরের তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। কক্ষের দেয়ালের স্হূলতা ১.৪ মিটার এবং তাপমাত্রা বজায় রাখার গুণ খুব ভালো।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিহীন প্রাচীনকালে চীনের রাজকীয় পরিবার ও অভিজাত মানুষেরা এই ধরনের কক্ষ ব্যবহার করে বরফ সংরক্ষণ করতেন। বিশেষ কাঠামো এবং যথাযথভাবে সংরক্ষণের কারণে এখানকার বরফ শীতকাল থেকে শুরু করে পরের বছরের গ্রীষ্মকালের প্রথম দিক পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। সুতরাং গ্রীষ্মকালে রাজকীয় যজ্ঞ অনুষ্ঠান বা দৈনন্দিন তাপমাত্রার পরিমান বাড়ানো বা কমানো যায়।
জানা গেছে, সে সময় কালের চীনের রাজপ্রাসাদের বরফ তৈরী ও সংরক্ষণ প্রযুক্তি বিশ্বে প্রথম শ্রেণীর ছিল এবং এই চীনের রাজপ্রাসাদই আইসক্রীম তৈরীর উত্পত্তিস্থান। মিস্টার ওয়াং একটি গল্প বলেছেন। তিনি বলেন,
মার্কো পোলো পেইচিং শহরে ইউয়ান রাজবংশের সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাত করার সময় গ্রীষ্মকাল ছিল। তবে শিষ্টাচার রক্ষার জন্য তাকে রাজপ্রাসাদের কাপড় পড়তে হহো। সুতরাং সাক্ষাতের সময় তিনি অনেক ঘেমেছেন। জানা গেছে, এর পর তাকে এক ধরনের বিশেষ পানীয়ঃ অর্থাত্ ঘোড়ার দুধ আর বরফ দেয়া হয়েছে। খাওয়ার পর তার খুব ভালো লেগেছে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এটা কী জিনিস? পরে তিনি পানীয় দ্রব্যটির বিষয়ে লিপিবদ্ধ করে নেন।
ঘোড়ার দুধ আর বরফে তৈরী আইসক্রীমের পিতৃপুরুষ বলা যায় এ রাজবংশকেই। সে বছর এতো সুস্বাদু খাবার মজুদ ছিল, তা বরফ সংরক্ষণ কক্ষেরই অবদান। বর্তমানে ওয়াং পরিবারের স্বামী স্ত্রী পরিত্যক্ত বরফ-সংরক্ষণ কক্ষটি আবার মেরামতের মধ্য দিয়ে বর্তমান এই বৈশিষ্ট্যময় রেস্তোরাঁ তৈরি করেন। তারা আশা করেন, আরো বেশী মানুষ চীনের রাজকীয় বরফ-সংরক্ষণ কক্ষ সংস্কৃতি এবং পুরোনো পেইচিং-এর খাবার সংস্কৃতি উপলব্ধি করবে। ওয়াং বলেন,
বর্তমানে পেইচিং শহরে শুধু এখানেই সত্যিকারের বরফ-সংরক্ষণ কক্ষ দেখা যায়। এখানে আপনি বরফ সংস্কৃতির এবং আগের গৌরবময় দিনগুলোকে অনুভব করবেন। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি অনেক গল্প, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের পটভূমিও উপলব্ধি করবেন। আমার মনে হয়, খাওয়ার চেয়ে এই সব অনুভূতি আসলে এক ধরনের মানসিক বিনোদন।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |