আকানশার মতো অনেক ভারতীয় তরুণ-তরুণী চীন দেশের ওপর তাদের জ্ঞান শুধু বই পর্যায়ে । এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে দু'দেশের বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তা জোরদার করার বিষয়টি উপলদ্ধি করেছে চীনা তরুণ-তরুণী প্রতিনিধিরা । এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, প্রতিবছর চীন ও ভারতের মধ্যে ৫ লাখ লোকের বিনিময় হয়। এ পরিসংখ্যান লোকসংখ্যা বেশি থাকা দু'টি বৃহত্‌ উন্নয়নশীল দেশের জন্য নিশ্চয় যথেষ্ট নয় বলে মনে করা হয়। এ প্রতিনিধি দলের সদস্য এবং চীনের তরুণ-তরুণীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মী সমিতির পরিষদ পরিচালক ফেং লি হুয়া বলেন, চীন ও ভারতের তরুণ-তরুণীদের উচিত আরও গভীর পর্যায়ের বিনিময় করা। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:

"ভারতীয় তরুণ-তরুণীদের সাথে বিনিময় করলে তাদের বাস্তব অবস্থা, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন, তাদের চিন্তাধারা এবং চীনের ওপর তাদের জ্ঞান সম্পর্কে সব জানতে সক্ষম হবো। এর মধ্য দিয়ে আমাদের অনুভুতি হয়েছে যে, চীন ও ভারতের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আরও গভীর বিনিময় করা উচিত। এ ব্যাপারে আরও অনেক প্রচেষ্টা চালানো দরকার"।

আসলে ভারতীয় তরুণ-তরুণীরা চীন দেশকে খুবই জানতে চান। তারাও চীনা বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করতে আগ্রহী। ২০০৬ সালে চীনে আসা প্রথম দফার এক শ' ভারতীয় তরুণ-তরুণী প্রতিনিধি দলের সদস্য মরিনাল পাথাক চীন সফর করেছেন। তিনি বলেন, চার বছর পার হয়ে গেল, তবে চার বছরের সব কিছুই আমার মনে গভীর ছাপ হয়ে জেগে আছে এবং চিরদিন অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, আগে চীন দেশ সম্পর্কে জানতে শুধু পশ্চিমা দেশগুলোর সংবাদমাধ্যমের ওপর নির্ভর করতে হতো। তবে চীন গেলে সেখানকার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ অনুভব এবং চীনা জনগণের আতিথেয়তাও উপলদ্ধি করতে পেরেছে। এর কল্যাণে চীনের সঙ্গে নিজের ব্যবধানও কম হয়েছে বলে মনে করি। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:

" চার বছর পার হয়ে গেল। তবে সেবার চীন সফর যেন গতকালের মতো আমার মনে হচ্ছে। আমাদের প্রতিনিধি দলের সদস্যরাও মাঝে মাঝে মিলন মেলার আয়োজন করি। চীন সম্পর্কিত বিষয়টি হচ্ছে আমাদের কাছে চিরদিনের একটি অপরিবর্তিত আলোচ্য বিষয়। অবশ্যই চীনের উন্নয়ন ও পরিবর্তন সম্পর্কে সবাই অনেক যত্নবান। আমরা মনে করি, প্রতিবছর চীন ও ভারত উভয়েরই উচিত এক শ' তরুণ-তরুণীকে নিয়ে গঠিত

প্রতিনিধি দল পারস্পরিকভাবে বিনিময় করা। এর কল্যাণে দু'দেশের জনগণ পারস্পরিকভাবে পরস্পরের সংস্কৃতি সহজেই জানতে ও বুঝতে পারবে।

১০দিনব্যাপী ভারত সফর চীনা প্রতিনিধি দলের তরুণ-তরুণীদের মনে সুন্দর ছাপ ফেলেছে। এ প্রতিনিধি দলের সদস্য এবং চীনের কুয়াং সি জুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রতিনিধি থাং পো বলেন:

"১০দিনব্যাপী ভারত সফরের মাধ্যমে একটি খুবই সুন্দর ভারতকে নিজের চোখে দেখেছি। ভারতের তরুণ-তরুণীদের বিনিময়ের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে অনেক আধুনিক চিন্তাধারা শিখেছি এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের তরুণ-তরুণীর সংস্কৃতি থেকেও আহরণ করেছি অনেক কিছু। চীন ও ভারতের উচিত আরও বেশি বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিনিময় জোরদার করা। আশা করি, ভারতীয় তরুণ-তরুণীরা ভবিষ্যতে চীনে আসতে পারবেন।

**২০০৬ সালের নভেম্বরে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ভারত সফরকালে চীন ও ভারতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নেন যে, পাঁচ বছরের মধ্যে দু'পক্ষ উভয় দেশের ৫ শ' করে তরুণ-তরুণীর সফর বিনিময় কর্মসূচির আয়োজন করবে, যাতে পরস্পরের মধ্যে সমঝোতা ও মৈত্রীর বন্ধন দৃঢ় করা যায়। পাঁচ বছরের মধ্যে পারস্পরিক ফলপ্রসূ সফরের মাধ্যমে দু'দেশের এ তরুণ-তরুণীদের মধ্যে পরস্পরের সমঝোতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন ও ভারত সরকার। ফলে আরও বেশি চীন ও ভারতীয় তরুণ-তরুণী পারস্পরিকভাবে সমঝোতা ও মৈত্রীর বন্ধনে গভীরভাবে আবদ্ধ হবে।

ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূত চাং ইয়ান বলেন, তরুণ-তরুণীরা হচ্ছে চীন ও ভারতের মৈত্রীর ভবিষ্যত্। পারস্পরিক সফরের মাধ্যমে দু'দেশের তরুণ-তরুণীর বিনিময়, পরস্পরকে জানা, মৈত্রী ত্বরান্বিত এবং সহযোগিতা জোরদার করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম তৈরী করবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:

"সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও ভারতের তরুণ-তরুণীরা সফর বিনিময় করেছেন। এ সব সফর ইতিবাচক ফলাফল অর্জন করেছে এবং পারস্পরিক সমঝোতা ও মৈত্রীও ত্বরান্বিত করেছে। এটিও দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তরুণ-তরুণী পর্যায়ের বিনিময় দু'দেশের সম্পর্কের সুদীর্ঘকালীন উন্নয়নের এক উপযুক্ত ভিত্তি তৈরী করার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী"।