|
সম্রাট তাওকুয়াং সিহাসনে আরোহনের পুর্বে ছিং রাজত্বকালের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য অর্জিত হয় । ওয়াংফুচি 、হুয়াংজংই、 গুইয়ানউ ও ডাই জেনের মত অনেক চিন্তাবিদ এবং ছাও সিয়ে জিন、 উজিংচি 、খংসাংরেন ও সি তাও প্রমুখ বিখ্যাত সাহিত্যিক আর শিল্পীর জন্ম হয় সেই সময়পর্বে । ইতিহাসের গবেষনায় লক্ষনীয় অগ্রগিত সাধিত হয় ।প্রাচীন মুল গ্রন্থের গবেষনার ক্ষেত্রেও একের পর এক খ্যাতনামা পন্ডিত আবির্ভুত হন । সরকারের আর্থিক সাহায্যে "সিখুছুয়ান শু " , "ঐতিহাসিক গ্রন্থ সমগ্র" প্রভৃতি ধারাবাহিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয় । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও প্রচুর সাফল্য অর্জিত হয় । স্থাপত্য শিল্পের কীর্তি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
ছিং রাজবংশীয় আমলে চীন একটি কৃষি প্রধান দেশ ; সাংস্কৃতিক আর ভাবাদর্শের ক্ষেত্রে সামন্ততান্ত্রিক রীতিনীতি ও আচার ব্যবহার মেনে চলতে উত্সাহ দেয়া হয়।কেউ প্রবন্ধ লিখে ভিন্ন মত প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। বহির্বিশ্বের দিকে চীনের দ্বার বন্ধ ছিল , রাজদরবার ছিল আত্ম অহংকারে নিমগ্ন।
ছিং রাজত্বকালের মধ্যভাগের পর সমাজের নানা রকমের দ্বন্দ্ব ক্রমশই আত্ম প্রকাশ করে । ছিং রাজপরিবার বিরোধী সংগ্রাম প্রায় সংঘটিত হয় । "শ্বেত কমলা বিদ্রোহের আঘাতে ছিং রাজত্বকালের ঐশ্বর্যময় যুগের অবসান ঘটে ।
১৮৪০ সালে আফিম যুদ্ধ বাঁধে , পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চীনে অনুপ্রবেশ করে ।ছিং রাজদরবার ও বিদেশী হানাদারদের মধ্যে একটির পর একটি অসম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । তথাকথিত যুদ্ধের ক্ষতিপুরণ করতে ছিং রাজকীয় সরকারকে মোটা অংকের অর্থ দিতে হয়েছে এবং কোনো কোনো স্থানের কর্তৃত্ব ছেড়ে দিতে হয়েছে ।ছিং রাজকীয় সরকার অনেক বন্দর উন্মুক্ত করতেও বাধ্য হয় । চীন ধাপে ধাপে আধা সামন্ততান্ত্রিক আধা ঔপনিবেশিক দেশে পরিণত হয় । ছিং রাজত্বকালের শেষভাগে রাজনৈতিক ব্যবস্থা কলুষিত হয়ে উঠে । রাজপরিবারের চিন্তাভাবনা জড়তাক্লিষ্ট, আত্মমর্যাদাবোধহীন দুর্বল ছিং রাজবংশ হাঁপাতে হাঁপাতে পতনোন্মুখ হতে থাকে ।জনসাধারন দুর্বিসহ দুংদুর্দশায় অতিষ্ঠ হয়ে একটির পর একটি সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ বিরোধী আন্দোলন চালান ,যেমন থাইপিংথিয়ানগুও আন্দোলন ও নিয়ান বাহিনীর বিদ্রোহ । সর্বনাশের হাত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য শাসক শ্রেণীর ভেতরে কতকগুলো সংস্কারও সাধিত হয় ,যেমন ,বিদেশের আধুনিক অস্ত্র কেনার পদক্ষেপ নেয়া হয় এবং চান্দ্রিক উসি বত্সরে আইন সংস্কারের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় ।রাজদরবার থেকে সমাজের নীচু স্তর পর্যন্ত সংস্কার চালানোর উদ্দেশ্য ছিল চীনকে সমৃদ্ধি ও স্বাধীনতার পথে নিয়ে যাওয়া । কিন্ত সংস্কার সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।অসংখ্যদেশপ্রেমিক দুর্যোগের কবল থেকে চীনা জাতিকে রক্ষা করার জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন । চীনের আধুনিক ইতিহাসে দেমপ্রেমের অভুতপুর্ব উত্তাল জোয়ার প্রবাহিত হতে থাকে ।১৯১১সালে সিন আই বিপ্লব ঘটে ,ছিং রাজবংশকে উচ্ছেদ করা হয় , দু সহস্রাধিকবত্সর স্থায়ী সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসান ঘটায় চীনের ইতিহাস একটি নতুন যুগে প্রবেশ করে ।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |