|
যদি আপনি জিজ্ঞেস করেন, বিশ্বমেলা বাগানে কে দর্শকদের সবচেয়ে বেশি প্রশংসা পেয়েছে? এর উত্তর নিশ্চয় হবে বিশ্বমেলার স্বেচ্ছাসেবকরা। এখন শাংহাইয়ের আবহাওয়া দিন দিন উষ্ণ হচ্ছে। তারা দিনের সুর্যের আলোয় কয়েক ঘন্টা ধরে কাজ করে থাকে। প্রতিদিন হাজার হাজারটি দর্শক হয়তো তাদের একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, তারাও খুব ভালোভাবে হাজার হাজারবার এসব প্রশ্নের উত্তর দেন এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেন। এ সম্পর্কে দর্শকরা আন্তরিকভাবে প্রসংশা করে বলেন:
স্বেচ্ছাসেবকরা অনেক উষ্ণহৃদয় সম্পন্ন। আমরা তাদের সেবায় অনেক সন্তুষ্ট। যদি আমি সঠিক পথ না জানি, তারা তাড়াতাড়ি আমাকে সাহায্য করেন। যে কোনো প্রশ্নের উত্তর তারা দিতে পারেন। তারা আমাদের সুবিধার জন্য সবচেয়ে সহজ এবং তাড়াতাড়ি পৌঁছার পথ বলে দেন। সত্যি, অনেক ভালো।
বিশ্বমেলা বাগানে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকরা বেশির ভাগই শাংহাইয়ের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। তারা দিনের অর্ধেক লেখাপড়া করেন আর বাকী অর্ধেক দিন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন। ১৮৪ দিনের বিশ্বমেলায় অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবকদের সেবাদানের সময় হল দু'সপ্তাহ। বিশ্বমেলা বাগানের ইউরোপ এলাকার বাস স্টেশনের কাছে বিদেশী ভবন অনেক বেশি। তাই দর্শকদের সংখ্যাও অনেক বেশি। এখানে স্বেচ্ছাসেবকরা দর্শকদের সেবা দিচ্ছেন আন্তরিকভাবে।
আপনার যে কথা শুনছেন, তা হল একজন স্বেচ্ছাসেবকের দর্শকদের সাহায্য করার কথা। এ মেয়েটি হল শাংহাইয়ের থুং চি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী চি লি, তিনি এখন মাস্টাস ডিগ্রী পড়ছেন। তার গলা একটু বসে গেছে। প্রতিদিন কীভাবে চীন ভবনে যাবেনসহ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মত এমন কাজ প্রতি মিনিটেই তাকে করতে হচ্ছে। তবে তিনি ধৈর্য ও উষ্ণতা নিয়ে দেশি বিদেশি দর্শকদের সাহায্য করছেন এবং হাসি মুখে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি বলেন
সম্প্রতি, বিশেষ করে সপ্তাহের ছুটির দিনে দর্শকদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। বাস স্টেশন কাছের সেবাদান কেন্দ্রে শৃংখলা নিশ্চিত করার জন্য অনেক জোরে কথা বলতে হয়, তবে আমি দর্শকদের জন্য আরো ভালো সেবা দেয়ার জন্য চেষ্টা করবো।
চি লি বলেন, স্বেচ্ছাসেবকের সেবার কাজ শুধু মাত্র দশ বারো দিনের। তবে এ দশ বারো দিন নিজের জীবনের জন্য খুব মূল্যবান মানসিক সম্পদ ও সুন্দর স্মৃতি হিসেবে স্মরণ রাখার মত। এখন প্রথম এ কাজে ঢোকার সময়ের কথা স্মরণ করে চি লি বলেন, তখন তারা বিশ্বমেলা বাগান সম্পর্কে পরিচিত ছিলেন না, মাঝে মাঝে দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর তারা দিতে পারতেন না। স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান হিসেবে তিনি সব সহকর্মীদের নিয়ে বারবার ম্যাপ দেখে বাগানের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দেখতেন ঠিক আছে কি না। কেউ কেউ বলেছে, রাতে তাদের স্বপ্নেও বিশ্বমেলা বাগানের ম্যাপ ভেসে আসতো।
বিশ্বমেলা বাগানে আরো অনেকেই অবদান রাখছেন। তারা হলেন বিশ্বমেলা বাগানের বাসের ড্রাইভার। ৫.২৮ বর্গ কিলোমিটারের বিশ্বমেলা বাগানে বাসে যাতায়াত খুবই গুরুত্বপুর্ণ মাধ্যম। প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একটি বাস যাতায়াত করে। যাতে দর্শকরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিভিন্ন ভবনে যেতে পারে। কয়েক দিনের ব্যস্ত কাজে থাকায় তাদের মধ্যে অনেকেরই সুর্যের আলোতে শরীরের চামড়া কিছুটা পুড়ে গেছে। তবে তারা মনে করেন, বিশ্বমেলার জন্য বাস চালানো জীবনে সবচেয়ে সুখের ব্যাপার। বিশ্বমেলার ড্রাইভার হো ছি দিং নিরাপদে এক লাখ কিলোমিটার দৈর্ঘে বাস চালিয়েছেন। তিনি এবারের বিশ্বমেলার জন্য সেবা দানের সুযোগের ওপর অনেক গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন:
যদিও আমাদের কাজ অনেক ক্লান্তিকর। তবে আমরা বিশ্বমেলার জন্য নিজের অবদান রাখতে পারায় নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। কারণ, প্রত্যেকের জন্য এমন একটি মঞ্চে নিজেকে প্রকাশের সুযোগ জীবনে তেমন একটা ঘটা সত্যিই সৌভাগ্যের। তাই এমন সুযোগ পেয়ে আমরা খুব গর্বিত। আমি নিশ্চয়ই ভালোভাবে এ কাজ করবো। আমার বাসা অনেক দূরে। বিশ্বমেলা বাগানে যেতে দুই ঘন্টা লাগে। যদিও কিছুটা সমস্যা আছে, তবে আমি এসব সমস্যা কাটাতে ইচ্ছুক। কারণ আমার মনে হয় তা আমার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ও সুযোগও বটে। আমার সারা জীবনে বিশ্বমেলায় যোগ দেয়ার সুযোগ পাওয়ায় আমি অনেক গর্বিত।
বিশ্বমেলা বাগানের সৌন্দর্যের জন্য অনেকেই অনেক পরিশ্রম করে অবদান রেখেছেন। তারা হলেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কর্মী, নিরাপত্তা রক্ষাকারী, পুলিশ, বাগানের মালী, খাদ্য সেবা কর্মী, মেলার অংশগ্রহণকারী এবং সকল সংগঠক। যখন আমরা সুন্দর সুন্দর ভবনে বিশ্বের সৌন্দর্যের আনন্দ উপভোগ করি, তখনও আমরা তাদের কথা ভুলে যাবো না। কারণ, তারা ঠিক আমাদের কাছেই আছে এবং আমাদের সংগে আনন্দ এবং আরামের সাথে বিশ্বমেলা পরিদর্শনের জন্য নিরলস চেষ্টা চালাচ্ছেন।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |