Web bengali.cri.cn   
প্রাচীন বাংলার চন্দ্রকেতুগড়
  2012-03-30 18:15:11  cri

প্রাচীন বাংলার সভ্যতার পরিচয়বাহী চন্দ্রকেতুগড়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির বীরত্বের ইতিহাস। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলায় চন্দ্রকেতুগড়ের ধ্বংসাবশেষ অবস্থিত। এটি প্রাচীন বাংলার সভ্যতার পরিচয়বাহী অন্যতম প্রত্নতাত্বিক স্থান। কলকাতা থেকে উত্তর পূর্ব দিকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে বারাসাত ও বশিরহাটের মধ্যবর্তী স্থানে বেড়াচাঁপা নামে ছোট একটি শহরে চন্দ্রকেতুগড় অবস্থিত। এখানে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ শতকের প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গেছে। ইতিহাসবিদরা মনে করেন খ্রিস্টপূর্ব ৩শ' শতকে এখানে প্রাচীন বাংলার রাজ্য গঙ্গাহৃদির অন্তর্গত এক দুর্গ শহর চন্দ্রকেতুগড় গড়ে উঠেছিল। এখানে প্রাক মৌর্যযুগ, মৌর্যযুগ, শুঙ্গ যুগ, কুষান যুগ, গুপ্তযুগ, গুপ্ত পরবর্তী পাল, চন্দ্র ও সেন যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে। খ্রিস্টপূর্ব ৪শ থেকে ১শ' শতাব্দীতে তৈরি পালিশ করা কালো মাটির সামগ্রী পাওয়া গেছে এখানে। এখানে প্রাচীন বাংলার কারুশিল্পের পরিচয়বাহী পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটার অপূর্ব কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে। এই টেরাকোটার সঙ্গে অহিচ্ছত্র ও কৌশাম্বি নামে বিখ্যাত প্রাচীন ভারতীয় নগরের টেরাকোটা নকশার মিল আছে। এতে বোঝা যায় এই সব নগরের সঙ্গে চন্দ্রকেতুগড়ের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও সমাজের যোগাযোগ ছিল এবং একই ধরনের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বহণ করছে চন্দ্রকেতুগড়। এখানে মাটি খুঁড়ে বিভিন্ন যুগের স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেছে। একটি স্বর্ণমুদ্রায় চন্দ্রগুপ্ত ও কুমারদেবীর নাম খোদাই করা আছে। এখানে বিভিন্ন যুগের বিপুল পরিমাণ রৌপ্যমুদ্রাও পাওয়া গেছে। বিভিন্ন মূল্যবান পাথরের মালা, হাতিরদাঁত ও হাড়ের তৈরি অলংকার ও গৃহসজ্জার বিভিন্ন সামগ্রীও পাওয়া গেছে। কিছু কিছু কাঠের জিনিসও কালের করাল স্পর্শ এড়িয়ে একালের প্রত্নবিদদের হাতে এসে পৌঁছেছে। গঙ্গাহৃদি রাজ্য ও চন্দ্রকেতুগড় নগরের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় গ্রিক ইতিহাসবিদ টলেমির লেখায়। পরবর্তীতে রোমান ইতিহাসবিদরাও গঙ্গাহৃদি রাজ্যের কথা লিখেছেন। গঙ্গাহৃদির দুধর্ষ হাতি বাহিনী ও যোদ্ধাদের ভয়ে গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের বাহিনী এ অঞ্চল আক্রমণ করতে সাহস পায়নি। প্রাক মৌর্য যুগে গড়ে ওঠা দুর্গ নগরী চন্দ্রকেতুগড়ের চারপাশ ঘিরে ছিল মজবুত প্রাচীর ও পরিখা। এটি ছিল সমৃদ্ধ বন্দর নগরী। এখানকার অধিবাসীরা বিভিন্ন কারুশিল্পের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতো। বিভিন্ন মাটির ফলকে খরোষ্ঠি ও ব্রাহ্মি লিপির নমুনা পাওয়া গেছে। এতে মনে হয় এখানে প্রাক আর্য সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল। চন্দ্রকেতুগড় থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন টেরাকোটা ফলক ও অন্যান্য নিদর্শন চন্দ্রকেতুগড় বেহালা জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। পর্যটকরা কলকাতা থেকে নজরুল ইসলাম সরণী, যশোর রোড ও টাকি রোড ধরে বেড়াচাঁপাতে আসেন। এখানে তারা চন্দ্রকেতুগড়ের প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ দেখতে পান। এর একটু দূরে পৃথিবা রোডে রয়েছে খনা-মিহির স্তূপ নামে পরিচিত একটি প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। খনা ছিলেন প্রাচীন বাংলার এক জন বিদূষী নারী। তাঁর লেখা বচন আজো বাংলার মানুষের মুখে মুখে ফেরে। জনশ্রুতি অনুযায়ী খনা ভবিষ্যতবাণী ও জ্যোতিষচর্চায় তাঁর শ্বশুর বরাহ মিহিরের চেয়েও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।এ কারণে তাঁর জিহ্বা কেটে ফেলা হয় । লোক কাহিনী অনুযায়ী খনা চব্বিশ পরগণার এ অঞ্চলে বাস করতেন। চন্দ্রকেতুগড় নগরে প্রাপ্ত পোড়া মাটির ফলকে মাতৃদেবীর শ্রী মূর্তি ও পঞ্চচূড়া মূর্তি বিখ্যাত। এ থেকে ইতিহাসবিদরা ধারণা করেন যে এ অঞ্চলে মাতৃদেবীর পূজা প্রচলিত ছিল। যদিও গঙ্গাহৃদি সভ্যতার জনসমাজে কি ধরনের ধর্মবিশ্বাস প্রচলিত ছিল তা সঠিক ভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় এ অঞ্চলের সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। তাই স্বাভাবিকভাবেই হয়তো এ অঞ্চলে মাতৃদেবীর পূজা প্রচলিত ছিল। বেড়াচাঁপাতে এখনো মাতৃদেবী বাসন্তীদেবীর পূজা বিখ্যাত। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাসন্তীদেবীর পূজা উপলক্ষ্যে ভক্তদের সমাবেশ হয় বেড়াচাঁপায়। দুর্গা প্রতিমার মতো বাসন্তী প্রতিমারও রয়েছে দশ হাত। গঙ্গা নদীর বদ্বীপে গড়ে ওঠা চন্দ্রকেতুগড়ের ৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে বয়ে চলেছে গঙ্গানদী। আর চন্দ্রকেতু গড়ের খুব কাছ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে বিদ্যাধরী নদী। বাংলাদেশের পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে চন্দ্রকেতু গড়ের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। পর্যটকরা চন্দ্রকেতুগড়ের ধ্বংসাবশেষ দেখে প্রাচীন বাংলার গঙ্গাহৃদি রাজ্যের অস্তিত্ব অনুভব করেন। (শান্তা)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
南亚漫步
v সাবাশ বাংলাদেশ 2012-03-23 16:56:15
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040