Web bengali.cri.cn   
ভালোবাসা হচ্ছে এক বিস্ময়
  2013-03-18 16:09:09  cri

 ফুফুর স্তন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। ডাক্তার বললেন, দ্রুত অপারেশন করলে হয়তো আরও কয়েক বছর বাঁচতে পারে।

ফুফুর জীবনটাকে ভীষণ রকমের অসম্পূর্ণ বলা যায়। জীবনভর তাকে অনেক দুঃখ আর হতাশাকে সঙ্গী করতে হয়েছে। বিবাহিত জীবনে সন্তান না হওয়া ছিল একটি বড় দুঃখ। এই অক্ষমতা তার বৈবাহিক সম্পর্কতেও বেশ সমস্যা তৈরী করে। বলা যায় তাঁর বিবাহিত জীবন মোটেই সুখের ছিল না। শুধু তাই নয় ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে তাঁর স্বামী আকস্মিক ভাবে হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। এই ঘটনা তাঁর দীর্ঘ হতাশা আর কষ্টের জীবনকে আরো দীর্ঘতর করে তোলে।

তবে আশার কথা হচ্ছে ফুফুর স্তন ক্যানসারের অপারেশানটি বেশ সফল হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে প্রথমবার কেমোথেরাপী নেয়ার পর ফুফু আর কোনো কেমো নিতে চায় না। আর এই বিষয়টিতে তিনি এতটাই অনড় যে কেউই কোন ভাবে তাঁকে রাজি করাতে পারছে না। এই অবস্থায় ডাক্তার বলেন, সম্পূর্ণ চিকিত্সা না নিলে ক্যান্সারটি ধীরে ধীরে আবারও বেড়ে যাবে। এ অবস্থায় তিনি হয়তো আর মাত্র দু'বছর বাঁচতে পারেন। যেহেতু তিনি খুব অনঢ়, তাই তিনি যা পড়তে চায় বা খেতে চায় সে সব মজার মজার জিনিষ দিয়ে তাঁকে খুশি রাখতে পারলেও খারাপ হয় না।

কি আর করা, অগত্যা সবাই ডাক্তারের কথায় রাজি হয়ে যায়। এবারে শুরু হলো অন্য যন্ত্রণা। সবাই এক এক করে ফুফুকে জিজ্ঞেস করছে- "আপনি কী খেতে চান? কী পড়তে চান?" চারিদিক থেকে কেবল এই একই প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে থাকল। মাঝে মাঝে মনে হয়, তিনি হয়তো কিছু কথা বলতে চাচ্ছে, কিন্তু কোন কারণে দ্বিধাগ্রস্ত তাই আর কিছু বলছে না। আর এটা দেখে আমাদের প্রশ্ন করা আরো বেড়ে যায়। কিন্তু এবারে তিনি সম্পূর্ণ নিরব হয়ে রইল আর কিছুই বললো না।

কয়েকদিন পর তাঁর একজন পুরোনো বান্ধবী আমার সাথে দেখা করতে আসে। তিনি ফুফুর মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা একটি ইচ্ছার কথা আমাকে জানায়। আর তা হলো তিনি আবার বিয়ে করতে চান এবং যাকে বিয়ে করবেন তিনি তাঁর যৌবনকালের প্রেমিক ছিল, কিন্তু বাবা-মার নিষেধের কারণে তাঁদের বিয়ে হয়নি। কিন্তু এখন তিনি জানতে পেরেছেন যে আর বেশিদিন বাঁচবে না। অন্যদিকে তার পুরনো প্রেমিকের অবস্থাও জেনেছে। এখন তিনি একা, দু'বছর আগে তাঁর স্ত্রীও মারা গেছে।

ফুফুর বান্ধবী আমাকে বলে, "তুমি জানো, তোমার ফুফু কেন কেমো নিতে চায় না? কারণ কেমো নিলে তাঁর চুল সব পড়ে যাবে। তখন সে স্বাভাবিক আর সম্পূর্ণ মানুষ থাকবে না। তাই যাতে কুতসিত্ চেহারা নিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে না হয় তাই আর কেমো নিতে চাচ্ছে না।"

এই রকম একটি অসম্ভব মনোবাসনার কথা শুনে সারা বাড়িতে যেন আগুন লাগার মত কোনো ঘটনা ঘটল। সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, তীব্র ভাষায় তিরস্কার করতে কারো যেনো এতটুকু মুখে বাঁধছে না। তারা কেউই আর আগের মত ফুফুর দিকে তাকাচ্ছে না, দেখাচ্ছে না কোনো সহানুভূতি। কিন্তু পরিবারে যাদের কথা সব সময় গুরুত্ব পেয়ে থাকে সেই ভাই বোনদের অধিকাংশ ফুফুকেই সমর্থন করলো। উল্টো তারা অন্যদেরকে তিরস্কার করে বললো যে "এটাতো একটি পুরনো চিন্তা যে এই বয়সে বিয়ে করা যাবে না। এরকম সামন্ততান্ত্রিক মনসিকতার সাথে একসাথে চলা অসম্ভব"।

অবশেষে পরিবারের সমর্থন পেয়ে দুই বুড়া-বুড়ি দেখা করলো। এসময়ে দু'জনের চোখের পানি যেন আর থামতে চায় না। দু'জন দু'জনের দিকে কেবল তাকিয়েই থাকে, যেন অনন্তকাল, আর দু'জনের চোখের জল গড়িয়ে বয়ে চলে হাজার মাইলদূরের প্রেম-মোহনায়।

সেদিন থেকে বলা যায় আমার ফুফু, সেই মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধা রোগী, আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠলো। তাঁর জীবন স্পষ্টভাবেই আগের চেয়ে অনেক রঙিন হয়ে উঠেছে। তাঁর চুলে কালো কলপ আর স্থায়ী ঢেউ তোলা নক্সা করা হয়েছে। প্রায়ই নতুন আর রঙিন পোশাক পড়ে। মাঝে মাঝে ফুফার সঙ্গে বুড়োদের আসরে নৃত্য করতে যায়। গতবছর তিনি আবাসিক এলাকার বৃদ্ধদের গড়া একটি বাদক দলের সাথেও যুক্ত হয়। শুধু তাই নয় নববর্ষের সান্ধ্য পার্টিতে তারা চমত্কার বাদ্য পরিবেশনও করেছে। কয়েক দিন আগে আমি রাস্তায় ফুফুর ডাক্তারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি ফুফুর বর্তমান অবস্থা শুনে ভীষণ অবাক হয়। তিনি একটি কথা বার বার বলেন যে, এটা সত্যি, সত্যি জীবনের অপার বিস্ময় যা কোনো চিকিত্সা দিয়ে পাওয়া সম্ভব নয়, এটা কেবল ভালোবাসাতেই সম্ভব। (ইয়ু)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক