প্রতিটি ভাষার নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। প্রতিটি ভাষার অস্তিত্ব থাকার মূলে বিশেষ তাত্পর্য আছে। কিন্তু যখন আমি খবরে পড়ি যে, মাত্র দুই বছর আগে তাইওয়ানের সর্বশেষ পাজেহ ভাষী ৯৭ বছর বয়সী আদিবাসী পান চিন ইয়ু মৃত্যুর সাথে সাথে এই জাতিতাত্ত্বিক ভাষাটিও বিলুপ্ত হয়ে যায়। প্রায় একই অবস্থা চীনের কুইচৌ প্রদেশেও আছে। সেখানে শুধুমাত্র ৯০ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধ মুলাও ভাষা বলতে পারেন। যার ফলে এ ভাষাটিও প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
বাংলাদেশের ঢাকায় শহীদ মিনার
সেই জন্য যখন ১৯৫২ সালে বাংলাভাষী বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির অস্তিত্ত্ব আর মর্যাদা রক্ষার জন্য লড়াই করতে হয়েছে, এজন্য আমাদের বীরদের জীবন উত্সর্গও করতে হয়েছে। রক্ত দিয়ে অর্জিত বাংলাভাষা বর্তমানে বিশ্বের ষষ্ঠতম মর্যাদাপূর্ণ ভাষা হিসেবে পৃথিবীতে সম্মান পেয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আজ সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। এ কথা চিন্তা করে আমরা বাংলাভাষী হিসেবে সত্যি গর্ব বোধ করি।
চীন একটি বহু জাতিক ও বহু ভাষার উন্নয়নশীল দেশ। হান জাতি ছাড়া, চীনে আরো ৫৫টি নির্ধারিত সংখ্যালঘু জাতি আছে। তাদের জনসংখ্যা চীনের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৮.৫ শতাংশ। এ সব উপজাতির মধ্যে হুই জাতি ও মান জাতি পুরোপুরি হান ভাষা ব্যবহার করা ছাড়া, বাকি ৫৩টি জাতি সবারই নিজস্ব ভাষা আছে এবং এখনো ব্যবহার হয়। তবে চীনের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া দ্রুততর হওয়ার সাথে সাথে কিছু কিছু সংখ্যালঘু জাতির ভাষাও বিলুপ্তির মুখে রয়েছে। তাই এখন চীনের জ্ঞানী পণ্ডিতারাও সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও ভাষাতত্ত্ব মহলকে ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুর্বল জাতির ভাষা রক্ষা করা এবং বিলুপ্ত হাত থেকে জাতিতাত্ত্বিক ভাষা উদ্ধার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আমরা আশা করছি, বাংলাভাষীসহ বিশ্বের সকল মানুষ নিজের মাতৃভাষাকে ভালোবাসবেন এবং তা স্থায়ীভাবে বেঁচে থাকা ও উন্নয়নের জন্য নিজের অবদান রাখবেন। বাংলা ভাষা চিরজীবী হোক। আমরা বাংলাভাষী বাংলায় কথা বলি, বাংলায় গান গাই, বাংলা ভাষাকে ভালোবাসি।
| ||||