ইউনিট-১ চরিত্র--মা ও ছেলে; স্থান--বাড়ি; সময়--সকাল
মা: বাবা কোথায় যাচ্ছিস এই সাজ সকালে। এ সময়ে একটু মাকে সাহায্য করলে তো পারিস।
ছেলে: মা আমি মাছ ধরতে যাই। মাছ পেলেই ফিরে আসবো আর তোমাকে তখন সাহায্য করবো।
মা: তাড়াতাড়ি ফিরে আছিস।
বর্ণনা:
অভাবে সংসার। মা ও ছেলে দু'জন। কোনমতে কেটে যাচ্ছিল দিন। কিন্তু অন্যদিনের থেকে আজকের দিনটা অন্যরকম। ছেলেটি মাছ ধরতে গেল এবং জালে ধরা পড়লো সোনালী রঙের একটি মাছ। যে মাছ সম্পর্কে এমনো অনেক মানুষ আছে যারা কেবল গল্পই শুনে আসছিল। ছেলেটিতো মাছটি পেয়ে যারপরনাই খুশী মনে মনে ভাবছে মা এ মাছটি দেখে কতই না খুশী হবে। তবে সে মনে মনে একটি অদ্ভুদ সিদ্ধান্ত নিল যে, মাছটি সে দেশের রাজা'কে উপহার দিবে। কেননা উপহার পেয়ে সে নিশ্চই খুশী হবে এবং খুশী হয়ে তাকে অনেক বখশিস দিবে। আর এই বখশিস দিয়ে মাকে ভাল ভাল খাবার কিনে খাওয়াতে পারবে। মাছটি নিয়ে প্রথমে মা'কে দেখালো তারপর সে চলে গেলো রাজার কাছে।
ইউনিট-২ চরিত্র--ছেলে, মন্ত্রী, রাজা; স্থান--রাজপ্রাসাদ; সময়--দুপুর
রাজা: কে তুমি বাছা
ছেলে: আমি জেলের ছেলে। আপনার জন্য একটি সোনালী রঙের মাছ উপহার এনেছি। আপনি উপহারটি গ্রহণ করলে আমি খুব খুশী হবো।
রাজা: বা! বা! বা! খুব সুন্দর মাছ। কোথায় পেলে মাছটি। আমি খুব খুশী হয়েছি তোমার এই উপহার পেয়ে। মন্ত্রী?
মন্ত্রী: আজ্ঞে হুজুর, আদেশ করুন।
রাজা: ছেলেটিকে অনেক বখশিস দাও যাতে তাকে আর কখনো কষ্ট করে মাছ ধরতে না হয়।
মন্ত্রী: জ্বী আচ্ছ। তবে কি হুজুর এই একটি মাত্র মাছ। একা একা মাছটি অল্পদিনেই মরে যাবে। আমি বলি কি, ওকে আরও একটি সোনালী মাছ ধরে আনতে বলুন, যাতে এই মাছটি প্রাণে রক্ষা পায়, তারপর ওকে যত খুশী বখশিস দেওয়া যাবে।
রাজা: হুম! মন্ত্রী তুমি খুব বুদ্ধিমানের মতো কথা বলেছো। ঠিক আছে তাই হবে।
বাছা! তুমি আরও একটি সোনালী মাছ ধরে আনো, যাও।
অনেক বখশিস নিয়ে তবেই বাড়ি যাও।
বর্ণনা:
হায়, হায়! একি হলো! কোথায় ভেবেছিল রাজা খুশী হয়ে বখশিস দিবে তা না সে আরো শর্ত জুরে দিল যে আরো একটি সোনালী মাছ ধরে আনতে হবে। ছেলেটি হতাশায়,রাগে,দুঃখে, প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থায় প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এলো। ছেলেটি ভাবছে সোনালী মাছ পাওয়াতো একরকম ভাগ্যের ব্যাপার। আমারতো একূল ওকূল দু'কূল গেলো। তবে দেখি চেষ্টা করে, যদি আর একটি সোনালী মাছ পাওয়া যায়। এই ভেবে ছেলেটি আবার নদীতে জাল ফেলতে লাগলো। কিন্তু সোনালী মাছের আর দেখা মিলে না। এদিকে বেলা গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা হয় হয় অবস্থা। শরীরেও আর কুলচ্ছে না। শেষবারের মতো আর একবার চেষ্টা করা যেতে পারে যদি পাওয়া যায়তো ভাল না হলে মা'র কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে এই ভেবে আবার জাল ফেললো। এবার সত্যিই একটি সোনালী মাছ উঠলো এবং ছুটতে ছুটতে রাজার প্রাসাদে চলে গেল।
ইউনিট-৩ চরিত্র--ছেলে, মন্ত্রী, রাজা; স্থান--রাজপ্রাসাদ; সময়--দুপুর
ছেলে: রাজা হুজুর, রাজা হুজুর এইযে নিন আমি আপনার জন্যে আরো একটি সোনালী মাছ উপহার এনেছি।
রাজা: বাহ! বাহ! তুমিতো বেশ একটি করিত্কর্মা ছেলে! যেই বলা সেই কাজ বা! বেশ ভাল বেশ ভাল। মন্ত্রী?
মন্ত্রী: আজ্ঞে হুজুর, আদেশ করুন।
রাজা: ছেলেটি তাঁর কথা রেখেছে এবার তুমি ওঁকে যতপার তত বখশিস দিয়ে দাও।
মন্ত্রী: জ্বী আচ্ছা। তবে বলছিলাম কি হুজুর, সোনালী মাছতো লাল ঝরণার পানি ছাড়া বাঁচবে না। তাই হুজুর যদি ওঁকে একটু বলে দিতেন যে, অল্পখানি লাল ঝরণার পানি নিয়ে আসুক, তারপর ওকে যত খুশী তত বখশিস দিয়ে দেয়া যাবে। আর যদি ও সে পানি না আনতে পারে তবে ওর গর্দান কেটে ফেলা হবে।
রাজা: তুমিতো সত্যিই আমার একজন অতি বুদ্ধিমান মন্ত্রী। তুমি ঠিকই বলেছো।
শোনো বাছা! লাল ঝরণার পানি নিয়ে আস, যাও
অনেক বখশিস নিয়ে তবেই বাড়ি যাও।
বর্ণনা:
এবার সত্যিই ছেলেটির চোখগড়িয়ে অঝোর ধারায় কান্না বেরিয়ে এলো। হায় খোদা চেয়েছিলাম একটু স্নেহ আর মমতা কিন্তু বিনীময়ে জুটলো নিদারুন কষ্ট আর যন্ত্রণা। কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটির দু চোখ যেদিকে যায় সেদিকে হাটতে থাকে- যেন দিগ্বভ্রান্ত পথহারা এক শিশু, খুঁজতে থাকে লাল ঝরণার পানি। কিন্তু কোথায় পাবে লাল ঝরণার পানি, সর্বত্রই নীল আর সবুজ পানি। ক্লান্তিতে অবশ হয়ে আসা ছেলেটি আর এক পাও হাটতে পারে না। কিন্তু বাড়িতেও ফিরে যাবে না। কোন মুখে মুখে মার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে? মাতো আগেই নিষেধ করেছিল। বলেছিল রাজাকে উপহার দিয়ে কাজ নেই বড় মানুষের কত খেয়ালী থাকে তার কোনো ইয়াত্তা নেই। তুই বরং বাজারে বিক্রি কর তাতে যে টাকা পাবি তা দিয়ে আমাদের বেশ কিছু দিন খুব ভাল ভাবেই কেটে যাবে। কিন্তু মার কথা শোনেনি সে। এই সকল চিন্তা আর শরীরের ক্লান্তিতে ক্রমেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে, শুয়ে পড়ে এক সু-বিশাল অশ্বথ-বৃক্ষের নীচে। ঘুমিয়ে পড়ে সেখানে। হঠাত্ ঘুমের মধ্যে সে একটি সুন্দর স্বপ্ন দেখতে লাগল।
স্বপ্নে দেখলো এক লম্বা সু-বিশাল দেহের অধিকারী দুধরাঙা চুল আর দাড়িওয়ালা এক বৃদ্ধলোক। দয়ালু আর মমতা ভরা এই বৃদ্ধের শরীর থেকে যেন আলোর ঝিলিক দিচ্ছে। বৃদ্ধ ছেলেটির পাশে এসে দাড়াল তারপর মাথায় আলতো করে হাত রেখে জানতে চাইল তার কি হয়েছে, কেনো সে কাঁদছে। ছেলেটিও কিছু বোঝার আগেই সব বৃত্তান্ত খুলে বলে। সব কিছু শুনে বৃদ্ধ হো হো করে হেসে ওঠে আর লাল ঝরণার পানির সন্ধান বলে দিয়ে আবারো হাসতে হাসতে দূরে মিলিয়ে যায়। আচমকা ছেলেটির ঘুম ভেংগে যায়। ঘুম ভেংগে দেখে কোথাও কেউ নেই। কিন্তু স্বপ্নে দেখা পথ ধরে ছেলেটি হাটতে থাকে আর লাল ঝরণার পানির সন্ধান পেয়ে যায়। ছুটে আসে রাজার কাছে-
ইউনিট-৪ চরিত্র--ছেলে, মন্ত্রী, রাজা; স্থান--রাজপ্রাসাদ; সময়--দুপুর
ছেলে: রাজা হুজুর, রাজা হুজুর লাল ঝরণার পানির সন্ধান পেয়েছি। আপনি আপনার প্রাসাদের দক্ষিণ পাশের পাহাড়ের ঝরণার কাছে চলে আসুন, দেখবেন ঐ ঝরণার পানিকে আমি লাল করে রেখেছি। মাছ দুটোকে এখন ঐ পানিতে ছেড়ে দিন দেখবেন ওরা বেঁচে যাবে।
রাজা: কি বলছো হে বাছা! এও কী সম্ভব। যে পাহাড়ের ঝরণা ছিল মৃত। কোনো পানিই ছিলনা যেখানে পানি! তাও আবার লাল ঝরণার পানি। সু-মিস্ট মৃদু-মন্দ বাতাস! মন্ত্রী! ওকে এখুনই পুরস্কার প্রদান কর।
মন্ত্রী: জী আজ্ঞা হুজুর এই করছি বলে। কিন্তু হুজুর লাল ঝরণার ঝিরিঝিরি পানি, সু-মিস্ট বাতাস এইসব উপভোগ করবেন কিভাবে যদি সেখানে একটি সোনার সিংহাসন না থাকে। আমি বলি কি হুজুর ছেলেটি একটি সোনার সিংহাসন নিয়ে আসুক তারপর তিনটি কাজ করার জন্য ওর পাওনা সব বখশিস একসাথে মিটিয়ে দেয়া যাবে।
রাজা: হু! এই না হলে যোগ্য রাজার যোগ্য মন্ত্রী। মন্ত্রী তুমি যথার্থই বলেছ। ঠিক আছে তাই হবে।
বাছা, সোনার সিংহাসন আগে নিয়ে আস, যাও
অনেক বখশিস নিয়ে তবেই বাড়ি যাও।
মন্ত্রী: যদি বাছা যত দিন তুমি সোনার সিংহাসন নিয়ে না আসবে ততদিন তোমার মা এই রাজকারাগারে থাকবে বন্দি। যাও।
বর্ণনা:
ছেলেটি এবার সত্যিই চিত্কার করে কেঁদে উঠলো, হায় খোদা এবার অবশেষে আমার মাকেও এই নিদারুন যন্ত্রণা ভোগ করতে হলো। আমাকে যেকরেই হোক সোনার সিংহাসন যোগার করে মাকে উদ্ধার করতেই হবে।
কিন্তু বললেই কি হলো, কোথায় পাবে স্বর্নের সিংহাসন? দ্বিগবিদিগ জ্ঞানশূণ্য হয়ে ছুটতে থাকে, খুঁজতে থাকে সিংহাসন কিন্তু কোথাও পায়না সেই সোনার সিংহাসন। আবারো ক্লান্তি আর অবসাদে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে সেই অশ্বথ বৃক্ষের কোলে। আবারও সেই বৃদ্ধ লোকটি স্বপ্নে এসে দেখা দেয়। ছেলেটির কথামত সোনার সিংহাসনের সন্ধান বাতলে দেয়। যথারীতি ঘুম ভেংগে যায় আর কাউকে খুঁজে পায় না। কিন্তু স্বপ্নের কথা মত খুজে পায় সিংহাসন। আর ছুটে যায় রাজার কাছে-
ইউনিট-৫ চরিত্র--ছেলে, মন্ত্রী, রাজা; স্থান--রাজপ্রাসাদ; সময়--দুপুর
ছেলে: রাজা হুজুর, রাজা হুজুর পেয়েছি আপনার সিংহাসন, আপনি দয়া করে লাল ঝরণার পাশে আসুন দেখবেন সেখানে আপনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে একটি সোনার সিংহাসন। এবার দয়া করে আমার মাকে ছেড়ে দিন।
রাজা: মন্ত্রী একী তাজ্জব ব্যাপার, এওকি সম্ভব! এইটুকু ছেলে যা বলছি তাই সে করে দিচ্ছে। না না মন্ত্রী, এবার তাকে পাওনা যা কিছু সব বুঝিয়ে দাও। আর ওর মাকে ছেড়ে দাও।
মন্ত্রী: জী আজ্ঞে হুজুর, তাই দিচ্ছি। কিন্তু হুজুর একটিবার সবিনয়ে ভেবে দেখুনতো এই যে লাল ঝরণার পানি, সোনালী মাছ, সোনার সিংহাসন এতসব কার জন্য। যদি এই রাজ্যের রাজার যোগ্য কোনো রানী-ই নাই থাকল তবে তো সবকিছুই বৃথা। শুনেছি সাত সমূদ্র, তেরো নদী আর একশ একটি পর্বতশৃঙ্গের ওপারের রাজ্যে রয়েছে এক অপরূপ রাজকন্যা। যার রূপের জ্যোতিতে রাত্রি আলোকিত হয়, সূর্যের তাপ হয় মিষ্টি আর ঝরণার পানি হয় সু-মিস্টি। আমি বলি কি যদি আপনি তাকে বিবাহ করতেন তাহলে এই রাজ্যে অপূর্ণ বলে আর কিছুই থাকে না।
রাজা: মন্ত্রী এখন দেখছি পুরুস্কার ছেলেটিকে না দিয়ে তোমাকেই দেয় উচিত, তোমার এই সব পরামর্শের জন্য।
বাছা! আগে রাজকন্যা নিয়ে আস, যাও
অনেক বখশিস নিয়ে তবেই বাড়ি যাও।
মন্ত্রী: হুজুর তবে একটি কথা আছে, যদি ছেলেটি রাজকন্যাকে না আনতে পারে তবে ওর মায়ের গর্দান কেটে ফেলা হবে।
রাজা: ঠিক আছে মন্ত্রী তুমি যা বলেছ তাই হবে।
বর্ণনা:
এবার ভয় আর আতঙ্কে থরথর কম্পমান ছেলেটির মনে পড়লো সেই বৃদ্ধ মানুষটির কথা। ছুটে গেল সেই অশ্বথ বৃক্ষের কাছে। যথারীতি ঘুমের দেশে যেই চলে গেলো অমনি বৃদ্ধ মানুষটি এসে দাঁড়ালো আর জিজ্ঞেস করলো কেনো সে বার বার কাঁদছে আর এই যন্ত্রণাভোগ করছে। ছেলেটি এবার খুলে বললো সেই রাজার কথা যে বারবার এই বিপদে ফেলছে। কিন্তু সে তো গিয়েছিল রাজার কাছে উপহার নিয়ে, উপহার দিতে। সকল শুনে এবার বৃদ্ধ লোকটি দূর রাজ্যের রাজকন্যার সন্ধান বলে দেয় আরও দুটি মন্ত্র শিখিয়ে দেয়। বৃদ্ধ এ কথাও জানায় যে, ঐ দেশের রাজা দয়ালু তবে ভয়ংকর রাগী। কথার নড়চড় হলেই বিপদ। রাজকন্যাকে পেতে সে যে শর্তই দিক না কেন মন্ত্র দুটোই তাকে উদ্ধার করবে। এই বলে বৃদ্ধ উধাও হয়ে গেলো। আর ছেলেটি ঘুম ভেঙ্গে বৃদ্ধের কথামত রওনা হলো সাত সমূদ্র, তেরো নদী আর একশ একটি পর্বত শৃঙ্গমালার ওপারের রাজ্যে রাজকন্যার সন্ধানে। নানা বিপদ ডিঙ্গিয়ে অবশেষে পৌছে যায় সে রাজ্যে আর কৌশলে রাজার সাক্ষাত্ ও লাভ করে।
ইউনিট-৬ চরিত্র--ছেলে, রাজা; স্থান--রাজপ্রাসাদ; সময়--বিকেল
ছেলে: রাজা মহাশয় দক্ষিণ রাজ্যের সকল প্রজার পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই। আমি আপনার রাজ্যে এসেছি বিশেষ একটি উদ্দ্যেশে। আপনি অভয় দিলে আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য আপনাকে বলতে পারি।
রাজা: অভয় দিলাম তুমি বল এখানে আসার তোমার উদ্দেশ্য কী।
ছেলে: রাজা মহাশয় আমি হতদরিদ্র এক জেলের ছেলে। কিন্তু আপনার কন্যাকে বিবাহ করতে চাই। আমি নিশ্চিত যে আমার সাথে বিবাহে আপনার কন্যা চিরদিন সুখী থাকবে।
রাজা: কি বললে হে ছোকরা! তুমি করবে আমার কন্যাকে বিবাহ। কি আছে তোমার যে তুমি আমার কন্যাকে বিবাহ করতে চাও। আবার তাকে সুখে রাখবে চিরদিন। তোমার সাহস আছে বলতে হবে। তোমাকে চাইলেই আমি কেটে দু'টুকরো করতে পারি। কিন্তু তোমার যোগ্যতা যাচাই না করে আমি তা করতে পারি না। তাই খুব মন দিয়ে শোনো- আগামীকাল ভোরের সূর্য উদয়ের আগেই যদি আমার রাজ্যের একমাত্র প্রমত্তা নদীর ওপরে ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করতে পারো এবং সেতু উভয় পাড়ে ফুলের বাগান তৈরী করে দিতে পার তবেই তোমার সাথে আমার কন্যার বিবাহ হতে পারে।
ছেলে: জী আচ্ছা রাজা মহাশয়, আমি রাজি আপনার শর্তে। আগামীকাল সকালেই তবে আপনার সাথে দেখা হবে।
বর্ণনা:
এই কথা বলে ছেলেটি চলে যায়। রাত যখন গভীর, সবাই যখন ঘুমের ঘোরে অচেতন তখন ছেলেটি প্রমত্তা আর খরস্রোতা নদীর কিনারে গিয়ে দাঁড়ালো। আর বৃদ্ধের দেয়া প্রথম মন্ত্রটি স্মরণ করল-
উড়ন উড়ন চর্কি ঘুরণ/ রাজার ইচ্ছা করব পূরণ/ উলুক ঝুলুক ঝুল/ তৈরী হবে পুল। মন্ত্রটি বলার সাথে সাথেই সুদৃশ্য একটি ঝুলন্ত সেতু তৈরী হয়ে যায়। এরপর দ্বিতীয় মন্ত্র- উড়ন উড়ন চর্কি ঘুরণ/ রাজার ইচ্ছা করব পূরণ/ উলুক ঝুলুক ঝুল/ তৈরী হবে ফুল। অমনি সেতুর দুই পাড়ে মনোরম দুটি ফুলের বাগান তৈরী হয়ে গেল। আর সেই বাগানে পাখির কিচিরমিচিতে পরদিন সকালে রাজার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এই অসম্ভব দৃশ্য দেখে রাজাতো বিস্মিত। সে বুঝলো ছেলেটি জেলের ছেলে হলেও তার মধ্যে এমন কোনো মহত্ গুণ না থাকলে এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারতো না। এই ছেলেই আমার মেয়ের উপযুক্ত পাত্র। যেই কথা সেই কাজ মহা ধুমধামে বিয়ের আয়োজন করা হয়। রাজ্যসুদ্ধ লোক আমন্ত্রিত হয় সে বিয়েতে। কিন্তু ছেলেটির মনে রয়েছে তার মায়ের কথা। সে কতই না যন্ত্রণা ভোগ করছে। অতঃপর ঠিক হলো ফিরে আসার দিন ক্ষণ। পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চড়ে রওনা হবার আগে ছেলেটি এবার তার নববধু এখানে আসার সকল বৃত্তান্ত খুলে বলে। সব কিছু শুনে রাজকন্যা বলে, তুমি কিছু চিন্তা করো না আমিই এখন তোমাদের রাজাকে মোকাবেলা করবো। এই কথা বলে দক্ষিন রাজ্যে এসে রাজার সামনে দাঁড়ায়। রাজাতো মহাখুশী এই ভেবে যে সে তার বধু পেয়েছে। রাজকন্যাও কিছু না বলে রাজাকে বলে আমি আপনার সাথে একটি ঘুরে ঘুরে দেশটি দেখতে চাই, সাথে পাছে মন্ত্রীও থাকতে পারে। রাজাতো মহাখুশী, রাজকন্যা রাজা আর মন্ত্রীকে নিয়ে কৌশলে সেই অশ্বথ বৃক্ষের কাছে যায়। বৃক্ষটিকে প্রণতি জানিয়ে অনুরোধ করে যেনো লোভী রাজা আর দুষ্ট চাটুকার মন্ত্রীর হাত থেকে তাদের রক্ষা করে। যেই বলা সেই কাজ। অশ্বথ বৃক্ষ তার লম্বা ডাল দিয়ে রাজা আর মন্ত্রীকে জড়িয়ে দেহের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে। রাজা আর মন্ত্রী যতই চিত্কার করে কিছুই পৌছায় না কারো কানে। অবশেষে রাজা ও মন্ত্রীর মৃত্যু হয়। আর ছেলেটি রাজকন্যাকে নিয়ে মাকে উদ্ধার করে রাজ্যে নতুন রাজা-রানী হয়ে প্রজাদের বন্ধু হয় সুখে জীবন যাপন করে।