0615xiyou1
|
'পশ্চিমদেশ অভিমুখে যাত্রা' হচ্ছে চীনের চারটি বিখ্যাত সাহিত্যের অন্যতম। এ উপন্যাস ষোড়শ শতাব্দীতে মিং রাজবংশের মাঝামাঝি সময়ে রচিত হয়। অনেকে বলেন, এ উপন্যাসের লেখক হলেন উ চেং আন। তবে এখন পর্যন্ত লেখকের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।
এ উপন্যাসটি প্রধানত: আচার্য, সু উ খোং, চু পা চিয়ে আর শা ঊ চিং এই চার জন পশ্চিমদিকের দেশ বিশেষত, ভারত বর্ষে ধর্মীয় গ্রন্থ সংগ্রহ করার পথে যে দুঃসাহসী যাত্রা করেন এবং ভয়াবহ সব বিপদের সম্মুখীন হয়, সেই সব ঘটনা থেকে প্রায় ৮১টি বিপদজনক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে এই উপন্যাসে।
উপন্যাসটি প্রকাশের পর চীন তথা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পরে এবং দ্রুতই ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ব্যপক দর্শকপ্রিয়তার কারনে পরবর্তীতে উপন্যাসটি নানা ভাষা অনুদিত হয়েছে।
এ উপন্যাসের ভিত্তি ছিল থাং রাজবংশের সন্নাসী হিউয়েন সুং পশ্চিমদেশে বৌদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থ গ্রহণের গল্প। খ্রিস্টপূর্ব ৬২৯ সালে ৩০ বছর বয়সী হিউয়েন সুং পশ্চিমদেশে ধর্মীয় গ্রন্থ সংগ্রহের উদ্দ্যেশে যাত্রা শুরু করেন। তিনি বহু কষ্ট আর ভয়ঙ্কর সব অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে এশীয় অঞ্চল পার হয়ে উত্তর ভারতে প্রবেশ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৬৪৫ সালে তিনি ৪৬ বছর বয়সে থাং রাজবংশের রাজধানী ছাং আন-এ ফিরে যান। ১৭ বছর স্থায়ী ধর্মীয় গ্রন্থ সংগ্রহের যাত্রায় তিনি তত্কালিন ১১০টি দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং ৬৫৭টি গ্রন্থ চীনে নিয়ে আসেন। চীনে ফিরে এসে তাঁর শিষ্য বিয়ানজি হিউয়েন সুংয়ের বর্ণনা শুনে 'মহা থাং রাজবংশের পশ্চিম যাত্রা' নামে বারো খণ্ড গ্রন্থ লিখেন। এ গ্রন্থ হচ্ছে 'পশ্চিমদেশ অভিমুখে যাত্রা' উপন্যাসের আদর্শ।
'পশ্চিমদেশ অভিমুখে যাত্রা' উপন্যাসটি পাঠক-প্রিয়তায় তত্কালীন চীনের রোমান্টিক উপন্যাসগুলো মধ্যে শীর্ষস্থানে ছিল। এমন কি এ উপন্যাস বিশ্ব সাহিত্য ইতিহাসেও শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক সৃস্টির মধ্যে অন্যতম প্রতিনিধিত্ব বলা যায়। 'আমেরিকান বিশ্বকোষে' বলা হয়েছে, "এটা একটি সমৃদ্ধ বিষয়বস্তু আর উজ্জ্বল চিন্তাধারা অধিকারী পৌরাণিক কাহিনী।" 'ফরাসী বিশ্বকোষে' বলা হয়েছে, "এ কাহিনীর বর্ণনা হাস্যরসাত্মক। পাঠকের গভীর আগ্রহ জেগে তুলে।" ১৯ শতাব্দী থেকে এ উপন্যাসের জাপানী, ইংরেজী, ফরাসী, জার্মান, রুশসহ দশ বারোটি ভাষার অনুদিত সংস্করণ সারা বিশ্বে প্রচলিত হয়।
তবে পৌরাণিক কাহিনী হলেও এ উপন্যাসের মধ্যে আমরা পৃথিবীর নানা বাস্তব সামাজিক সমস্যা প্রতিফলিত হয়।
চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কেন্দ্র ১৯৮২ সাল থেকে প্রায় ছয় বছর ব্যাপী ২৫ পর্ব এক টেলিভিশন নাটক তৈরি করে। ১৯৮৮ সালের বসন্ত উত্সবে এ নাটক প্রচার শুরু হয়। এ নাটকটি বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন ছুটি আর শীতকালীন ছুটিতে এখনো বার বার পুনঃপ্রচার হয়। বড়দের ও ছোটদের সবাই এ নাটক পছন্দ করে। ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সাল এ নাটকের প্রধান প্রধান অভিনেতাদের নিয়ে এর সিকোয়েল তৈরি করেন। নতুন পর্বগুলো প্রচারের পর শিগগির বহু দর্শকদের স্বীকৃতি পেয়েছে।
বন্ধুরা, প্রথম পর্বে শুনুন সুন উখোং-এর জন্ম কথা।
| ||||