চীনের কিংবদন্তিতে দাইয়ুর বন্যা নিয়ন্ত্রণের গল্প অতি সুপরিচিত। দাইয়ুকে চীনের জনগণের বন্ধু আর জনহিতৈষী বীর হিসেবে শ্রদ্ধা করা হয়।
এই গল্প অনাদিকাল আগের, তখন একবার দীর্ঘ ২২ বছর স্থায়ী একটি বন্যা হয়েছিল। তখন পৃথিবীর চার দিকে শুধু পানি আর পানি। আবাদি জমি বলতে কিছুই অবশিষ্ট ছিল না, কারণ বন্যায় প্লাবিত হয়ে যায় সব। গৃহহারা হয় মানুষ আর তারা প্রায়শই বন্য প্রাণীর খাবারে পরিণত হতো। ফলে সমগ্র রাজ্য ক্রমশই যেন মানব শূণ্য হয়ে যেতে লাগলো। এই অবস্থা দেখে রাজা ইয়াও ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। তিনি বিভিন্ন উপজাতির সর্দারদের ডেকে এনে রাজ্যের দূরাবস্থার চিত্র তুলে ধরে বন্যা নিয়ন্ত্রণে উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। সভায় তিনি দাইয়ু'র বাবা গুনকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেন।
গুন রাজার হুকুম মেনে নিলেন এবং কি করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার উপায় খুঁজেত লাগলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে রাজ্যের চার দিকে উচু উচু বাঁধ নির্মাণ করে বন্যা প্রতিরোধ করবেন। তাঁর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দীর্ঘ নয় বছর ধরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়, কিন্তু বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থ হয়। কারন বন্যার তীব্র চাপ বার বার বাঁধ ভেঙ্গে রাজ্যে প্রবেশ করে আগের চেয়েও মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি আর প্রাণহানীর কারণ হয়ে উঠলো। এই দেখে তো রাজা ইয়াও ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে হুকুম দিলেন- 'গুনে'র বাঁধ নির্মাণ বন্যা প্রতিরোধে কেবল ব্যর্থই হয়নি উল্টো বন্যার জল বাঁধ ভেঙ্গে আরো বেশি ক্ষতির সৃষ্টি হয়। গুন নয় বছর ধরে বন্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। তাই তাকে মেরে ফেলো।" রাজার এ হুকুমের পর ইয়ু পাহাড়ে গুনকে বন্দী করা হয় এবং তিন বছর পর গুনকে হত্যা করা হয়। কিন্তু গুন মৃত্যুর সময়ও বন্যাকবলিত মানুষের দূর্দশার কথাই চিন্তা করেন। তিনি ব্যর্থতার বড় কষ্ট বুকে নিয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এই ঘটনার পর আরো প্রায় বিশ বছর চলে যায়। এদিকে রাজা ইয়াও তাঁর রাজ্যভার সুন-এর হাতে ন্যস্ত করেন। নতুন রাজা সুন এবার গুনের ছেলে দাইয়ুকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিলেন।
| ||||