Web bengali.cri.cn   
চীনের পর্যটন বাজারে নতুন প্রবণতা
  2012-11-27 20:07:23  cri
 জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এখন আরো বেশি চীনা নাগরিক ছুটির সময় বাইরে ভ্রমণে যাচ্ছেন। এর ফলে চীনের পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিকাশ হয়েছে। গত বছর চীন মোট ১৩ কোটি ৫০ লাখ পর্যটককে অভ্যর্থনা জানিয়েছে এবং ৭ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার চীনা বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। ওই বছর পর্যটন শিল্পের মোট আয় হয়েছে ২.২৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপি। এটা ২০১০ সালের তুলনায় ২০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

পর্যটন শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি চীনা নাগরিকদের পর্যটন সেবা গ্রহণের ধারণা আর পদ্ধতিও পরিবর্তিত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্যের দ্রুত উন্নয়ন ও জনপ্রিয় হওয়ার সাথে সাথে সস্তা ও সুবিধাজনক অনলাইন পর্যটন পণ্য বহু ভোক্তার পছন্দে পরিণত হয়েছে।

একজন শহরবাসী বলেন, "আমি মনে করি, ইন্টারনেটে পর্যটন পণ্য বাছাই করা অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক এবং সেখানে দোকানের চেয়ে সস্তায় সেবা পাওয়া যায়।"

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের অনলাইন পর্যটন শিল্প দ্রুত উন্নত হয়েছে। এখাত বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশেরও বেশি। তবে গত অক্টোবর পর্যন্ত চীনে অনলাইনে পর্যটন পণ্যের বিক্রি দাঁড়ায় গোটা বাজারের মাত্র ২০ শতাংশে। অথচ শিল্পোন্নত দেশগুলোতে পর্যটন পণ্যের প্রায় ৫০ শতাংশই অনলাইনে বিক্রি করা হয়। এর তুলনায় চীনের অনলাইন বাজারের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

অনেক চীনা পর্যটক আগের মতো কেবল ঐতিহ্যবাহী পর্যটন স্থান ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন না। তাঁরা আশা করেন, পর্যটনের মাধ্যমে নিজের মন ও শরীরের বিনোদন পাবেন অথবা গভীর ভ্রমণের মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করবেন। এখন চীনাদের বিদেশ ভ্রমণে বহুবিধ সম্প্রসারণের প্রবণতা দেখা গেছে।

চীনের যুব পর্যটন হোল্ডিং প্রতিষ্ঠানের বাজার বিভাগের প্রধান ব্যবস্থাপক গে লেই বলেন, "এখন চীনাদের পর্যটন সেবা ব্যবহার গভীর পরিবর্তনের পর্যায়ে রয়েছে। অতীতে চীনারা দলে পর্যটনে যেতেন। তারা চেষ্টা করতেন অল্প সময়ের মধ্যে যত বেশি স্থানে গিয়ে যত বেশি জিনিস দেখা যায় তার জন্য। কিন্তু এখন পর্যটন সেবা ব্যবহারের প্রবণতায় বহুবিধ পরিবর্তন হয়েছে। যেমন যারা প্রথম বার বিদেশে যান, তাঁরা বিদেশের অবস্থা জানতে চান। কেউ কেউ কোনো এক বিনোদন স্থানে গিয়ে ছুটি কাটাতে চান। কেউ কেউ স্থানীয় সংস্কৃতি জানার জন্য নিবিড়ভাবে ভ্রমণ করতে চান।"

জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ায় চীনাদের বিদেশে ভ্রমণের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। এ বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনের পর্যটন সেবার আমদানির পরিমাণ ৪২.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তৃতীয় প্রান্তিকে আমদানিতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪৬.৩ শতাংশ। তবে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আর ইউরোপের ঋণ সংকটের প্রভাবে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকের সংখ্যা কমেছে। তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের পর্যটন শিল্পে বাণিজ্য ঘাটতি ১৯.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেড়েছে।

চীন বিশ্বের কয়েকটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থানের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটক উতসে পরিণত হয়েছে। ২০০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়া চীনা পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪০ হাজার। অথচ ২০১১ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ৯০ হাজারে দাঁড়ায়। অস্ট্রেলিয়ার পর্যটন ব্যুরোর উপাত্ত অনুযায়ী, ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দেশটিতে চীনা পর্যটকের সংখ্যা সাড়ে তিন গুণ বেড়েছে। চীন হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটক বাজার। জার্মান ফেডারেল পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১১ সালে জার্মানি রাত কাটানো ১২ লাখ চীনা পর্যটককে অভ্যর্থনা জানিয়েছে। এ সংখ্যা ২০০১ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।

চীনা পর্যটকদের বিদেশ ভ্রমণ গন্তব্য-দেশগুলোর জন্য লক্ষণীয় আয় সৃষ্টি করেছে এবং স্থানীয় পর্যটন ও সংশ্লিষ্ট শিল্পের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়েছে। চীনের জাতীয় পর্যটন ব্যুরোর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত বছর চীনের পর্যটকরা বিদেশে ভ্রমণের সময় মোট ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। অনুমান অনুযায়ী, চলতি বছর চীনা পর্যটকরা বিদেশে ভ্রমণকালে ব্যয় করবে ৮০ বিলিয়ন ডলার। বিদেশে ভ্রমণসেবা গ্রহণে চীন এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি চীন আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা-২০১২ শাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলায় ১০৪টি দেশ ও অঞ্চলের মোট ২৫১৪টি স্টল অংশ নেয়, যা এ পর্যটন মেলায় এক নতুন রেকর্ড। অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৯৩২টি স্টলই হচ্ছে বিদেশের। অনেক বিদেশি ব্যবসায়ী চীনের ঐতিহ্যবাহী উত্সব -- বসন্ত উত্সবের বাণিজ্যিক সুযোগ লক্ষ্য করে চীনা পর্যটকদের জন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পর্যটন প্যাকেজ প্রণয়ন করেছেন।

এবারের পর্যটন মেলায় ব্রিটিশ পর্যটন ব্যুরোর ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পর্যটন সংস্থা, দর্শনীয় স্থান এবং হোটেল ছাড়া আরো দুটি বিভাগীয় বিপণিও রয়েছে। তারা চীনা পর্যটকদের সেবাগ্রহণ শক্তির কারণে এসেছে। ব্রিটিশ পর্যটন ব্যুরোর মহাচীন অঞ্চলের ব্যবস্থাপক ছিয়েন কাং বলেন, "আমরা আরো বেশি চীনা পর্যটককে ব্রিটেনে সেবাগ্রহণে স্বাগত জানাই এবং আশা করি, চীনে এসে আরো বেশি চীনা পর্যটকের চাহিদা জানতে পারবো।"

জানা গেছে, গত কয়েক মাসে থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া আর মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশ ভ্রমণকারী চীনা পর্যটকের সংখ্যা স্পষ্টভাবে বেড়েছে। এবারের পর্যটন মেলায় চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং চীন-মধ্যপূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর সহযোগিতা সচিবালয়ের মহাসচিব সোং থাও বলেন,  "চীন আর মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর পর্যটন সম্পদ প্রচুর। দু'পক্ষের জনগণের পরস্পরের দেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য আর সাংস্কৃতিক দর্শনীয় স্থান জানার আগ্রহ আছে। এটা হচ্ছে দু'পক্ষের পর্যটন সহযোগিতা জোরদার করার খুব ভালো ভিত্তি। পর্যটন সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন জাতির জনগণের মধ্যকার পারস্পরিক উপলব্ধি বাড়তে এবং আরো বেশি সহযোগিতার সুবিধা আবিষ্কার হতে পারে।"

চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চীনা জনসাধারণের মানিব্যাগও মোটা হয়েছে। দেশের উন্মুক্তকরণের মাত্রা দিন দিন আরো বাড়ছে। রেনমিনপি অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় শক্তিশালী হয়েছে। এসব কারণে আরো বেশি চীনা নাগরিক বিদেশ ভ্রমণ এবং সেখানকার সেবা ভোগ করবে। এটা চীন ও বিশ্বের বিনিময় এগিয়ে নিয়ে যাবে। (ইয়ু/এসআর)

মন্তব্য
লিঙ্ক