সবার 'অভিন্ন ভবিষ্যৎ' রচনা করছে শাংহাইয়ের আমদানি মেলা
2022-11-11 16:24:27

নভেম্বর ১১: গতকাল (বৃহস্পতিবার) শেষ হয়েছে চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা। শাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত এবারের মেলায় লেনদেন হয়েছে ৭৩৫২ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত বছরের মেলার তুলনায় ৩.৯% বেশি। এবারের মেলা একটি চমকপ্রদ প্রতিলিপি হস্তান্তর করেছে। আমদানি মেলার একজন "পুরোনো বন্ধু" এবং ডেকাথলনের চীনা শাখার ঊর্ধ্বতন ভাইস প্রেসিডেন্ট প্যাসকেল বুজার্ড বলেছেন: “এতে কোন সন্দেহ নেই যে চীন আগামী ৫০ বছরে বিশ্বের ডেকাথলনের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোর একটি হয়ে উঠবে।”

আমদানি মেলায় প্যাসকেল বিজার্ডের মতো আরও অনেক “অনুরাগী” এসেছেন। চীনের সরকারী তথ্য অনুসারে, মোট ১৪৫টি দেশ, অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা এই বছরের মেলায় অংশগ্রহণ করেছে এবং ১২৭টি দেশ ও অঞ্চলের ২৮০০টিরও বেশি কোম্পানি কর্পোরেট ব্যবসায়িক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছে। তাছাড়া,  ৪৩৮টি নতুন পণ্য, নতুন প্রযুক্তি ও নতুন সেবা প্রদর্শিত হয়েছে এ মেলায়।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসের পর চীনে অনুষ্ঠিত প্রথম বড় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী হিসেবে, শাংহাই আমদানি মেলা আবার ফলপ্রসূ হয়েছে। ফলে প্রমাণিত হয়েছে যে এটি চীনের জন্য একটি নতুন উন্নয়ন প্যাটার্ন তৈরির একটি জানালা হয়ে উঠেছে। এ মেলা উচ্চ-স্তরের উন্মুক্ততার একটি প্ল্যাটফর্ম এবং বিশ্বব্যাপী ভাগ করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক গণপণ্য।

টানা পাঁচবার আমদানি মেলায় অংশগ্রহণকারী আমেরিকান গন্ধসার তৈল কোম্পানি ডোটেরা’র চীনা শাখার প্রেসিডেন্ট মাইকেল ওয়েন বলেছেন, “এটি একটি খুব আকর্ষণীয় স্মৃতি। দ্বিতীয়বার আমদানি মেলায় অংশগ্রহণের পর আমরা শানসি প্রদেশের ফিংশুন অঞ্চল থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। তাতে বলা হয়েছে, স্থানীয় ফোরসিথিয়া কাঁচামাল হিসেবে গন্ধসার তৈল তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, এবং আমরা খুব আগ্রহী।” একটি ছোট্ট চিঠি চীনে ডোটেরার  সমবায় গবেষণা ও উন্নয়নকে নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে।

ভাগ করা মানে সবার জন্য আরও বেশি সুযোগ। বিশ্বে চীনের একটি বিরল বড় আকারের বাজার রয়েছে। চীন হচ্ছে ১৪০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের প্রধান ব্যবসায়িক অংশীদার এবং টানা পাঁচ বছর ধরে বিশ্বের বৃহত্তম পণ্য ব্যবসায়ী। এই বছরের আমদানি মেলায় চীন নিজের বৃহৎ বাজারের সুযোগ, উন্মুক্তকরণের সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গভীরতর করার সুযোগগুলো ভাগ করে নেওয়ার জন্য সব দেশের সব পক্ষকে আমন্ত্রণ করেছে। যার মাধ্যমে আরও বেশি দেশ চীনের উন্নয়নের সুযোগ উপভোগ করতে পারছে, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলির জন্য তা এক বিশাল সুযোগ এনে দিয়েছে।

এই বছরের আমদানি মেলায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রায় ৩০টি কোম্পানি বিনামূল্যে বুথ ব্যবহার করার চুক্তি করেছে, যা আগের বারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। মেলায় গিনি-বিসাউ-এর কাজু, আফগানিস্তানের কার্পেট এবং আরও অনেক দেশের বিভিন্ন পণ্য উন্নত দেশগুলোর উচ্চ-প্রযুক্তির পণ্যগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করেছে এবং নিজস্ব বাজারও খুঁজে পেয়েছে। তারা "উন্নয়নের ফল সব দেশের আরও বেশি করে ন্যায়সঙ্গতভাবে উপকৃত হওয়ার" প্রতিশ্রুতির সাক্ষী।

চলতি বছর হল ‘আঞ্চলিক সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক চুক্তি’ (আরসিইপি) কার্যকর হওয়া প্রথম বছর। জাপানের ওকিনাওয়া থেকে আওয়ামোরি, কম্বোডিয়া থেকে চাল, অস্ট্রেলিয়া থেকে গরুর মাংস, ইত্যাদি আমদানি মেলায় প্রদর্শিত আরসিইপি’র সদস্য রাষ্ট্রগুলির বৈশিষ্ট্যযুক্ত পণ্যগুলি দ্বিগুণ লভ্যাংশ পেয়েছে।

“চীনের আন্তর্জাতিক আমদানি মেলার মাধ্যমে আমরা প্রদর্শনীর সময় চীনা ভোক্তাদের কাছ থেকে অর্ডার পেয়েছি। এই বছর আরসিইপি কার্যকর হয়েছে এবং আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে বাজারটি আরও বড় হবে," বলেছেন জাপান-চীন ওরিয়েন্টাল কালচারালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ছাই ওয়েই শিন।

সম্প্রতি এইএসবিসি থেকে প্রকাশিত "বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর চোখে চীন ২০২২: আরসিইপি’র নতুন সুযোগ উপভোগ করা’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে, ৯৩% আরসিইপি সদস্য কোম্পানি চীনের সাথে বাণিজ্য বাড়াবে।

"আগামী বছর দেখা হবে!" ইতোমধ্যে ষষ্ঠ আমদানি মেলার জন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণের আবেদন সম্পূর্ণরূপে চালু হয়েছে। প্রায় ৬০টি কোম্পানি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আফগান ব্যবসায়ী আলী ফয়েজ ইতোমধ্যে পরবর্তী মেলায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার সাথে সাথে "ডিজিটাল আমদানি মেলা" চলতে থাকবে। বিভিন্ন দেশের মানুষের উপকৃত হওয়ার গল্প চলতে থাকবে। ‘অভিন্ন ভবিষ্যতে’র শাংহাই আমদানি মেলার  গল্পের যেন কোন শেষ নেই।

(ইয়াং/এনাম/ছাই)