সুরকার সিয়ান সিং হাই 'হুয়াং হো নদী কোরাস'-এর প্রশংসা করে বলেন, "এ গানে সৌন্দর্য ভরা। গানে বাস্তবতা, ক্ষোভ আর বেদনা ফুটে উঠেছে। যারা কখনও হুয়াং হো নদী দেখেনি, তারা এ গান শুনে একে দেখার অনুভূতি পাবে। গানের কথায় কয়েক হাজার বছরের মহান হোয়াং হো নদীর ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে।"
বন্ধুরা, এবার শুনুন 'হোয়াং হো নদীর গান'। এ গানের প্রথম অংশে নিরন্তর বয়ে যাওয়া হোয়াং হো নদীর পানি আর চীনা ছেলেমেয়েদের সুখ-শান্তির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে বর্ণিত হয়েছেজাপানি হানাদারদের আগ্রাসনের পর স্ত্রী ও সন্তানদের স্বদেশ ত্যাগ, পরিবারের সদস্যদের এক-এক স্থানে আশ্রয় নেয়ার বেদনাদায়ক দৃশ্য।কবিতায় বলা হয়েছে, "আমরা হচ্ছি হোয়াং হো নদীর ছেলেমেয়ে। আমরা কঠোর পরিশ্রম করি, বিজয় দিন দিন ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু যতদিন শত্রু নির্মূল না হয়, ততদিন আমাদের শান্তির জীবন শুরু হবে না। বিশ্বাস না করলে, নদীর পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণদের কষ্টকর কাতরানি শুনুন।"
বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা চীনের কেন্দ্রীয় অর্কেস্ট্রার বাজানো 'হোয়াং হো নদী কোরাস' নামে সংগীত শুনলেন। এ সংগীতের পরিচালক হচ্ছেন ইয়ান লিয়াং লেই । তিনি চীনের সিমফনি অর্কেস্ট্রাদলের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম।তিনি বর্তমানে কেন্দ্রীয় অর্কেস্ট্রা দলের পরিচালক, এবং চীনের পরিচালক সমিতির চেয়ারম্যান।
বন্ধুরা, এ বার শুনুন 'হোয়াং হো নদীর বিলাপ' নামক গান। এ গানে অতি নিম্ন ও বেদনাদায়ক স্বরে এক স্বামী ও সন্তান হারা নারীর মনের ব্যথা বর্ণিত হয়েছে। এ নারীর স্বামী গৃহহারা হয়েছেন। কেউ জানে না, তার স্বামী কোথায় গেছে। তার ছেলে জাপানি হানাদারের গুলিতে মারা গেছে। জাপানি হানাদারদের দ্বারা সে নিজেও ধর্ষিত হয়েছে। অবশেষে এ নারী হোয়াং হো নদীতে আত্মহত্যা করে। গানে নারী বলছেন, "বাতাস, আর জোরে প্রবাহিত হয়ো না; মেঘ, তুমি আর লুগিয়ে থেকো না; হুয়াং হো, তুমি আর কেঁদো না। জাপানি হানাদার আমার সন্তানকে হত্যা করেছে। স্বামী, তুমি কী স্বর্গে আছ? তুমি আমার এ রক্তঋণ শোধ কর।"
'হোয়াং হো নদী কোরাসের' মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ও জনপ্রিয় গান হচ্ছে 'হোয়াং হো নদীকে রক্ষা কর'। এ গান শুনে মনে হয়, আবার জাপান–বিরোধী যুদ্ধে অংশ নিই;প্রতিরোধযুদ্ধের তীব্রতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, এ প্রবণতা কেউ রুখতে পারে না। গানে বলা হয়েছে, চীনা জাতির ছেলে-মেয়েকে শুকর ও ছাগলের মত লোকজন হত্যা করতে চায়। আমরা বিজয় লাভে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পাহাড়ে জাপান-বিরোধী বীর অনেক। তারা বন্দুক ও বড় ছুরি হাতে দেশ রক্ষা করে, হুয়াং হো নদী রক্ষা করে, উত্তর চীনকে রক্ষা করে, সারা চীন রক্ষা করে।
বন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সুরের ধারায় শুনছেন। এখন শুনুন 'হোয়াং হো নদী কোরাসের' শেষ অংশ 'তর্জন কর, হোয়াং হো'। এ কোরাসে আছে উত্তাল জোয়ারের আমেজ। এ গানে রোমান্টিক ভাবও রয়েছে। গানে চীনা জনগণ জাপানি সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। গানে বলা হয়েছে, 'চু চিয়াং নদী তর্জন করছে। ইয়াং চি নদী তর্জন করছে। হোয়াং হো নদী, তোমার ক্ষোভের ঢেউ তোলো,তুমি তর্জন কর। সারা চীনের নিপীড়িত মানুষ, সারা বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের জন্য তুমি গর্জন কর।
বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা জাপান-বিরোধী যুদ্ধের সময় সৃষ্ট 'হোয়াং হো নদী কোরাস'শুনলেন। এ কোরাস চীনা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে শক্তি যুগিয়েছে, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহস যুগিয়েছে, আরও সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী স্বদেশ নির্মাণে উত্সাহ যুগিয়েছে।
বন্ধুরা, আজ তাহলে এ পর্যন্তই।এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন সবাই। আবার কথা হবে। (ইয়ু/আলিম)
| ||||