Web bengali.cri.cn   
জাপানের আগ্রাসন বিরোধী গান
  2015-08-03 18:21:03  cri


বন্ধুরা, ২০১৫ সাল হলো চীনের বিরুদ্ধে জাপানের আগ্রাসী যুদ্ধ ও বিশ্ব ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধ জয়ের ৭০ বছর পূর্তি। ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি চীনের দ্বাদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির সপ্তম অধিবেশনে ভোটের মাধ্যমে ৩ সেপ্টেম্বর চীনা জনগণের জাপান-বিরোধী যুদ্ধ জয়ের স্মরণ দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেছে। বিশ্ব ফ্যাসিবাদ-বিরোধী যুদ্ধে প্রাচ্যের প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে চীন এ বছরের ৩ সেপ্টেম্বর পেইচিংয়ে এক কুচকাওয়াজের আয়োজন করবে। এর উদ্দেশ্য হলো ইতিহাসকে মনে রাখা, মহান শহীদদের স্মরণ করা, শান্তির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া এবং সুন্দর ভবিষ্যত সৃষ্টি করা।

এ সম্পর্কে আজ থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। পাশাপাশি জাপান-বিরোধী যুদ্ধ নিয়ে যেসব সংগ্রামী গান রচনা করা হয়েছে, সেগুলোও পরিবেশন করব। আশা করছি স্বাধীনতা ও মুক্তির চেতনায় বিশ্বাসী বন্ধুরা তা পছন্দ করবেন।

প্রথমে শুনুন 'বিজয় উদযাপন' শিরোনামের গানটি। ১৯৪৩ সালে চীনের শেনশি প্রদেশের উত্তরাঞ্চল, কানসু প্রদেশ আর নিংসিয়ার পূর্বাঞ্চলের মহান উত্পাদন আন্দোলনের উত্তাল জোয়ার প্রবেশ করে। এ গানে সে মহান উত্পাদন আন্দোলনের দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। গানের কথা লিখেছেন হো চিং চি সুর করেছেন লি নি । আর গানটি গেয়েছেন কেন্দ্রীয় জাতীয় নৃত্যগীতি দলের গায়ক দল। গানে বলা হয়েছে, 'হাজার মাইল বজ্রপাত ও দশ হাজার মাইল বিদ্যুত্, এ মহা সুখবর প্রচার করে। জাপানি হানাদার আজ আত্মসমর্পণ করেছে। আমরা বিজয় উদযাপন করছি। প্রধান সেনাপতি চু দে  আদেশ দিয়েছেন, অস্ত্র নিয়ে ঘোড়ায় চড়ো, গ্রাম ও শহরে গিয়ে নতুন দেশ নির্মাণ করার।"

চীনা জনগণের জাপান-বিরোধী যুদ্ধকে দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধও বলা হয়। এটা হলো বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধকালে চীনা জনগণের জাপানি আগ্রাসন প্রতিরোধের সার্বিক যুদ্ধ। চীনা সেনাবাহিনী ও জনসাধারণ অনেক কঠিন পরিবেশে জাপানী আগ্রাসনকারীদের সঙ্গে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে লড়াই করেছেন এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদ-বিরোধী যুদ্ধে জয়ের জন্য লক্ষণীয় অবদান রেখেছেন। জাপান-বিরোধী যুদ্ধের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধের পরিবেশ ও জীবন নিয়ে অনেক গান রচিত হয়েছে। এ গানগুলো তত্কালীন সেনাবাহিনী ও জনসাধারণকে যুদ্ধের প্রেরণা ও উত্সাহ দিয়েছে। এ গানগুলো এখনো চীনে ব্যাপক জনপ্রিয়।

১৯৩১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর উত্তর-পূর্ব চীনে এক সামরিক সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক ঘটনা ঘটে। চীনের উত্তর-পূর্ব বাহিনী ও জাপানের কুয়ানতোং  বাহিনীর মধ্যে এ যুদ্ধ হয়। চীনের ভূখণ্ডে জাপানের নির্মিত দক্ষিণ মানছুরিয়ান রেলপথ বিস্ফোরণ করার ওজুহাতে শেনইয়াং শহর দখল করে আগ্রাসী সেনারা। এ ঘটনাকে ১৮ সেপ্টেম্বর অভ্যুত্থান বলা হয়। এ অভ্যুত্থান হবার পর চীন ও জাপানের দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হয়ে ওঠে। কয়েক বছর মধ্যে উত্তর-পূর্ব চীনের তিনটি প্রদেশ জাপানের কুয়ানতোং বাহিনী দখল করে নেয়। এ কারণে চীন সরকার ১৮ সেপ্টেম্বর দিনটিকে জাতীয় লজ্জা দিবস হিসেবে গণ্য করে।

বন্ধুরা, এবার শুনুন '১৮ সেপ্টেম্বর সংক্রান্ত নতুন গান'। এ গান হলো 'তোমার চাবুক রেখে দাও' নামক নাটকের একটি গান। এ নাটক রচিত হয়েছে ১৯৩৫ সালে। এটা জাপান-বিরোধী উদ্ধার আন্দোলনের এক বিখ্যাত নাটক। নাটকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে মধ্য চীনে নির্বাসিত বাবা ও তার মেয়ের জীবনের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে মনের কষ্ট প্রকাশ করেন। জাপান-বিরোধী যুদ্ধের পর এ গানটিও নাটকের সঙ্গে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। গানের কথা লিখেছেন ছুই ওয়েই, কাং মিং। সুর করেছেন লি ঈ। গেয়েছেন গোং সিয়াও মেই। গানে বলা হয়েছে, 'সরগামের পাতা সবুজ হয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর জাপানি হানাদার এসেছে। তারা প্রথমে বারুদখানা দখল করে, তারপর উত্তর সেনানিবাস দখল করে। তারা খুন ও অগ্নিসংযোগ করে। ১৮ সেপ্টেম্বর আবারো এসেছে। উত্তর-পূর্ব চীনে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠিত হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী অনেক সাহসী। লোহার মতো দৃঢ় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে নির্মূল করতে পারবে না জাপানের লক্ষ সেনা। ১৮ সেপ্টেম্বর আবারো এসেছে। ভিন্ন দলের লোক সবাই একমন নিয়ে কাজ করছে। একসাথে হারানো ভূমি পুনরুদ্ধার করবে এবং দেশ উদ্ধার করবে। চীনের ৪০ কোটি মানুষ দাঁড়িয়েছে আজ, হানাদার জাপানি সেনাদের চীন থেকে তাড়িয়ে দেবে।"

লু গো ছিছাও

১৯৩৭ সালের ৭ জুলাই জাপানি বাহিনী পেইচিংয়ে 'লু গো ছিয়াও অভ্যুত্থান' সৃষ্টি করে। তখন চীন-জাপান যুদ্ধ সার্বিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন শুনুন 'লু গো ছিয়াও রক্ষা করা' নামের গানটি। গানের কথা লিখেছেন সে খ । সুর করেছেন সিয়ান সিং হাই । গেয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্কেস্ট্রার গায়ক দল। গানে বলা হয়েছে, 'শত্রু যে জায়গা থেকে আসে, তাকে সে জায়গায় তাড়িয়ে দেবো। চীনা জাতি লোহার মতো দৃঢ় গোষ্ঠী। আমাদের এক ইঞ্চি মাটিও ছাড় দেবো না। যুদ্ধক্ষেত্রে সেনা নিহত হলে, জনসাধারণ যাবে। স্বামী নিহত হলে, স্ত্রী যাবে। শত্রু যে জায়গা থেকে আসে, সে জায়গায় তাড়িয়ে দেওয়া হবে।"

১৯৩১ সালে '১৮ সেপ্টেম্বর অভ্যুত্থানে'র পর জাপানি সাম্রাজ্যবাদ উত্তর-পূর্ব চীনের তিনটি প্রদেশ দখল করে নেয়, তারপর তারা সার্বিকভাবে চীনে আগ্রাসন যুদ্ধ শুরু করে, প্রচণ্ড নিষ্ঠুরতায় চীনা জনগণের ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে তারা।

১৯৩৬ সালের শরত্কালে চাং হান হুই সি আনে উত্তর-পূর্ব চীনের শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা করেন। শরণার্থীদের কাছ থেকে অনেক বেদনাদায়ক কথা শুনেছেন, তাদের কান্না দেখেছেন। তার মন প্রচণ্ড আঘাত পেলো। বিশেষ করে দেশপ্রেমিক জেনারেল ওয়াং ঈ চেনের অভিলিখন 'আমরা কবে সে সুন্দর মাতৃভূমি ফিরে যেতে পারবো? কবে মাটির নিচে আমাদের পূর্বপুরুষকে সান্ত্বনা দিতে পারবো? কবে আমার প্রিয় আত্মীয়স্বজন ও ভাই বোনকে সে দুঃখবেদনা থেকে উদ্ধার করতে পারবো?" এটা পড়ে চাং হাই হুই আর ঘুমতে পারেন না। তিনি 'সো হুয়া চিয়াং নদীর ওপর' নামে একটি গান লিখেন এবং সুর করেন। এ গান দ্রুত সিআন শহরের চার দিকে ছড়িয়ে পড়েছে এবং বেশ দ্রুত সারা চীনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এখন শুনুন কণ্ঠশিল্পী মো হুয়া লুনের  গাওয়া 'সোং হুয়াং চিয়া নদীর ওপর' নামে গান। গানের কথা এমন, "আমার বাড়ি উত্তর-পূর্ব চীনের সোং হুয়া চিয়া নদীর পাশে। সেখানে বন আছে, কয়লা খনি আছে। সেখানকার পাহাড়ে বিপুল পরিমাণের সয়াবিন ও সরগাম চাষ হতো। সেখানে আমার স্বদেশের লোক আছেন। সেখানে আমার বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন। ১৮ সেপ্টেম্বর, সে শোচনীয় তারিখ থেকে আমি সে অসীম ধনভাণ্ডার ত্যাগ করে ভবঘুরে হয়ে যাই। ভবঘুরে, ভবঘুরে, কবে আমার প্রিয় জন্মস্থানে ফিরে যেতে পারবো? কবে আমার অসীম ধনভাণ্ডার ফিরে পাবো? কবে আমার বাবা-মার সঙ্গে আবার মিলিত হবো?

টেলিভিশন নাটক 'সোং হুয়াং চিয়া নদীর ওপর'

জাপানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনের শিল্পী ও সাহিত্যিকরা অনেক সৃষ্টিশীল কর্ম করেছেন। তারা তাদের সংগ্রামী সাহিত্য দিয়ে সারা দেশে জনতার সংগ্রামকে উত্সাহিত করেছেন। 'বসন্তকাল ফেরত গান' হচ্ছে ১৯৩৫ সালে রচিত চীনের বিখ্যাত লেখক থিয়ান হান নাটক। এ নাটকের প্রধান চরিত্র শিক্ষক হোং আন শুন  ও শিক্ষিকা হুয়াং বি রু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রেমে পড়েছেন। কিন্তু তারা স্বদেশকে ভুলে যাননি। তারা সবসময় চিন্তা করেন, কবে স্বদেশে ফিরে বিয়ে করবেন এবং দেশের জন্য কাজ করবেন। আরেকজন শিক্ষক কাও ওয়েই হান  ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবাসী চীনা মেয়ে মেই নিয়াং পরস্পরকে ভালোবাসেন। মেই নিয়াংয়ের বাবার ব্যবসা ব্যর্থ হওয়ায় তাকে অন্য ব্যবসায়ীর ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চান। কিন্তু মেই নিয়াং তা চায় না। এ সময় ১৮ সেপ্টেম্বর অভ্যুত্থান ঘটে কাও ওয়েই হান, হোং আন শুন আর হুয়াং বি রু একসঙ্গে চীনে ফিরে গিয়ে জাপান বিরোধী যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধ মাঠে কাও ওয়েই হান ও হোং আন শুন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। কাও ওয়েই হান গুরুতর আহত হন, পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে যান। মেই নিয়াং চীনে ফিরে এসে 'মেই নিয়াং'র গান' শুনে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং পরবর্তীতে তাদের বিয়ে হয়। এ নাটকে প্রবাসী চীনাদের দেশপ্রেম বোধের পরিচয় ফুটে উঠেছে এবং তাদের অটুট প্রেমের প্রশংসা করা হয়েছে। এ নাটক মঞ্চে পরিবেশনের পর বিশেষ করে দেশে-বিদেশে প্রবাসী চীনাদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে। এবার শুনুন 'মেই নিয়াংয়ের গান'। গানের কথা লিখেছেন থিয়ান হান। সুর করেছেন নিয়ে আর। গেয়েছেন চাং ছুয়ান। গানের কথা এমন, "ভাই, আমাকে ভুলো না। আমি তোমার প্রিয় মেই নিয়াং। তুমি আমার বাসার জানালার পাশে বসে লাল রঙের সুপারি খেতে। আমি গিটার নিয়ে খেলতাম। তুমি গান গাইতে। আমরা সুদূর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছিলাম। ভাই, আমাকে ভুলো না। আমি তোমার প্রিয় মেই নিয়াং। তোমার জন্য আমি বাবা-মার কথা না শুনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ত্যাগ করে চীনে এসেছি। আমি আমার চোখের জল দিয়ে তোমার ক্ষত চিকিত্সা করবো। আমি, তোমার মেই নিয়াং।"

১৯৩৬ সালের গ্রীষ্মকালে চীনের উত্তর-পূর্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী 'মেয়ে আ ইন' শীর্ষ নাটকটি পরিবেশনা করেন। লেখক কুয়াং ওয়েই রেন  এ নাটকের জন্য 'মে মাসের তাজা ফুল' গানটি লিখেছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইয়া সু শি  এ গানের সুর করেছেন। এ গান প্রচারের পর দ্রুত সারা চীনে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা ব্যাপক প্রশংসা পায়। ১৯৫৯ সালে সুরকার ছু সি সিয়ান'যৌবনের গান' নামে চলচ্চিত্রের প্রধান গান হিসেবে বাছাই করেছেন। এবার শুনুন কেন্দ্রীয় অর্কেস্ট্রার গায়ক দলের গাওয়া 'মে মাসের তাজা ফুল' নামে গান। গানের কথা এমন, "মে মাসে তাজা ফুল ফুটেছে খোলা মাঠে। তাজা ফুলের নিচে শহীদদের রক্ত ঢাকা পড়েছে। এ মুমূর্ষু জাতিকে উদ্ধারের জন্য তারা অদম্য সংগ্রাম করেছেন। উত্তর-পূর্ব চীন পতন হয়েছে চার বছর। প্রতিদিন আমরা বড় কষ্টের মধ্যে আছি। স্বাধীনতা হারিয়েছে। শত্রুদের লোহার পা মহাপ্রাচীর অতিক্রম করে চীনের ভূভাগে এসেছে। মনের ক্ষোভ আর সহ্য করা যায় না। আমরা গর্জন করবো।"

 উত্তর-পূর্ব চীন জাপানি হানাদাররা দখল করার পর সেখানকার জনসাধারণ বাধ্য হয়ে চীনের মধ্যাঞ্চলে গিয়ে আশ্রয় নেন। সারা দেশের জনগণ হারানো ভূমি ফিরে পাবার দাবি জানায়। সুরকার রেন কুয়াং জাপান-বিরোধী শিল্প আন্দোলনে যোগ দেন। এরপর তার সঙ্গীত শৈলীর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। 'বাড়িতে ফেরার জন্য লড়াই করো' গানটি হলো সে সময় তার সৃষ্ট সবচেয়ে সফল একটি সঙ্গীত। এ গানের কথা লিখেছেন আন ও ।এ গানটিতে সে সময় জনসাধারণের সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটেছে। দ্রুতই 'বাড়িতে ফেরার জন্য লড়াই করো' এ কথাটা শ্লোগান হয়ে সারা দেশে প্রচলিত হয়ে ওঠে। বিংশ শতাব্দীর ৩০'র দশকে জাপান-বিরোধী গানগুলোর মধ্যে এ গানটি বেশ লক্ষণীয়। এখন শুনুন চীনের কেন্দ্রীয় গীতিনাট্য থিয়েটারের গায়ক দলের গাওয়া এ গানটি। গানটিতে বলা হয়েছে, 'বাড়িতে ফেরার জন্য লড়াই করো। জাপানি সাম্রাজ্যবাদীদের তাড়িয়ে দেবো। উত্তর-পূর্বাঞ্চল আমাদের। তারা আমাদের দেশবাসীকে হত্যা করেছে। আমাদের জমি জোর করে দখল করেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দেশবাসীরা তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াও। আমরা বিদেশিদের দাস হবো না। আমরা বাড়িতে ফেরার জন্য লড়াই করবো।'

তলোয়ার দিয়ে শত্রুদের মাখায় আঘাত দেওয়া

১৯৩৭ সালে '৭ জুলাই অভ্যুত্থান' চীনা জনগণ জাপানি আগ্রাসনকারীদের সার্বিক প্রতিরোধের বিরুদ্ধে শিঙ্গা বাজিয়েছে। তত্কালীন পেইপিং অর্থাত্ বর্তমান পেইচিংয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওয়ানপিং  নগরে মোতায়েন ২৯ নম্বর সেনাবাহিনী কুওমিনতাং পার্টির নির্দেশ উপেক্ষা করে তলোয়ারধারী দল গঠন করেছে। তারা সাহসের সাথে জাপানি হানাদারের বিরুদ্ধে লড়াই করতো এবং তাদের ওপর গুরুতর আঘাত হানতো। তাদের বীরত্ব চীনাদের যুদ্ধ বিজয়ে উত্সাহ দিয়েছে। তখন মাত্র ২৩ বছর বয়সী শিল্পী মাই সিন তলোয়ারধারী দলের দেশ রক্ষার কাজে গভীরভাবে মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি ২৯ নম্বর সেনাবাহিনীকে নিজের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য 'তলোয়ার মার্চ'রচনা করেন। ১৯৩৭ সালের আগস্টে শাংহাইয়ে গানটি প্রথমবার পরিবেশিত হওয়ার পর তা ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়। গানে চীনা জনগণে জাপানি হানাদার প্রতিরোধের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা এবং বিজয়ের আস্থা প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিরোধ যুদ্ধে এ গান উত্সাহব্যঞ্জক ভূমিকা পালন করেছে। গানের কথা এমন, 'তলোয়ার দিয়ে শত্রুদের মাথায় আঘাত দেবো। সারা দেশের ভাইরা, প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় এসেছে। আমাদের সামনে আছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, পিছনে আছে সারা দেশের জনসাধারণ। ভাইরা সাহসের সাথে সামনে এগিয়ে যাও। শত্রুদের নির্মূল করো।'

১৯৩৭ সালে '৭ জুলাই অভ্যুত্থানের' পর পান চিয়ে নোং ও লিউ শুয়ে আন শাংহাইয়ে 'মহাপ্রাচীরের গান' সৃষ্টি করেন। ১৯ বছর বয়সী গায়িকা চৌ সিয়াও ইয়ান প্রথমে উহান গায়ক দলের সঙ্গে এ গান গেয়েছেন। পরের বছরে তিনি ফ্রান্সে গিয়ে লেখাপড়া করেন। যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুরে এমি ডিস্ক কোম্পানির আমন্ত্রণে এ গানের ডিস্ক তৈরি করেন। তারপর গানটি আরো ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়। এ গান প্রবাসী চীনাদের মুগ্ধ করেছে। কেউ কেউ তাকে জাপান বিরোধী যুদ্ধের জন্য টাকাপয়সা ও সামগ্রী দান করেন। কেউ কেউ দেশে ফিরে এসে বিরোধী যুদ্ধে অংশ নেন। এখন শুনুন চাং মিং মিনের গাওয়া 'মহাপ্রাচীরের গান'। গানে বলা হয়েছে, "হাজার মাইলের সুদীর্ঘ মহাপ্রাচীর। মহাপ্রাচীরের বাইরে আমার মাতৃভূমি। সরগাম সমৃদ্ধ, সয়াবিনের সুগন্ধে ভরা। সোনার ভূমিতে সুন্দর জীবন। হঠাত্ দুর্যোগ ঘটে, জনগণের কষ্টের জীবন শুরু হয়। জন্মভূমি ত্যাগ করে মানুষ, বাবা-মা মারা যায়। নানা জায়গায় পালিয়ে আশ্রয় নিতে হয়। কখনো এ ঘৃণা ভুলবো না। দিন রাত কেবল চিন্তা করি, কবে বাড়ি ফিরে যাবো। আমরা প্রাণ দিয়ে লড়াই করবো, শত্রু যত শক্তিশালী হোক না কেনো। দশ হাজার মাইলে সুদীর্ঘ মহাপ্রাচীর। মহাপ্রাচীরের বাইরে আমার বাড়ি। চল্লিশ কোটি দেশবাসীর মন এক হলে নতুন মহাপ্রাচীর আরো দীর্ঘ হবে।"

বন্ধুরা, জাপান বিরোধী যুদ্ধ চীনে জানমালের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধের সময় জনসাধারণের জাতীয় শক্তি ও দেশপ্রেম অনেক বেড়েছে। যুদ্ধ বিজয়ে বিশ্বমঞ্চে চীনের মর্যাদা উন্নীত করেছে। আজকের এ অনুষ্ঠানে যুদ্ধ-সংগ্রামের ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ কয়েকটি গান আপনারা শুনেছেন। কেমন লাগলো আপনাদের? জানালে খুশি হব। (ইয়ু/তৌহিদ)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040