0831kangzhan.mp3
|
জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় চীনের বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিরা নিজ নিজ জায়গা থেকে অবদান রাখেন। তখন বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেন। এ সময় চীনের শিল্পীরা ছাত্রছাত্রীদের জন্য গান, নাটক ও উপন্যাস লিখেছেন।
১৯৩৪ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বামপন্থী ডিয়ানথোং চলচ্চিত্র কোম্পানি ১৮ সেপ্টেম্বর অভ্যুত্থানের পর চীনের ছাত্রছাত্রীদের জীবন নিয়ে 'থাও লি চিয়ে' নামে একটি চলচ্চিত্রের শুটিং করেন। এ চলচ্চিত্রের গানের নাম 'স্নাতক হওয়ার গান'। গানের কথা লিখেছেন থিয়ান হান, সুর করেছেন নিয়ে আর। এ চলচ্চিত্রে একদল যুবক ছাত্র স্নাতক হওয়ার আগে এক সাথে পার্টিতে এ গানটি গেয়েছেন। গানের উত্সাহব্যঞ্জক ছন্দ ও কথায় যুবকদের বুকের ভরসার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু চলচ্চিত্রের শেষের দিকে প্রধান চরিত্র জেলখানায় বন্দি হন। স্কুলের শিক্ষক তাকে দেখতে আসেন। সে সময় এ সুর আবার জেগে উঠে বেদনাদায়ক ভাব দর্শকদের মুগ্ধ করে। এ গান চীনের বিপ্লবের সময় বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিরাট প্রভাব সৃষ্টি করে। এ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথে অনেক যুবক 'স্নাতক হওয়ার গান' গাইতে গাইতে জাপানবিরোধী যুদ্ধ ফ্রন্টে চলে যান।
গানটির কথা এমন, 'সহপাঠিরা, উঠুন। দেশ রক্ষায় দায়িত্ব পালন করুন। শুনুন, চারদিকে জনসাধারণের কাঁন্না। দেখুন, দেশের মাটি হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা লড়াই করবো না আত্মসমর্পণ করবো? আমরা যুদ্ধের মাঠে প্রাণ দিবো। আমরা দাস হবো না। আজ আমরা একসাথে গান গাইবো। আগামীকাল আমরা জাতিকে উদ্ধার করার বিশাল শক্তি সঞ্চালন করবো। সহপাঠীরা, শক্তি দেখান, দেশ উদ্ধারের দায়িত্ব পালন করুন'। বন্ধুরা, এবার শুনুন 'স্নাতক হওয়ার গান'।
প্রিয় শ্রোতা, জাপানবিরোধী যুদ্ধের সময় চীনের হোপেই প্রদেশের লাই ইউয়ান জেলায় একজন নামকরা বীরের আবির্ভাব ঘটে। তার নাম ওয়াং আর শিয়াও। জাপানী আগ্রাসী বাহিনী পাহাড়ী অঞ্চলে হামলা করার সময় তিনি কয়েক হাজার গ্রামবাসীকে রক্ষার জন্য নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে শত্রুদের চীনা বাহিনীর ওত পেতে থাকা জায়গায় নিয়ে যান। শত্রুরা তা বুঝতে পেরে তাকে হত্যা করে। মৃত্যুর সময় তার বয়স মাত্র ১৩ বছর। বীর ওয়াং আর শিয়াওয়ের গল্প মুক্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনা জানার পর শিল্পী ফাং বিং এবং চিয়ে ফু দ্রুতই ওয়াং আর শিয়াওয়ের প্রশংসা করে একটি গান রচনা করেন। এ গানে ওয়াং আর শিয়াওয়ের বীরত্বের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।
গানে বলা হয়েছে, 'গরু এখনো পাহাড়ে ঘাস খাচ্ছে। কিন্তু ওয়াং আর শিয়াও কোথায় গেলো? তিনি নিজে খেলার জন্য কোথাও যান নি। ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে শত্রুরা পাহাড়ে প্রবেশের সময় পথ হারিয়ে ফেলে। আর শিয়াও গ্রামবাসীদের বাঁচানোর জন্য শত্রুদের নিয়ে আমাদের বাহিনীর ওত পেতে থাকা জায়গায় নিয়ে যান। যখন চারপাশে বন্দুকের শব্দ শোনা যায়, শত্রুরা বুঝতে পারে। তারা আর শিয়াওকে হত্যা করে। আর শিয়াও, আমাদের বীর। তোমার সাহসের কারণে গ্রামবাসীরা রক্ষা পেয়েছে। তোমার স্পর্শকাতর গল্প আমরা মুখে মুখে গাইতে থাকবো'।
'সংহতি হচ্ছে শক্তি' নামের গানটি ১৯৪৩ সালের জুনে চিনছাচি সীমান্ত অঞ্চলের এক গ্রামে রচিত হয়। এ গানের কথা লিখেছেন মু হোং, সুর করেছেন লু সু। এ গানে চীনা জাতির ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাপানী আগ্রাসন প্রতিরোধ করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা প্রকাশিত হয়েছে। গানে বলা হয়েছে, 'সংহতি হচ্ছে শক্তি। এ শক্তি লোহা ও ইস্পাতের মতো শক্ত। ফ্যাসিবাদের দিকে বন্দুকের গুলি ছুড়ি। সূর্যের দিকে, স্বাধীনাতার দিকে, নতুন চীনের দিকে এগিয়ে যাবো'। শুনুন 'সংহতি হচ্ছে শক্তি' নামের গানটি।
'মাইন লড়াই' হলো জাপানবিরোধী যুদ্ধের সময় চীনের মিলিশিয়া বাহিনীর এক ধরণের গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের পদ্ধতি। এই পদ্ধতি বিশেষ করে শানতুং প্রদেশের হাই ইয়াং অঞ্চলের বিপ্লবী সংগ্রামের ইতিহাসে উজ্জ্বল এক অধ্যায় রচনা করছে।
আট বছর স্থায়ী জাপানবিরোধী যুদ্ধে হাই ইয়াংয়ের মিলিশিয়ারা মোট ২ হাজার বার লড়াই করেছে। ১৫ হাজার শত্রুকে হত্যা করেছে। বিভিন্ন ধরনের ৬০০ অস্ত্র হস্তগত করেছে।
১৯৬২ সালে চীনের গণমুক্তি ফৌজের চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠান তাদের গল্প নিয়ে 'মাইন লড়াই' নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মান করে এবং ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এ চলচ্চিত্রের প্রধান গান 'মাইন লড়াই'ও ভীষণ জনপ্রিয় হয়। এ গানে বলা হয়েছে, 'পুরো পাহাড় হচ্ছে আমাদের যুদ্ধের ময়দান। আমরা হানাদার জাপানি বাহিনীকে নির্মূল করবো। ছোট নদীর তীরে, বড় রাস্তার পাশে, আমরা মাইন বসিয়ে প্রতিরক্ষার পর্দা নির্মাণ করি। মাইন বিস্ফোরণ হলে শত্রু রা কোথাও আশ্রয় নিতে পারবে না। আমরা স্বদেশকে রক্ষা করবো'।