জাপানবিরোধী যুদ্ধের সময় শানতুং প্রদেশের চি নিং ওয়েই শান হ্রদ ৱঅঞ্চলে রেলপথে গেরিলা খুব তত্পর ছিলো। তাদের কিংবদন্তির মতো বীরত্বগাথা সারা চীনে প্রচলিত। এ গেরিলা দল ১৯৪০ সালের ২৫ জানুয়ারি আট রুট বাহিনীর সুলু শাখা দলের নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এ গেরিলা দলের সদস্য ৩০০ জনের মতো। তারা রেলপথের লাইনে জাপানী বাহিনীর সঙ্গে নানা লড়াই করতো এবং সাফল্যের সঙ্গে লিউ শাও ছি, চেন ঈ, লো রোং হুয়ান প্রমূখ চীনা নেতাদের রক্ষা করতো। তখন জাপানী বাহিনী ও তাদের সহকারী সশস্ত্র দল তাদের খুব ভয় পেতো। তাদের এই গল্প নিয়ে 'রেলপথের গেরিলা' নামে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়। এ চলচ্চিত্রের প্রধান গান হলো 'আমরা প্রিয় পিপা বাজাই'। গানটিতে গেরিলা দলের সদস্যদের আশাবাদী ও বীরত্বপূর্ণ চরিত্র বর্ণনা করা হয়েছে। গানের কথা এমন, 'পশ্চিম দিকে সূর্যাস্ত হচ্ছে। ওয়েই শান হ্রদ নিরিবিলি। আমরা প্রিয় পিপা বাজিয়ে গান গাই। আমরা দ্রুতগতির রেলগাড়িতে আরোহণ করি। ঠিক যেন দ্রুত ঘোড়া চালানোর মতো। রেলস্টেশন ও রেলপথ হলো আমাদের শত্রু হত্যা করার শ্রষ্ঠ যুদ্ধের ময়দান। আমরা শত্রুদের আঘাত হানি ইস্পাতের ছুরির মতো। তাদের শেষ দিন আর দূর নয়'।
জাপানবিরোধী যুদ্ধের সময় চীনা জনসাধারণ সেনাবাহিনীকে যথাসাধ্য সমর্থন দিয়েছে। এ সম্পর্কিত গানও রয়েছে। শিল্পী আন পো শেনশি প্রদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি লোকসংগীতের ভিত্তিতে 'মুক্তিবাহিনীকে সমর্থন করার গান' রচনা করেন। এ গান এখনো শেনশি প্রদেশে প্রচলিত আছে। এ গানের কথা এমন, 'জানুয়ারি মাসে বসন্ত উত্সব। আমি সাহসী আট রুট বাহিনীকে শূকর, ছাগল পাঠাই। আমাদের সুন্দর জীবনের জন্য জেনারেল চু মহান উত্পাদন আন্দোলন করেছেন। তারা আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন। আমরা তাদের সমর্থণ ও শ্রদ্ধা করি'।
প্রিয় শ্রোতা, সুরকার সিয়ান শিং হাই ইয়ান আনে অনেক জনপ্রিয় গানের সুর করেছেন। ১৯৩৯ সালের মার্চে তিনি 'ফেব্রুয়ারির সুন্দর বসন্তের দৃশ্য' নামে একটি গানের সুর করেন। এ গানের ছন্দ বেশ মসৃণ এবং গানগুলো আন্তরিক। গানটিতে দক্ষিণ চীনের গভীর লোকসংগীতের ভাব রয়েছে। এ গানে জাপানবিরোধী যুদ্ধের সময় সীমান্ত অঞ্চলের জনগণের জাপানবিরোধী ফ্রন্টকে সমর্থন করার কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
এখন শুনুন কণ্ঠশিল্পী ইন সিউ মেইয়ের গাওয়া 'ফেব্রুয়ারির সুন্দর বসন্তের দৃশ্য' নামের গানটি। এ গানের কথা এমন, 'ফেব্রুয়ারির সুন্দর বসন্তের দৃশ্যে প্রতিটি পরিবার জমি চাষ করতে ব্যস্ত আছে। সকলে আশা করে প্রচুর ফলন হলে বেশি বেশি করে খাদ্য সামরিক বাহিনীকে দেবে। তারা এ খাদ্য খেয়ে শক্তিশালী হয়ে আবারো যুদ্ধ করবে। আমরা বর্তমানের কঠিন সময় অতিক্রম করে বিজয় অর্জন করবো'।
শ্রোতাবন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষে শুনুন 'নদ-নদী ও পাহাড় নতুন করে সাজানো' নামের একটি গান। জাপানবিরোধী যুদ্ধ জয়ের ৫৫তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিখ্যাত কন্ঠশিল্পী লো ইয়ু শেং এ গান গেয়েছেন। আমাদের দেশবাসী যেন অতীতকালের রাষ্ট্রীয় লজ্জার কথা ভুলে না যায় সে ব্যাপারেই এ গানে সর্তকতা করা হয়েছে। গানটি 'নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৪০ বছরে সবচেয়ে স্মরণীয় গান'-এর প্রথম পুরস্কার পেয়েছে। এখন শুনুন গায়িকা ওয়েই ওয়েই'র গাওয়া এ গানটি।
এ গানে বলা হয়েছে, 'হাজার মাইল মাটিতে ছুরির ছায়া রয়েছে। মনের ঘৃণা পুরো শহরটি জ্বলিয়েছে। পূর্ণিমার রাতে আত্মীয়স্বজন বাসায় ফিরে আসতে পারে না। ফুল ফোঁটার মতো সুন্দর জায়গায়ও শান্তি নেই। দেশের লজ্জা নির্মূল করার জন্য প্রাণ দিতেও দ্বিধা নেই। নদনদী ও পাহাড় নতুন করে সাজিয়ে আবার নতুন জীবন পাবে'।
বন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা শুনলেন জাপানী আগ্রাসনবিরোধী যুদ্ধ সম্পর্কিত কয়েকটি গান। আশা করছি, এ গানগুলো শোনার পাশাপাশি আপনাদের সে সময়ের ইতিহাসও কিছুটা জানাতে পেরেছি।
'সুরের ধারায়' আসর শোনার জন্য ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)