চীনের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য মেলা তথা কুয়াংচৌ বাণিজ্য মেলা এখন চলছে। সারা বিশ্বের ব্যবসায়ীদের আকর্ষণ করতে এবার কুয়াংচৌ বাণিজ্য মেলা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে বিশেষভাবে ব্যবহার করেছে। এটি এবারের মেলার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য বলা চলে।
কুয়াংচৌ মেলার মুখপাত্র লিউ চিয়ানজুন বিদেশী সাংবাদিকদের সাক্ষাত্কার দেন
বিশাল এলাকাজুড়ে বসেছে কুয়াংচৌ বাণিজ্যমেলা। দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাও অনেক। এ প্রসঙ্গে মেলার মুখপাত্র ও মহাসচিব লিউ চিয়ানজুন বললেন, "এবারের কুয়াংচৌ মেলার আয়তন ১১.৮ লাখ বর্গমিটার। এখানে ৫০টিরও বেশি প্রদর্শনকেন্দ্র রয়েছে এবং প্রায় দেড় লাখ ধরণের পণ্যদ্রব্য প্রদর্শিত হচ্ছে। ২১০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের প্রায় ২ লাখ ব্যবসায়ী এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছেন। কুয়াংচৌ মেলা এখন আর শুধু চীনের নয়, বরং বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক মেলায় পরিণত হয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কুয়াংতু সরকার যৌথভাবে কুয়াংচৌ মেলার আয়োজন করেছে।"
এবার মেলা সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণার জন্য সোসাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি প্রচলিত গণমাধ্যমের ব্যবহারও ছিল বরাবরের মতোই। এ সম্পর্কে লিউ চিয়ানজুন বলেন, 'মেলায় অংশগ্রহণকারী সংগ্রহের ক্ষেত্রে আমরা প্রচলিত গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর সাহায্য নিয়েছি। এ ছাড়া, বহু বছরের কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭০ লাখ ক্রেতা-বিক্রেতার তথ্য আছে আমাদের হাতে। প্রতিবার মেলায় অংশগ্রহণ করতে আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানাই। তাঁদের অনেকেই নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী চীনে এসে কুয়াংচৌ মেলায় অংশ নেন।'
কুয়াংচৌ মেলার বিদেশবিষয়ক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফু হুইছুয়ান
এদিকে অধিকসংখ্যক নতুন ব্যবসায়ীর কুয়াংচৌ মেলায় অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করতে চীনা বৈদেশিক বাণিজ্যকেন্দ্র ওয়েবসাইটের সাহায্য নেয়। কুয়াংচৌ মেলার বিদেশবিষয়ক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফু হুইছুয়ান এ প্রসঙ্গে বলেন, 'কুয়াংচৌ মেলার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হয়। গত ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত এর বন্ধু ও অনুসরণকারী দাঁড়ায় ১২ লাখ ৩০ হাজারে। আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে বিদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে একই সাথে আমাদের তথ্য পৌঁছে যায় মুহূর্তের মধ্যে। আমরা প্রতিদিন ফেসবুকে নতুন তথ্য বা ভিডিও আপলোড করি। এ ছাড়াও আমরা ওয়েবসাইটে সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করি এবং সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি।'
এবারের কুয়াংচৌ মেলার ওয়েবসাইট যোগাযোগের ক্ষেত্রে 'এক অঞ্চল, এক পথ' সম্পর্কিত দেশগুলোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ফু হুইছুয়ান বললেন, 'এবারের কুয়াংচৌ মেলায় নতুন অংশগ্রহণকারী বিশেষ করে 'এক অঞ্চল, এক পথ' সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অংশগ্রহণকারীদের উত্সাহিত করার বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। নতুন অংশগ্রহণকারীরা ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করালেই পেয়েছেন অন্তত ১০০ মার্কিন ডলারের কুপন। গত মার্চ মাস থেকে এ ব্যবস্থা কার্যকর হবার পর ২ হাজারেরও বেশি নতুন ব্যবসায়ী অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন। কুপন ছাড়াও, পাঁচ তারকা হোটেলে থাকা এবং ফ্রি বিমান টিকিট পুরস্কার হিসেবে পাবার সুযোগও রাখা হয়েছিল নতুনদের জন্য।'
কুয়াংচৌ বাণিজ্যমেলার ইতিহাস ৫৭ বছরের। প্রতিবছরই মেলা উন্নত হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রতিবছরই মেলায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাও বাড়ছে সমানতালে। কুয়াংচৌ মেলার প্রতি বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ীদের আকর্ষণ দিন দিন বাড়বে বৈ কমবে না বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। (ছাই/আলিম)
| ||||