চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং চীন এবং মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতাদের তৃতীয় সম্মেলনে অংশ নিতে ১৫ ডিসেম্বর সোমবার সার্বিয়ায় পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবার পর এটিই তার প্রথম সার্বিয়া সফর। এদিকে, গত ২৮ বছরে এই প্রথম কোনো চীনা প্রধানমন্ত্রী সার্বিয়ায় রাষ্ট্রীয় সফরে গেলেন।
প্রধানমন্ত্রী লি এমন একটা সময়ে সার্বিয়া সফরে গেলেন যখন দেশটির বাজারে ক্রমবর্ধমান হারে চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা করছে। এ ক্ষেত্রে যেসব চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠান ব্যাপক সফলতা পেয়েছে, হুয়া ওয়েই সেগুলোর অন্যতম। প্রায় দশ বছরের প্রচেষ্টার পর সার্বিয়ায় হুয়া ওয়েই একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।
হোয়া ওয়েই'র মোবাইল ফোন সার্বীয় বাজারে জনপ্রিয় হয়েছে
হুয়া ওয়েই হচ্ছে ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশকারী প্রথম চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠান। কোম্পানির সার্বিয়া শাখার প্রধান ব্যবস্থাপক ওয়েই ওয়েন ইউয়ান ইউরোপ ও সার্বিয়ার বাজারে তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করে বলেন, "আমি ২০০০ সালে বিদেশে যাই। প্রথম দিকে ইউরোপের খুব কম লোকই হুয়া ওয়েই'র নাম জানতেন। বলা যায়, তখন ইউরোপে হুয়া ওয়েই'র কোনো ব্র্যান্ড ছিল না, বাজারও ছিলো না। সেসময় হুয়া ওয়েই কোম্পানি ইউরোপের বিভিন্ন অপারেটরকে চীনে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের সামনে নিজস্ব প্রযুক্তি তুলে ধরতে শুরু করে। এভাবে কিছুকাল চলার পর ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো আমাদের প্রযুক্তি গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ হয়। ২০০৫ সালে হুয়া ওয়েই সার্বীয় টেলিযোগাযোগ কোম্পানির সাথেও কাজ করা শুরু করে।"
হুয়া ওয়েইর সার্বীয় শাখায় স্থানীয় কর্মী হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন দ্রাগানা প্যান্টিক। তিনি কোম্পানির মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগ দেন। কোম্পানির প্রতিটি পদক্ষেপ তার মনে দাগ কেটেছে। তিনি বলেন, "আমার সৌভাগ্য যে, গত দশ বছরে একটি আন্তর্জাতিক শিল্প-প্রতিষ্ঠানের দ্রুত বিকাশ ও স্থানীয় সমাজে মিশে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পেরেছি। আমি দেখেছি, এ কোম্পানি কীভাবে সার্বিয়ায় মাত্র একটি অফিস ও একজন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করে, বর্তমানে দুই শতাধিক কর্মীর এক বিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আমি মনে করি, হুয়া ওয়েই ব্রান্ডের পণ্য ব্যবহারকারীরাই প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের সবচেয়ে বড় সাক্ষী। কোম্পানির ব্র্যান্ড ধীরে ধীরে স্থানীয় ভোক্তাদের মন জয় করেছে। হুয়া ওয়েইয়ের কোনো নতুন মোবাইল বাজারে এলো কি না, তারা এখন তার খবর রাখেন। স্থানীয় সমাজ উন্নয়নে হুয়া ওয়েইর বিভিন্ন উদ্যোগ-আয়োজনের প্রতিও তাদের আগ্রহ আছে। বলা যায়, দশ বছরের প্রচেষ্টায় হুয়া ওয়েই কোম্পানি স্থানীয় সমাজের সাথেই মিশে গেছে।"
হুয়া ওয়েইয়ের সার্বীয় শাখায় স্থানীয় কর্মীর সংখ্যা ৮০ শতাংশের বেশি। হুয়া ওয়েই কোম্পানির কাজের গতিও সবসময় দ্রুত। কিন্তু সার্বীয় মানুষের জীবনের গতি অপেক্ষাকৃত মন্থর। কোম্পানির সামনে এটা একটি চ্যালেঞ্জ। মিস. মারিয়ানা স্টিভানোভিচের শিক্ষানবিস মেয়াদ মাত্র শেষ হলো। তিনি বলেন, "হুয়া ওয়েইর মতো বড় শিল্প-প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। তবে পরিশ্রমের মাধ্যমে আমি এখানকার কাজের গতির সাথে তাল মেলাতে শিখেছি এবং নিজের দক্ষতা মেলে ধরার সুযোগ পেয়েছি। এখানে আমি প্রায়শই বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করি, তাদের অনুরোধ রক্ষা করি, তাদের কাছে সাহায্য চাই। এর ফলে আমার ভাব বিনিময়ের ক্ষমতাও বেড়েছে।"
প্রতি বছরের গোড়ার দিকে কোম্পানি নববর্ষ পার্টির আয়োজন করে। যে-কোনো কর্মীর জন্মদিনে কোম্পানির পক্ষ থেকে জন্মদিনে কেক উপহার দেওয়া হয়। চীনের বসন্ত উত্সবে সকল কর্মী মিলে একসঙ্গে ডাম্প্লিং রান্না করেন। এ ছাড়া, সার্বিয়ার বিভিন্ন উত্সবেও স্থানীয় কর্মীরা তাদের চীনা সহকর্মীদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে থাকেন।
সার্বীয় শ্রেষ্ঠ ছাত্র চীনে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন
ইভানা এলিজোভিচ এর আগে শাংহাইয়ে একটি বিদেশি শিল্প-প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। খুব বেশি দিন হয়নি তিনি হুয়া ওয়েইতে যোগ দিয়েছেন। তবে, এখানকার কর্ম-পরিবেশের সঙ্গে তিনি দ্রুত খাপ খাইয়েও নিয়েছেন। ইভানা বলেন,"আমি মাত্র সেদিন শাংহাই থেকে ফিরেছি। ইতোমধ্যেই কয়েকজন নতুন সহকর্মীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। তারা খুব ভালো মানুষ, খুবই পরিশ্রমী।"
ওয়েই ওয়েন ইউয়ান মনে করেন, হুয়া ওয়েই সার্বিয়ায় যে সাফল্য অর্জন করেছে, তার পেছনে কোম্পানির দক্ষ কর্মীবাহিনীর অবদান সবচে বেশি। হুয়া ওয়েই স্থানীয় সমাজের কল্যাণকে নিজের টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে গণ্য করে। তাই, বিগত পাঁচ বছর ধরে সার্বীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে আসছে কোম্পানি। চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিযোগাযোগ বিভাগের দশ জন শ্রেষ্ঠ ছাত্রকে চীনে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে এ কোম্পানি। এ ছাড়া, চলতি বছর সার্বিয়া বন্যায় আক্রান্ত হবার পর বন্যার্তদের সাহায্যার্থেও সম্ভাব্য সবকিছু করেছে তারা।
ওয়েই ওয়েন ইউয়ান বলেন, হুয়া ওয়েইর সার্বীয় শাখা হচ্ছে বলকান অঞ্চলে এ কোম্পানির কেন্দ্র। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হুয়া ওয়েই সার্বিয়ায় ধাপে ধাপে দ্রুত উন্নয়নের পথ ধরে এগিয়ে গেছে। এখন এ কোম্পানি হচ্ছে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার টেলিযোগাযোগ খাতের প্রধান সরবরাহকারী এবং ক্রোয়েশিয়ার টেলিযোগাযোগ কোম্পানির কৌশলগত অংশীদার। এ ছাড়া, স্লোভানিয়ার ইন্টারনেট বাজারেও হুয়া ওয়েই গুরুত্বপুর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। ওয়েই ওয়েন ইউয়ান বলেন, "আমাদের আশা, বলকান অঞ্চলের টেলিযোগাযোগ খাতের নেতৃত্বের আসনে বসা। আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। আমাদের লক্ষ্য: পরবর্তী কয়েক বছরে টেলিযোগাযোগ খাতে প্রধান সাজসরঞ্জাম সরবরাহকারী হওয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সার্বিয়া ও নিকটবর্তী দেশগুলোর অন্যতম সরবরাহকারী হওয়া।"
সিআরআইএর সংবাদদাতার সঙ্গে কথা বলার সময় হুয়া ওয়েইর সার্বীয় শাখার কর্মীরা প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সার্বিয়া সফর প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, জানিয়েছেন তাদের প্রত্যাশার কথা। তারা বিশ্বাস করেন, ২৮ বছর পর চীনের কোনো প্রধানমন্ত্রীর সার্বিয়া সফর দু'দেশের বিনিময় ও শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। (ইয়ু/আলিম)
| ||||