0915jingji.m4a
|
'হাজার বছরেরবাণিজ্যিক নগর' কুয়াংচৌ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের আকর্ষণ করে থাকে। প্রতিদিন বিবিধ পণ্যদ্রব্য অন্যান্য দেশ থেকে কুয়াংচৌ হয়ে চীনের শহরগুলোতে যায় এবং চীনের ছোট-বড় রপ্তানিপণ্যগুলোও এখান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছায়। ভারতের অনেক ব্যবসায়ী কুয়াংচৌকে বেছে নিয়েছেন নিজেদের স্বপ্ন পূরণের জন্য।
ভারতীয় ব্যবসায়ী জ্যাক এখন কুয়াংচৌয়ে ব্যবসা করেন। ২০১০ সালে তিনি কুয়াংচৌ এসে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। কুয়াংচৌয়ের জীবন তার পছন্দ। তিনি জানালেন, সময় পেলে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোঁরায় খাবার খান, গল্প করেন। তিনি বলেন, "অবসরে আমি প্রায়শই বন্ধুদের সঙ্গে টেলিফোনে গল্প করি। প্রতিমাসে দু'এক বার তাদের সঙ্গে আড্ডায় মিলিত হই। কুয়াংচৌয়ে আমি বন্ধুদের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করি। কারণ, তাদের সঙ্গে থাকলে মনে হয় নিজের বাসায় আছি।"
ভারতীয় ব্যবাসয়ী জ্যাক চীনে আছেন
জ্যাকের অনেক বন্ধু আছে। তার ব্যবসার অংশীদাররাও তাঁর বন্ধু। তিনি ছয় বছর বয়স থেকেই বাবার ব্যবসার সাথে পরিচিত। ব্যবসা করার পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র ও নাটকও খুব পছন্দ করেন। চীন আসার আগে তিনি এক চলচ্চিত্র কোম্পানিতে পরিচালক ও সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ভারতীয় সিনেমায় অভিনয়ও করতেন। কিন্ত শেষ পর্যন্ত তিনি চীনের কুয়াংচৌ এসে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন। এ সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে জ্যাক বলেন, "কুয়াংচৌ এক বিশাল ব্যবসা বাজার এবং চীনের প্রধান বাণিজ্যিক শহর। এখানে নানা রকমের ক্রেতা আছে, বিবিধ বাজার আছে। এখানে ব্যবসার সুযোগ অনেক।"
কুয়াংচৌয়ে আছে বিশ্বের বৃহত্তম বস্ত্রবয়ন পণ্য আর পোশাকের কাঁচামালের বাজার। এ বাজারের আয়তন ৪ লাখ বর্গমিটার। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এখানে লেনদেন করেন। কুয়াংচৌয়ের নির্মাণ শিল্প ও পরিসেবা শিল্পের বৈদেশিক বাণিজ্যও বহু বছর ধরে দ্রুত উন্নতির গতি বজায় রেখেছে। তা ছাড়া, নৌ, বিমান ও সড়ক পরিবহণের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হওয়ায়, প্রতিবছর কুয়াংচৌ দিয়ে কোটি কোটি ইউয়ান মূল্যের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়।
কুয়াংচৌয়ের অসীম বাণিজ্যিক সুযোগ উপলব্ধি করে জ্যাক এখানে এসে নিজের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেন। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য তিনি প্রথমেই ভাষা সমস্যা সমাধানের কথা ভাবলেন। প্রতিদিন কাজের পর তিনি দু'এক ঘন্টা সমস ব্যয় করে চীনা ভাষা শেখা শুরু করেন। এখন তিনি চীনা ভাষা পড়তে, লিখতে ও বলতে পারেন।
ধীরে ধীরে চীনের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হবার পাশাপাশি, জ্যাক তাঁর ব্যবসার অংশীদারদেরসঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এভাবে তিনি নিজের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন এবং কুয়াংচৌ, ঈউ ও গুচেনে শাখা কার্যালয় খুলেন। জ্যাকের কোম্পানির কর্মীরা সবাই তার প্রশংসা করে। এক নারী কর্মী বললেন, "আমি মনে করি, ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ এবং আমাদের কাজ সমন্বয় করাসহ নানা ক্ষেত্রে তিনি খুব ভালো।"
"কাজের ব্যাপারে তিনি খুবই দায়িত্বশীল। কাজের সময় তিনি আহার-নিদ্রার কথা ভুলে যান।"
জ্যাক জানালেন, এখন চীনে ব্যবসা করা আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়েছে। আগে ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তাকে দু'তিন মাস পরপরই দেশে ফিরে যেতে হতো। বর্তমানে নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে, দীর্ঘ মেয়াদী ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে। এখন বছরে একবার দেশে গেলেই হয়। তিনি আশা করেন, নিজের প্রচেষ্টায়তিনি তার ব্যবসা চীন থেকে বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবেন। তিনি চীনের জীবন ভালোবাসেন। আগামী বছর তিনি তাঁর চীনা বান্ধবীকে বিয়ে করবেন বলে ঠিক করেছেন; তার ইচছা চীনে থেকে যাওয়া। সুযোগ-সুবিধা মতো পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকেও তিনি চীনে নিয়ে আসতে চান।
| ||||