Web bengali.cri.cn   
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়: বাংলাদেশে বিদ্যুত্ খাতের উন্নয়নে সমস্যা ও সম্ভাবনা
  2014-11-17 19:46:06  cri

জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে গত ১ নভেম্বর বিদ্যুত্হীন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ। ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতাল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, অফিস-আদালত, বাসাবাড়িতে বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ৬ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট হলেও, উত্পাদন নেমে আসে মাত্র ২০০ মেগাওয়াটে। বিদ্যুত্ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লেগে যায় পরদিন সকাল পর্যন্ত। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় সারা দেশের মানুষকে।

প্রথম দিকে বলা হয়েছিল ভারত থেকে আমদানি করা ৪৫০ মেগাওয়াট সঞ্চালন লাইনে সমস্যার কারণে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় ঘটে। এতে আশুগঞ্জ, ঘোড়াশাল ও চট্টগ্রাম বিদ্যুত্ কেন্দ্রের অনেকগুলো ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায়, ভারতের বিদ্যুত্ সঞ্চালনজনিত কোনো ত্রুটির কারণে বিপর্যয় হয়নি বাংলাদেশের জাতীয় বিদ্যুত্ গ্রিডে। অভ্যন্তরীণ সমস্যাই এর কারণ। ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করে বিদ্যুত্ মন্ত্রণালয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুত্ উত্পাদন ও সঞ্চালন ব্যবস্থার ভারসাম্যহীনতার কারণেই জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় ঘটেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদালয়-বুয়েটের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ আহমেদ বলেন, বর্তমানে জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন ক্ষমতা ৪ হাজার মেগাওয়াট। ২০০৭ সালের পর বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়লেও বাড়েনি সঞ্চালন ক্ষমতা। তাই জাতীয় গ্রিডের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন না করলে ভবিষ্যতে যে কোনো সময় আরো বড়ো বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

তবে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত্ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী বলেন, বিদ্যুত্ উত্পাদন ও সঞ্চালন একটি উচ্চ কারিগরি বিষয় হওয়ার কারণে এমন ঝুঁকি সবসময় থাকে। তার দাবি, বর্তমানে বিদ্যুত্ উত্পাদনের চেয়ে সঞ্চালন ক্ষমতা বেশি। বর্তমানে ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ সঞ্চালন করা হলেও জাতীয় গ্রিডের সক্ষমতা ১০ হাজার মেগাওয়াট বলে জানান তিনি। উত্পাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চালন ব্যবস্থারও উন্নয়ন হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

তাহলে কী কারণে জাতীয় গ্রিডে এতবড় বিপর্যয় ঘটেছে- সে প্রশ্ন থেকে যায়। দুর্ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি ৬ নভেম্বর পর্যন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। তদন্ত শেষ করতে কমিটি আরো ১০ কার্যদিবস সময় চেয়েছে। রিপোর্ট পেলে এর কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। জ্বালানি উপদেষ্টার মতো তিনিও দাবি করেন দেশের গ্রিড প্রটেকশন সিস্টেম যথেষ্ট শক্তিশালী। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর এবিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একটি টেকনিক্যাল অডিট কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। পাশাপাশি হাসপাতালসহ স্পর্শকাতর এলাকায় বিদ্যুতের নিজস্ব ব্যাকআপ সিস্টেম গড়ে তোলার কথাও বলেন তিনি।

এমনই এক পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুনিয়েছেন আশার বাণী। ৫ নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। সারাদেশে বাসাবাড়িতে সৌরবিদ্যুত্ সুবিধা পৌঁছানোর সংখ্যা ৩০ লাখ অতিক্রম করা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, ২০০৯ সালে তার সরকার গঠনের সময় দেশে সৌরবিদ্যুত্ ব্যবস্থা ছিল মাত্র ৩ লাখ। মাত্র ৫ বছরে তা ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ লাখ হয়েছে। আগামী তিন বছরে আরো ৩০ লাখ পরিবারে সৌরবিদ্যুত্ সুবিধা পৌঁছানো হবে বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুত্ সুবিধা পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দারিদ্র্য দূরিকরণে বিদ্যুতের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য অভ্যন্তরীণ উদ্যোগের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040