ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ-আইসিসিবি'র ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২৫ ও ২৬ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্মেলন। বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধার : এশিয়া প্রেক্ষাপট' শীর্ষক ও সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদরা অংশ নেন।
কুয়েতের উপপ্রধানমন্ত্রী ড. আব্দুলমোশেন আল-মেদেজি, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জি এল পেইরিস, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী রিশাদ বাথিউদ্দেন, মিয়ানমারের বাণিজ্যমন্ত্রী উ উইন মিয়ান্ত, ভুটানের অর্থমন্ত্রী লিওনপো নোরবু ওয়াংচুকও, নেপালের বাণিজ্যমন্ত্রী সুনিল বাহাদুর থাপা, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আব্দুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড, আতিউর রহমান, বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম, সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও নেপালের কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানেস জাট প্রমুখ সম্মেলনে অংশ নেন ও বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে এশিয়ার দুই অর্থনৈতিক শক্তি চীন ও ভারতের সম্পর্কের ওপর জোর দেন বক্তারা। আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান সম্মেলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এশিয়ার অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি নির্ভর করবে চীন ও ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ওপর। বৃহৎ দুটি দেশে ভোগের পরিমাণ ও আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়লে এশিয়ার অন্য দেশগুলো লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি এশিয়া জুড়ে রাজনৈতিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক সম্পর্ক বৃদ্ধি ও উন্নয়নের পদক্ষেপ জরুরি।
আইসিসিবি সভাপতি বলেন, মন্দা কাটিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে এশিয়ার অর্থনীতি দ্রুত মন্দা কাটিয়ে উঠছে বলে তিনি মনে করেন। তবে, মন্দার ক্ষতি কতটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে তার ওপর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেন আইসিসিবি সভাপতি।
সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বাড়াতে বাণিজ্য অবকাঠামো নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে পরামর্শ দেন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের মহাসচিব মুখিসা কিতুয়ি বলেন, বাংলাদেশ ও উন্নয়নশীল দেশগুলো বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এ বিনিয়োগ পেতে হলে বাণিজ্যিক অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। না হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ধরে রাখাটাই বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্চ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ঝুঁকির মুখে বলে সতর্ক করে দেন তিনি।
সমাপনী দিনে প্রথম সেশনের সভাপতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, জেনেভা বৈঠকে উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু কিছু উন্নত দেশ সে প্রতিশ্রুতি রাখছে না। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পও এ সুবিধা পাচ্ছে না। এজন্য প্রতিবেশিসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী।
ভুটানের অর্থমন্ত্রী লিওনপো নোরবু ওয়াংচুকও বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, দোহা রাউণ্ড ও বালি রাউণ্ডেও উন্নত দেশগুলো বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এ ব্যাপারে কোনো পক্ষ থেকেই কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
নেপালের বাণিজ্যমন্ত্রী সুনিল বাহাদুর থাপা সার্ক নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, অনেক আশা নিয়ে গঠিত হলেও এ অঞ্চলের ব্যবসাবাণিজ্যের মাত্র ৫ শতাংশ হয়ে থাকে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে। এ অঞ্চলের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক সহোগিতা সংস্থাগুলোকে জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। ঢাকা সম্মেলন এশিয়ার অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।
| ||||