জাতিসংঘের ৬৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে ২১ সেপ্টেম্বর ৮ দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান ও ভাষণের পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন, বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘে বাংলাদেশের যোগদানে ৪০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামর দেওয়া সংবর্ধনায় যোগ দেন শেখ হাসিনা। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন নরওয়ে, বেলারুশ, নেপাল ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে। ওই সব বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী।
২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেন শেখ হাসিনা। সম্মেলনে তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী না হলেও এর জন্য ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ থেকে ৩ ভাগ কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কার কথাও তুলে ধরেন তিনি। কার্বণ নিঃসরণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য সহায়তা বাড়াতে ধনী দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়ানোরও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
একই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দেওয়া সংবধর্না অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এদিন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এলনা সলবার্গের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে নরওয়েক আরো বেশি বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী আইসিটি খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং এ খাতে তার দেশের অধিক বিনিয়োগের আশ্বাস দেন।
২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলারুশের প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিয়াসনিকোভিচের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার সহায়তার ঘোষণা দেন বেলারুশ প্রধানমন্ত্রী।
২৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী আমেরিকান চেম্বার ও আমেরিকান বিজনেস কাউন্সিল আয়োজিত মধ্যাহৃ ভোজে অংশ নেন। সেখানে ভাষণে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে আরো বেশি বিনিয়োগে আহ্বান জানান। টিকফা চুক্তি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যের নতুন যুগের সূচনা করেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেলে দুদেশের ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবেন। এদিন নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। এসময় দুনেতা এ অঞ্চলে বাণিজ্য-বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বাড়াতে পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন।
২৬ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদরদপ্তরে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে শান্তি সম্মেলনে যোগ দেন। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশ এখন একটি ব্র্যান্ড বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে জাতিসংঘে বাংলাদেশের যোগদানের ৪০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘকে মুখ্য ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান এবং এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পূর্ণ সমর্থন কামনা করেন তিনি। বৈশ্বিক উন্নয়নের জন্য শান্তি বজায় রাখার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নত দেশগুলোতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পণ্যের কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দিতেও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এদিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত প্রথম বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ম্যানহাটনের নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে বৈঠকে দুনেতা দ্বিপক্ষীয় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে মতবিনিময় করেন।
পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর ও স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকরসহ দুদেশের অনিস্পন্ন সমস্যগুলো সমাধানে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন বলে আশ্বাস দেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভারত সবসময় পাশে থাকবে বলেও জানান নরেন্দ্র মোদি। সন্ত্রাস মোকাবেলায় দুই প্রধানমন্ত্রী একযোগে কাজ করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বাংলদেশ সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, শিগগিরই তিনি বাংলাদেশে সফর করবেন।
মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।
| ||||