Web bengali.cri.cn   
সার্ক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সূচকে এগিয়ে বাংলাদেশ
  2014-10-20 16:17:03  cri

২০০৬ সালে ১৩তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে সদস্য দেশগুলোর নেতারা সার্ক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি নির্ধারণ করেন। ওই পরিকল্পনায় দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চারটি ক্ষেত্রে ২২টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সে লক্ষ্য কতটা অর্জন করতে পেরেছে- তা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এসডিজি প্রতিবেদন। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল রোববার রাজধানীতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ সদস্য দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৯০ সালে যেখানে বাংলাদেশে ৫ বছরের নিচে প্রায় ৬৬ শতাংশ বা দুই তৃতীয়াংশ শিশু কম ওজনের ছিল, সেখানে ২০১১ সালে তা নেমে এসেছে ৩৬ শতাংশে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শিশু ও মায়ের পুষ্টি জরিপ- ২০১২ অনুযায়ী নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি, প্রজনন হার হ্রাস, হামের টিকা গ্রহণের হার বৃদ্ধি, ছোট পরিবার, খাদ্য উত্পাদন বৃদ্ধি ও ভিটামিন 'এ' সাপ্লিমেন্টের বিস্তৃতির কারণে এ সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ।

একই সময়ে দারিদ্র্যের হার ৫৭ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ২৬ শতাংশে। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনার এ অসাধারণ সাফল্য অর্জিত হয়েছে জিডিপিতে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের কারণে। আর জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সাফল্যের পিছনে কাজ করেছে ম্যানুফেকচারিং ও সেবাখাতের বিকাশ, কৃষিখাতে মজুরি বৃদ্ধি, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি. সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি জোরদার। দরিদ্র-বান্ধব প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ২০০৯-১০ সালের জাতীয় বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছিল জিডিপির ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর ২০১৩-১৩ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ।

এসডিজি লক্ষ্যমাত্রায় সামাজিক গোষ্ঠী হিসেবে দরিদ্রতর অঞ্চল ও দরিদ্র জোগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে। খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০১০ অনুযায়ী, দেশে চিকিত্সা সেবা প্রতিষ্ঠান ও চিকিত্সাকর্মীদের কাছে পৌঁছতে গড় সময় লাগে ৩১ মিনিট। শহরের ক্ষেত্রে তা ২৩ মিনিট আর গ্রামের ক্ষেত্রে লাগে ৩৩ মিনিট। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন- বিটিআরসি'র সাম্প্রতিক তথ্যমতে ২০১৩ সালে ৬৭ শতাংশ মানুষ সেলফোন ও শূণ্য দশমিক ৭৯ শতাংশ মানুষ ল্যাণ্ডফোন ব্যবহার করছে। মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ এখন বিদ্যুত্ সুবিধা পাচ্ছে। ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালে তা ছিল যথাক্রমে ৪৭, ৪৯ ও ৫৩ শতাংশ।

শিক্ষাখাতেও এসময়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশে। প্রাথমিক শিক্ষা ধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিট উপস্থিতির হার ছিল ৮৫ শতাংশ। এক্ষেত্রে বালকদের চেয়ে বালিকারা এগিয়ে। প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান, সময়মতো পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ প্রভৃতি শিক্ষা ক্ষেত্রে সাফল্যের পিছনে ভূমিকা রেখেছে।

প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বাজেটে সরকারি ব্যয় বেড়ে নয় দশমিক ৬১ শতাংশ হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ৩৭ শতাংশ এখন গ্রামকেন্দ্রিক। অর্থনীতির মূল ধারায় বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ। যে কারণে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক বলে মনে করা হয়।

এছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা কমানো, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়, শিক্ষার হার বাড়ানোসহ বেশির ভাগ সূচকেই বাংলাদেশ ভালো অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে, ক্রয়ক্ষমতার নিরখে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ এখনো সবার নিচে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এসডিজি প্রতিবেদন।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শামসুল আলম মনে করেন, সার্বিক লক্ষ্যপূরণে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল মনে করেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো। মোট দেশজ উত্পাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাই দারিদ্র্যের হারও কমে আসছে।

---মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040