Web bengali.cri.cn   
চীনের পিচ ফলের জন্মভূমি 'পিংকু'
  2014-08-26 19:40:03  cri

এখানকার নানা রকমের অনুষ্ঠান সত্যিই খুব আকর্ষণীয় ও মজার। আপনার কাছ থেকে এসব শুনে তো আমার এখনই আবার পিংকুতে যেতে ইচ্ছা করছে।

অবশ্য গরমকালে সেখানকার সি লিন গভীর খাদ ও বড় গুহাও খুব জনপ্রিয় । সাধারণত মানুষ সি লিন গভীর খাদে যাবার আগে বাড়ি থেকে কিছু খাবারদাবার সাথে নিয়ে যান। তারা সেখানে গাছপালায় ঘেরা নির্জন, নীরব, নির্মল পরিবেশে বসে খাবার খান,গল্প করেন। কখনও কখনও সবাই মিলে সেখানে বনভোজনেরও আয়োজন করেন।

কারণ আধুনিক যান্ত্রিক জীবনে এমন সুন্দর, শান্ত, নীরিবীলি জায়গা পাওয়া সত্যিই অনেক কঠিন। তাই যান্ত্রিক জীবনের কর্মব্যস্ততার সমস্ত ক্লান্তি দূর করার জন্য মানুষ বেছে নেন এই পিংকু জেলাকে।

ইয়া জি পাহাড়

 পিংকুর রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। তথ্য অনুযায়ী, প্রায় এক লাখ বছর আগে সেখানে সর্বপ্রথম মানুষের পদচারণাশুরু হয়। আনুমানিক প্রায় ৭ হাজার বছর আগে পিংকুতেকৃষি উৎপাদন শুরু হয়। আর এসময়টাতেই সেখানে মানুষ বসবাস করতে শুরু করেন। ঐতিহাসিক ঘটনাবহুল এই পিংকুতে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক স্থান। পাশাপাশি এর মিথলোজিক্যাল গল্পও মানুষকে আকৃষ্ট করে এই সুন্দর জায়গাটিতে ভ্রমণের জন্য।

'ইয়া জি পাহাড়' তিন শো মিটারেরও বেশি উঁচু। এই পাহাড়ে একটি মন্দির আছে। থাং রাজবংশের সময় তাওবাদী ঋষি সেখানে প্রথম সাধনা করতে শুরু করেছিলেন। ইউয়ান রাজবংশের সময় থেকে ইয়া জি পাহাড় রাজা, মন্ত্রী এবং ব্যবসায়ী সহ রাজধানীর মানুষদের তীর্থযাত্রা ও প্রার্থনার পবিত্র স্থানে পরিণত হয়।

প্রতি বছর ইয়া জি পাহাড়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরমেলা পালিত হয়। এই মন্দিরমেলা ৪০০ বছরের ইতিহাস আছে। বলা হয়ে থাকে চীনের উত্তরাঞ্চলে ৪টি বৃহত্তম মন্দিরমেলার মধ্যে এটি একটি। কিন্তু এই মন্দিরটি ১৯৪৯ সালের আগে ধ্বংস করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় লোকজন আবার এটিকে মেরামত করেন। ইয়া জি পাহাড় সম্পর্কে অনেক পৌরাণিক কাহিনী বা গল্প আছে।

ইয়া জি পাহাড়ে কোনো পানি নেই। কেন? জানা গেছে, আগে ইয়া জি পাহাড়ের উপরে অনেক পানি ও গাছপালা ছিলো। বলা হয় এটি খুবই সুন্দর এবং বিখ্যাত একটি জায়গা হিসেবে পরিচিত ছিল।

তাই 'ফান পাহাড়ের'দেবতা এবং 'ইয়া পাহাড়ের'দেবী এই পাহাড়কে খুব পছন্দ করতেন। তারা সেখানে বসতবাড়ি নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন।

ইয়া পাহাড়ের দেবীর চেয়ে ফান পাহাড়ের দেবতা ইয়া জি পাহাড়ে আগে পৌঁছালেন। এসময় তিনি একটি গদি পাহাড়ে রেখে অন্য জায়গায় গেলেন।

পরে ইয়া পাহাড়ের দেবীও সেখানে আসলেন। সেই গদি দেখেই তিনি বুঝতে পারলেন যে, তিনি একটু দেরি করে ফেলেছেন। কিন্তু এমন সুন্দর পাহাড় ও বন কেউ কাউকে ছেড়ে দিতে চাইলেন না।

এসময় ইয়া পাহাড়ের দেবীর মাথায় একটি বুদ্ধি আসে, তিনি চালাকি করে অন্য দিকে লুকিয়ে পড়লেন। পরে ফান পাহাড়ের দেবতা ফিরে আসলেন। ইয়া পাহাড়ের দেবী লুকিয়ে থাকা জায়গা থেকে বের হয়ে ধীরে ধীরে ফান পাহাড়ের দেবতার দিকে আসতে লাগলেন।

ফান পাহাড়ের দেবতা ইয়া পাহাড়ের দেবীকে দেখে বললেন, " আপনি কিসের জন্য এখানে এসেছেন?"

ইয়া পাহাড়ের দেবী তখন জিজ্ঞেস করলেন :"আপনি এখানে কেন এসেছেন ?"

"আমি এখানে বসতবাড়ি তৈরি করবো।"

কিন্তু আমিও এখানে বসতবাড়ি তৈরি করতে চাই "

"প্রথমে আমি এখানে পৌঁছেছি ,তাই আপনি অন্য জায়গায় চলে যান" ।

"না, কারণ প্রথমে আমি এখানে পৌঁছেছি ,তাই আপনি অন্য জায়গায় চলে যাবেন।"

"আপনি যে এখানে আগে পৌঁছেছেন,তার কোনো প্রমাণ আছে আপনার কাছে?"

"আপনি কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবেন?"

" দেখুন, আমার গদি ঐ গাছের নীচে রাখা আছে। এবার আপনার প্রমাণ দেখান?"

"তাহলে আপনি গদি তুলে দেখান?"

ফান পাহাড়ের দেবতা গদি তুলে দেখেন, গদির নীচে মাটিতে এক জোড়া নারীর জুতা আছে। কি আশ্চর্য ! তিনি ভাবেন।

ইয়া পাহাড়ের দেবী খুশি মনে বলেন: "আপনি বলুন, আপনি এখানে আগে পৌঁছেছেন?, কিন্তু আমার জুতা আপনার গদির নিচে কেন?"

ফান পাহাড়ের দেবতা বলেন: " যখন আমি এখানে পৌঁছেছি ,তখন আমি এই জুতা দেখতে পাই নি !"

"এটা আপনার চোখের সমস্যা!"

কিন্তু ফান পাহাড়ের দেবতা ভাল করেই জানেন যে, তাঁর চোখে কোনো সমস্যা নেই। তিনি বুঝতে পারেন দেবী মিথ্যা কথা বলছেন। তাই তিনি দেবীকে জিজ্ঞাসা করলেন: " আপনাকে কি ইয়া জি পাহাড়ে বসতবাড়ি তৈরি করতেই হবে?"

"জ্বি"।

" ঠিক আছে , এই পাহাড় এখন থেকে আপনার !"

একথা শুনে যখন ইয়া পাহাড়ের দেবী খুব খুশি হলেন, তখন ফান পাহাড়ের দেবতা হাতে একটা পাত্র নিয়ে বললেন, "এসো"।

হঠাত্ সারা পাহাড়ের পানি এই পাত্রে প্রবেশ করলো।

ইয়া পাহাড়ের দেবী উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন: " আপনি পানি নিয়ে যাবেন না, আপনি এটা করবেন না!"

ফান পাহাড়ের দেবতা কোনো উত্তর দিলেন না। তিনি গদি ও পাত্র নিয়ে পাহাড় থেকে নেমে গেলেন।

ইয়া পাহাড়ের দেবী তাড়াতাড়ি দেবতাকে অনুসরণ করে তাঁর কাছ থেকে পাত্রটি নিয়ে আসতে চাইলেন। দু'জনের মধ্যে টানাটানির পর পাত্রটি থেকে ফোটা ফোটা পানি নীচে পড়লো।

অবশেষে ফান পাহাড়ের দেবতা পানির পাত্রটি নিয়ে গেলেন।সেই সময় থেকেই ইয়া জি পাহাড়ে আর কোনো পানি নেই। শুধু পাহাড়ের তলানীতে একটি ছোট নদী আছে । এটি হলো ফান পাহাড়ের দেবতার পাত্র থেকে বেড়োনো পানি।

এই সব সুন্দর পৌরাণিক কাহিনী ইয়া জি পাহাড়কে আরো উজ্জ্বল ও জনপ্রিয় করে তুলেছে।

1 2 3
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040