Web bengali.cri.cn   
ব্রিটিশ প্রামাণ্যচিত্র পরিচালক ম্যালকম ক্লার্ক
  2015-08-21 19:34:04  cri



ব্রিটিশ প্রামাণ্যচিত্র পরিচালক ম্যালকম ক্লার্ক হচ্ছেন চীনা জনগণের পুরোনো বন্ধু। প্রায় প্রতি বছর তিনি শাংহাই চলচ্চিত্র উত্সবে অংশ নেন। চলতি বছরের জুন মাসে তিনি আমন্ত্রিত হয়ে শাংহাই চলচ্চিত্র উত্সবের প্রামাণ্যচিত্র ইউনিটের জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

এর আগে তিনি চীন-মার্কিন সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন বিষয় খুঁজে বের করার জন্য তার নেতৃত্বে শুটিং দলটি দু'বছরের মধ্যে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ক্যারিবিয়ান উপকূলে যান। 'দ্য কাইন্ড অ্যাঞ্জেল' নামে এই প্রামাণ্যচিত্রের নির্মাণ কাজ ২০১৫ সালের শেষ দিকে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ক্লার্কের মর্যাদা বরাবরই অস্কারের সঙ্গে সম্পর্কিত। তার একটি পূর্ণদৈর্ঘ্যের প্রামাণ্যচিত্র এবং দু'টি স্বল্পদৈর্ঘ্যের প্রামাণ্যচিত্র অস্কার পুরস্কার লাভ করে।

ক্লার্কের পেশাগত জীবন ১৯৭০ সালে শুরু হয়। তিনি আগে বিবিসিতে কাজ করতেন। তিনি সান্ধ্যকালীন সংবাদ পরিচালক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। তিনি প্রামাণ্যচিত্র, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তিনি হলিউডে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি চীনে কাজ করার দিকে মনোনিবেশ করেন।

তিনি প্রায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ধরনের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করছেন। এ সময়ে তিনি অনেক বিপজ্জনক মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেন এবং বিভিন্ন কঠোর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন।

তার বিখ্যাত শিল্পকর্ম 'স্টিফেন বিকো'তে দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত বৈষম্যবাদ-বিরোধী রাজনীতিবিদ স্টিফেন বিকোর হত্যাকাণ্ড তুলে ধরা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্লার্ক গোপনে এই প্রামাণ্যচিত্র শুটিং করেন এবং সরাসরি হত্যাকারীর সঙ্গে সংলাপ করেন। 'সন্ত্রাস ভূমি' নামে প্রামাণ্যচিত্র শুটিং করার প্রক্রিয়ায় তিনি ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসীদের 'ডেথ স্কোয়াড'র ভেতরে গিয়ে তাদের পরিচালনার নিয়ম জানেন।

'দ্য কাইন্ড অ্যাঞ্জেল' প্রামাণ্যচিত্র প্রসঙ্গে ক্লার্ক বলেন, 'আমার এই প্রামাণ্যচিত্রের শুটিং কাজ শেষ হয়নি। আমি কিছু মজাদার ঘটনার মাধ্যমে বিশ্বের কাছে বর্ণনা করতে চাই যে, চীন কী রকম একটা দেশ এবং একবিংশ শতাব্দীতে চীনের উন্নয়নের দিক কেমন হবে। আমার এই প্রামাণ্যচিত্রে আমি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে অন্বেষণ করতে চাই।'

ক্লার্ক মনে করেন, 'চীন সম্পর্কিত একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করতে চাইলে অবশ্যই বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হবে। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীনের তত্পরতা ছড়িয়ে রয়েছে। আমি আমার এই প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে পশ্চিমা দর্শকদের কাছে তুলে ধরতে চাই যে, চীন একটি চমত্কার, মজাদার এবং হুমকিহীন দেশ।'

ক্লার্কের ধারণায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের একটি সম্ভাব্য পরিসমাপ্তি আছে, তা হলো সহযোগিতার মাধ্যমে পারস্পরিক কল্যাণ বাস্তবায়ন করা।

ক্লার্ক বলেন, 'দ্য কাইন্ড অ্যাঞ্জেল' প্রামাণ্যচিত্রে বিশ্বের কাছে চীনের উন্নয়ন প্রদর্শিত হবে। যেমন, সম্প্রতি চীনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' নীতি। আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ক্লার্ক আরেকটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করতে চান। এতে 'রেশমপথ'র পার্শ্ববর্তী দেশ এবং এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কোন্নয়ন তুলে ধরা হবে।

ক্লার্কের ধারণায়, চীনা জনগণের প্রতি মার্কিনীদের জানাশোনার তুলনায় মার্কিন জনগণের প্রতি চীনা জনগণের জানাশোনা আরো বিশাল ও গভীর। অনেক পশ্চিমা জনগণের কাছে চীন একটি ধাঁধার মতো দেশ। বর্তমানে অনেক পশ্চিমা লোক চীনকে ভয় করেন। তারা বুঝতে পারেন না, কেন চীন এত দ্রুত গতিতে উন্নয়ন করছে। তার এই প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কাছে পৌঁছাতে চান যে, চীন তোমাদের কল্পনার মতো ভয়ঙ্কর একটি দেশ নয়।

চীনের প্রামাণ্যচিত্র প্রসঙ্গে ক্লার্ক বলেন, 'আপ দ্য ইয়াংজে' প্রামাণ্যচিত্র আমার মনে গভীর দাগ কেটেছে। চীনের প্রামাণ্যচিত্র পরিচালকরা শ্রেষ্ঠ। তাদের পরিচালিত চলচ্চিত্রের গুণগত মানও অনেক উচ্চ পর্যায়ের। তবে মাঝেমাঝে আমি আশা করি, তাদের আরো সুগভীরে বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করা উচিত্ এবং মানুষের মনকে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।'

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রামাণ্যচিত্র শুটিং করার জন্য ক্লার্ক নিয়মিত চীনে আসেন। তিনি বলেন, 'গেল কয়েক বছরে প্রামাণ্যচিত্র শুটিং করার ক্ষেত্রে চীনের অনেক নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে এখন পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। অনেক প্রামাণ্যচিত্র চীনের সমাজের ওপর দৃষ্টিপাত করে এবং সমাজের কিছু সমস্যা উন্মোচন করা শুরু করে।'

ম্যালকম ক্লার্কের পরিচালিত 'দ্য লেডি ইন নাম্বার সিক্স: মিউজিক সেভড মাই লাইফ' প্রামাণ্যচিত্রটি ২০১৩ সালে অস্কার পুরস্কার লাভ করে। এ প্রামাণ্যচিত্রের প্রধান চরিত্র হচ্ছেন তখন ১০৯ বছর বয়সী পিয়ানো বাদক অ্যালিস হার্জ সোমার। নম্বর ৬ ছিলো নাত্সি শিবিরে আটকে পড়া সেই জেলখানার নম্বর। তার এই শিল্পকর্মের প্রধান নারী চরিত্র অ্যালিস প্রসঙ্গে ক্লার্ক বলেন, 'আসলে প্রথমে আমার এই প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করার কোনো ইচ্ছা ছিলো না। কারণ আগে আমি নাত্সির ব্যাপক হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত 'প্রিজনার অব প্যারাডাইজ' প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছি। এ ধরনের প্রামাণ্যচিত্রের বিষয় একটু ভারী। তাই আমি শুনেছি, অ্যালিস হচ্ছেন হত্যাকাণ্ডে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া নারী। তাই আমি তাকে কেন্দ্র করে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করি। ৯ মাস পর লন্ডনে আমি অ্যালিসের সঙ্গে দেখা করি এবং তার সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট গল্প করি। তারপর আমি নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি। অ্যালিস খুবই স্মার্ট এবং রসিক একজন মানুষ। আমি মনে করি, তাকে কেন্দ্র করে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র অবশ্যই ভালো হবে, সফল হবে। ।

একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে ভালো একটি গল্প প্রসঙ্গে তার সহজাত অনুভূতি আছে। তিনি বুঝতে পারেন, কোন ধরনের গল্পের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ আছে এবং কোন গল্প দর্শকেরা পছন্দ করেন না।

তিনি বলেন, কেবল ভালো একটি বিষয়ই বা গল্পই যথেষ্ট নয়। সঠিক পদ্ধতিতে শুটিং করতে হবে। যেমন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সম্পর্কিত একটি চলচ্চিত্রে কেবল দু'জন বসে বসে আলাপ-আলোচনা করলে তা অনেক বিরক্তিকর হবে। 'দ্য লেডি ইন নাম্বার সিক্স: মিউজিক সেভড মাই লাইফ' প্রামাণ্যচিত্রের মতো চলচ্চিত্রের বিষয় একটু ভারী হলেও এর বর্ণনা করার পদ্ধতি হালকা, ফলে দর্শকেরা এ ধরনের চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পছন্দ করেন। আসলে শুটিং করার পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শুটিং করার প্রক্রিয়ায় সম্মুখীন আর্থিক সংকট প্রসঙ্গে ক্লার্ক বলেন, 'এখন ইন্টারনেট প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতাদের জন্য অনেক ভালো সুযোগ-সুবিধা বয়ে এনেছে। অনেক পুঁজি বিনিয়োগকারীরা ইন্টারনেটে সঙ্গতিপূর্ণ প্রকল্প খুঁজে বের করেন। তবে একটা বাস্তবতা হলো, আমি অনেক লম্বা সময় ধরে চলচ্চিত্রাঙ্গনে রয়েছি। এ সময়ে আমার সঙ্গে অনেকের পরিচয় হয়েছে।

তাই অন্য একজন ২৫ বছর বয়সী তরুণ এবং আমি যদি একই সঙ্গে বিশাল একটি পুঁজির জন্য আবেদন করি তাহলে আমি আগে টাকা নিতে পারি। সেই তরুণ আমার চেয়ে বুদ্ধিমান হলেও আমি তা পেয়ে থাকি। কারণ পুঁজি বিনিয়োগকারীদের ধারণায় আমি তরুণদের চেয়ে আরো আস্থাশীল।'

ক্লার্ক মনে করেন, কখনও চলচ্চিত্রের গুণগত মানের সাথে আপোষ করা ঠিক না। তিনি বলেন, যদি আপনার কাছে টাকার পরিমাণ সীমিত হয় এবং আপনি কেবল এই টাকা দিয়ে ৭টি কাজ করতে পারেন, তাহলে তাই করবেন। আপনার মাথায় ১০টি ভালো চিন্তা-ধারা থাকলেও দ্বিধা না করে অন্য তিনটি চিন্তা পরিত্যাগ করবেন এবং মনোযোগ দিয়ে বাকী ৭টি কাজ ভালোভাবে করবেন। একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রের গুণগত মানের ওপর দৃষ্টিপাত না করলে আপনি ব্যর্থ হবেন।

ক্লার্ক মনে করেন, ভালো একটি প্রামাণ্যচিত্র এই সুপরিচিত বিশ্বের অন্য দিক বা খারাপ দিক তুলে ধরতে এবং একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এই বিশ্বকে দেখার ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে সক্ষম। (লিলি/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040