Web bengali.cri.cn   
বিভিন্ন চলচ্চিত্রের খলনায়ক বা চালবাজ চরিত্র
  2015-07-23 11:07:01  cri



আসলে প্রায় সব ধরনের চলচ্চিত্রেই খলনায়ক, চালবাজ ইত্যাদি বিভিন্ন চরিত্র দেখা যায়। মূলত পরিচালকের হাতে এসব চরিত্র চলচ্চিত্রের কাহিনী এগিয়ে নেওয়া বা কাহিনী পরিবর্তনের এক যাদুকরী অস্ত্র।

বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রের তালিকার ওপর দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, চলচ্চিত্রের পর্দায় হত্যাকারী, মাস্তানি, মনস্তত্ত্ব ইত্যাদি সম্পর্কিত কালজয়ী চরিত্রের র‍্যাংকিং নিয়ে তেমন বিতর্ক নেই। তবে মানুষের মনে গভীর দাগ কাটা কালজয়ী চালবাজ চরিত্রের সংখ্যা তেমন বেশি নয়। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, নানান চলচ্চিত্রে চালবাজ চরিত্রের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই এসব চরিত্রের সংখ্যা আমরা হিসেব করতে পারি না এবং মনেও রাখতে পারি না।

চিত্রনাট্যকার এবং চলচ্চিত্র পরিচালক উভয়ই চলচ্চিত্রে চালবাজ চরিত্র যোগ করতে পছন্দ করেন। আসলে চলচ্চিত্রে হত্যাকারী যদি মানুষকে হত্যা না করেন তবে তাকে হত্যাকারী বলা হবে না, সন্ত্রাসী বা মাস্তানি চরিত্র যদি তাদের চরিত্রের ধরণ অনুযায়ী কাজ না করেন তবে তাকে সন্ত্রাসী বা মাস্তান বলা হবে না।

এসব চরিত্র অবশ্য সকল চলচ্চিত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তবে এসব চরিত্রের তুলনায় চালবাজ চরিত্র একটু ভিন্ন। চলচ্চিত্রে চালবাজ ছলচাতুরীর মাধ্যমে অন্যদের অর্থ, সম্পত্তি ও প্রাণ ছিনিয়ে নিতে পারেন।

বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রে বিভিন্ন ধরনের চালবাজ থাকেন। চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক মূলত চলচ্চিত্রে সংঘর্ষ সৃষ্টি এবং কাহিনী বিপরীত দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কৌশল হিসেবে এসব চরিত্র অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ব্যবহার করেন।

'ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান' চলচ্চিত্র হলো সম্ভবত চালবাজ সম্পর্কিত সবচেয়ে কালজয়ী একটি চলচ্চিত্র। এ চলচ্চিত্রের কাহিনী একদিকে যেমন ভীষণ আকর্ষণীয়, অন্যদিকে এর দু'জন প্রধান অভিনেতা দারুণ সুদর্শনও। লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও অভিনীত ফ্রাঙ্ক চরিত্র জন্ম থেকেই চালবাজ। তিনি যেমন মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে মানুষকে মুগ্ধ করতে পারেন, বিমান চালকের ভান করতে পারেন, আবার নিজেকে হাসপাতালের একজন চিকিত্সক হিসেবেও নিজেকে তুলে ধরতে পারেন।

হাসপাতালে একজন মেয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মেয়েটি তার সুদর্শন মুখ দেখে তাকে ভালোবেসে ফেলেন। মেয়ের বাবার সাহায্যে ফ্রাঙ্ক সরকারি অভিশংসকের সহকারীতে পরিণত হন। এসব ঘটনার পরপরই এফবিআইয়ের পর্যবেক্ষক দল তার ওপর দৃষ্টিপাত করেন। তারা লুকোচুরি খেলা শুরু করেন।

আসলে সুন্দর চেহারা, সুন্দর অভিব্যক্তি ইত্যাদি হলো চালবাজদের ছলচাতুরীর একটি সুন্দর ভিত্তি। একজন চালবাজ চরিত্রের ভাবমূর্তি সৃষ্টি করা এবং চালবাজির কাহিনী লেখা হলো প্রত্যেক চিত্রনাট্যকারের বিশেষ এক ধরনের ক্ষমতা।

বলা যায়, ভালো একজন চালবাজ খুব সুন্দরভাবে মানুষের মন বুঝতে পারেন। তাদের ধৈর্য এবং সূক্ষ্ম মন আছে। তারা অন্য মানুষের মনস্তাত্ত্বিক গতিবিধি দেখতে পারেন। চলচ্চিত্রে একজন চালবাজ মাঝেমাঝে গোটা এফবিআইকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

চালবাজ সম্পর্কিত চলচ্চিত্রে দর্শকদের চোখের সামনে কেবল এক একটি সূক্ষ্ম ছলচাতুরীর কৌশল তুলে ধরা ছাড়াও, মানুষের চরিত্রের নানান দিকের গভীর পর্যবেক্ষণও তুলে ধরা হয়। চলচ্চিত্রে চালবাজদের চরিত্রের সন্দেহজনক বিষয় ও মজা ছাড়াও, তাদের ছলচাতুরীর ধরন ও পর্যবেক্ষণ দর্শকদের কাছে তুলে ধরা হয়। আসলে এর পিছনেও নানান ঘটনা রয়েছে। আর সেসব ঘটনাগুলোও পরিচালক দর্শকদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেন অনেক সময়, যেন এর মাধ্যমে মানুষ জীবনের নানান ঘটনা বুঝতে পারেন, জানতে পারেন এবং নিজেদের সতর্ক করতে পারেন।

চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে ইরানিদের বিভিন্ন বিষয়ের উপর খেয়াল রাখতে হয়। তাদের সৃষ্ট চালবাজ চরিত্ররা হলিউডের চালবাজ চরিত্রদের তুলনায় ব্যতিক্রম।

ইরানের 'ক্লোজ- আপ' চলচ্চিত্রটি একটি সত্য সংবাদের উপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়। চলচ্চিত্রের প্রধান পুরুষ চরিত্র হোসেইন সাবজিয়ান একজন বেকার চিত্রশিল্পী। ছোটবেলা থেকে তিনি শিল্প চর্চা পছন্দ করেন। ইরানের নামকরা চলচ্চিত্র পরিচালক মোহসেন মাখমালবাফের সঙ্গে তার চেহারার অনেক মিল রয়েছে। তাই তিনি মাখমালবাফের ভান করে ধনীদের আস্থা অর্জন করেন। তিনি ধনীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এভাবে তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেক সন্তোষ প্রকাশ করেন।

অবশেষে একদিন এ ঘটনা উন্মোচিত হয়। চিত্রশিল্পী আদালতে হাজির হতে বাধ্য হন। আদালতে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়ায় তিনি নিজের দয়ালু প্রকৃতিতে ফিরে আসেন। তিনি ধনীদের সাথে প্রতারণার কারণে অনেক দু:খ প্রকাশ করেন। অবশেষ তাকে ক্ষমা করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ বাতিল করা হয়। সাবজিয়ান সত্যিকার মাখমালবাফের সঙ্গে দেখা করেন।

'ক্লোজ-আপ' চলচ্চিত্রে অপেশাদার একজন চালবাজের ভাবমূর্তি তুলে ধরা হয়। এভাবে চালবাজ এ চিত্রশিল্পীর মাধ্যমে ইরানিরা আত্মপর্যালোচনা করার সুযোগ পান।

'দ্য ট্রুম্যান শো' চলচ্চিত্রের প্রধান পুরুষ চরিত্র ট্রুম্যান জন্ম থেকেই এক বিশাল কেলেঙ্কারির মধ্যে বাস করেন। আসলে তার বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীসহ আশেপাশের কেউ-ই চালবাজ নন। তবে তারা অভিনেতা-অভিনেত্রীর পরিচয়ে প্রতারণামূলক আচরণ করেন। ট্রুম্যান রিয়েলিটি শো অনুষ্ঠানের জন্য জন্মগ্রহণ করেন। ৩০ বছর পর তিনি আবিষ্কার করেন যে, তিনি একটি বিশাল স্টুডিওতে বাস করছেন।

চলচ্চিত্রের শেষে এসব ঘটনা আবিষ্কার করার পর ট্রুম্যান ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। তিনি বিনাদ্বিধায় বর্তমানের সবকিছু পরিত্যাগ করে স্বাধীন জীবনের খোঁজে প্রচেষ্টা চালান। আসলে ছলচাতুরী বা মিথ্যা ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গল্প রয়েছে। কিছু কিছু চলচ্চিত্রে দেখা যায়, ছলচাতুরী বা মিথ্যা গল্প মানুষের জন্য কিছু আশা-আকাঙ্ক্ষাও তৈরি করে।

'দ্য লাইফ অব ডেভিড গেল' চলচ্চিত্রে একটি চমত্কার কেলেঙ্কারি তুলে ধরা হয়। মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতাকারী অধ্যাপক ডেভিড গেল এবং তাঁর সহকর্মী একসঙ্গে একটি নকল হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সৃষ্টি করেন। চলচ্চিত্রের শেষে তিনি নিজের মৃত্যুর অবিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড ব্যবস্থাপনার প্রতি জনগণের আত্মসমালোচনা জাগ্রত করেন।

ইতালির বিখ্যাত চলচ্চিত্র 'লা ভিটা ই বেলা'র প্রধান চরিত্রের বাবা গুইদো তার ছোট ছেলের জন্য একটি সুন্দর মিথ্যা গল্প রচনা করেন। ছোট ছেলের মনে যুদ্ধের ছায়া এড়ানোর জন্য বাবা ইহুদি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বাস করা জীবনকে একটি খেলা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বাবা ছেলেকে বলেন, যারা খেলার নিয়ম অনুযায়ী এক হাজার পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারেন তারা একটি সত্যিকার ট্যাঙ্কে বসতে পারেন। চলচ্চিত্রের শেষে বাবা ক্যাম্পে মারা যান। দেখা যায়, বাবার কথা বলার মতোই ছেলে একটি সত্যিকার ট্যাঙ্কে বসে আছে।

হয়তো অধ্যাপক ডেভিড এবং বাবা গুইদোর মিথ্যা কথাকে আমাদের ক্ষমা করা উচিত্। তাদের বলা মিথ্যাকে নিশ্চয়ই আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে পারি। যেন 'বিগ ফিস' চলচ্চিত্রের বাবার মতো। 'বিগ ফিস' চলচ্চিত্রে ছোটবেলায় ছেলে বাবার বানানো নানা গল্প শুনতে খুব পছন্দ করে। তবে বড় হয়ে ওঠার পর সে বাবার বানানো গল্পকে ঘৃণা করতে থাকে। তার ধারণায় বাবা একজন দাম্ভিক ব্যক্তি। তবে বাবার মৃত্যুর আগে বলা রূপকথার গল্পকে সে গ্রহণ করে। বাবার বলা এ গল্পের মাঝেই সে নিজের জীবনের শান্তি খুঁজে বেড়ায়।

'বিগ ফিস' চলচ্চিত্রে বাবার বলা মিথ্যা গল্প আসলে মিথ্যা নয়। তিনি জীবনের বাস্তবতাগুলোকে ভিন্নভাবে গল্পের মাধ্যমে বর্ণনা করেন। তিনি সাদামাটা এই জীবনে কিছু রং, কিছু আলো, কিছু রোমান্টিকতা যোগাতে চান। তার মিথ্যা গল্পে আমরা গভীরভাবে মগ্ন থাকি এবং মুগ্ধ হই। (লিলি/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040