Web bengali.cri.cn   
সময়কে অতীতে নিয়ে যাওয়া সম্পর্কিত চলচ্চিত্র 'মিস গ্র্যাননি'
  2015-07-02 09:27:10  cri



'মিস গ্র্যাননি'চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র হলেন একজন বৃদ্ধ নারী। তার নাম উ মো শুন। তিনি একাএকা কঠোর পরিশ্রম করে নিজের ছেলেকে লালনপালন করেন। মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম আর যত্নে এই ছেলেটি একদিন বড় হয়ে উঠেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হন। বলা যায়, ছেলেকে একজন অধ্যাপক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে উ মো শুনের কাছে সবচেয়ে গৌরবের ব্যাপার।

উ মো শুনের পুত্রবধূ যখন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন, তখন পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে নার্সিং হোমে পাঠানোর ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করেন। নিজের পরিবারের সদস্যদের এ আলোচনা শুনে উ মো শুন দারুণ হতাশায় পড়েন।

এ ঘটনায় তিনি বাসা থেকে বের হয়ে যান এবং রাস্তায় একা একা হাঁটা শুরু করেন। হেঁটে হেঁটে তিনি একটি ফটো গ্যালারির দরজার সামনে পৌঁছান।

সেই মুহূর্তে হঠাত্ করে তার মাথায় একটি চিন্তা আসে। মারা যাওয়ার আগে তিনি একটি ছবি তুলতে চান এবং যে ছবিটি নিজের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে লাগানো থাকবে বলে আশা করেন ।

তিনি তখন সেই ফটো গ্যালারিতে ছবি তোলেন। মূলত এই ছবি তোলার পরই এ চলচ্চিত্রের সবচেয়ে অদ্ভুত দৃশ্য-বিন্যাস দেখা দেয়। বৃদ্ধ নারী উ মো শুন একজন সুন্দরী তরুণীতে পরিণত হন। তিনি নিজের তরুণ সময়ের তরুণ মুখ আবার ফিরে পান।

প্রথমে আয়নায় নিজের তরুণ সময়ের মুখ দেখে উ মো শুন আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। শুরুতেই তরুণ একটা মুখ ও শরীরের অধিকারী হলেও তিন তার মানসিকতা নানীর পর্যায়ে বজায় রাখেন। তিনি ধীরে ধীরে আকস্মিকভাবে পরিবর্তিত এই বাস্তবতা গ্রহণ করেন।

তিনি নিজের একটি নতুন নাম প্রদান করেন, তা হলো উ তো লি। তখন থেকেই নতুন এক জীবনের সন্ধান শুরু করেন তিনি। কিন্তু কিভাবে আগেকার নিজেকে যুক্তিসঙ্গতভাবে বিলুপ্ত করা যায় তা উ তো লি'র কাছে একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি পরিবারের সদস্যদের মনে আঘাত দিতে চান না। তাই তিনি গোপনে বাসায় একটা চিঠি পাঠান। চিঠিতে তিনি লিখেন, 'আমি কিছুদিনের জন্য বাইরে যেতে চাই। তোমরা আমাকে নিয়ে কোনো চিন্তা করবে না।'

এ বিষয়ে কোনো উপায় না পেয়ে শেষে উ তো লি নিজের এক পুরনো বয়স্ক বন্ধুর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তরুণ বয়সে তার এই পুরনো বন্ধু তাকে পছন্দ করতেন। তবে যেকোনো কারণে তারা বিয়ে করেন নি।

সামনে দাঁড়ানো আবার তরুণ হয়ে ওঠা উ মো শুন, অর্থাত্ উ তো লিকে দেখে পুরনো বন্ধু নিজের চোখ বিশ্বাস করতে পারেন না। এসময় উ তো লি নিজের এসব পরিস্থিতি পুরনো বন্ধুকে জানিয়ে দেন। তিনি জানান তিনি কিভাবে একটা ছবি তোলার পর আবার তরুণ সময়ে ফিরে এসেছেন। এসময় তিনি পুরনো বন্ধুকে এটাও জানিয়ে দেন যে, তিনি যদি আঘাত পান আর এতে যদি রক্ত বের হয় তবে তিনি আবার বৃদ্ধ হয়ে যাবেন।

আবার তরুণ হওয়া উ তো লি তরুণসময়ে যে স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন নি এখন তিনি সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চান।

একবার তিনি যখন এক কফি হাউসে গান করেন তখন তার গাওয়া সেই গান টিভি কেন্দ্রের এক পরিচালকের মনকে ভীষণ আকৃষ্ট করে। এক আকস্মিক সুযোগে উ তো লি নিজের নাতির সঙ্গীত দলের শিল্পী হিসেবে সেই দলে যোগ দেন।

উ তো লি'র সাহায্য এবং সমর্থনে নাতির সঙ্গীত দল দিন দিন বিখ্যাত হয়ে ওঠে। তবে একবার গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবেশনায় অংশ নেয়ার পথে নাতির ওপর একটি ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে। তবে উ তো লি এসময় নাতিকে দেখার জন্য হাসপাতালে যান না। তিনি মঞ্চে থাকাটাই বাছাই করেন।

তিনি নাতির লেখা এই গানটি পুরোপুরিভাবে গাইতে চান। গান গাওয়ার পর পরিবেশনাস্থল হাততালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। সবাই নাতির এই সঙ্গীত দলের প্রশংসা করেন। তবে কেউ নানী উ তো লি'র মনের চোখের জল দেখতে পান না।

হাসপাতালে ছেলে উ তো লিকে চিনে ফেলেন। ছেলে মায়ের তরুণসময়ের ছবি হাতে ধরে উ তো লিকে জিজ্ঞাস করেন, 'আপনি কি 'সিও চিউ' নামের একজন বাচ্চাকে চেনেন?' আসলে সিও চিউ হলো ছেলের ডাকনাম।

ছেলের কথা শুনে উ তো লি কাঁদতে শুরু করেন। তিনি ছেলেকে বলেন, তিনি নাতিকে উদ্ধার করার জন্য হাসপাতালে এসেছেন। তিনি নাতিকে রক্ত দিতে চান। তবে ছেলে রাজি হন না। তিনি মাকে বলেন, 'আপনি চলে যান। আরেকবার জীবন উপভোগ করুন। যেসব খাবার অন্যমানুষ ছুঁড়ে ফেলেছেন সেসব খাবার আর খাবেন না, সন্তানের জন্য দাসের মতো জীবন আর কাটাবেন না, অল্পপ্রাণ স্বামীকে আর বিয়ে করবেন না, আমার মতো ছেলেকে জন্ম দেবেন না। নিজের ইচ্ছেমতো জীবন কাটান'।

পুরনো বন্ধু উ তো লি নাতিকে রক্ত দেওয়ার বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, 'না, রক্ত দেবে না। যৌবন অনেক সুন্দর। কেন ৭০ বছর বয়সী সেই বৃদ্ধের সময়ে ফিরে যাবে?'

চলচ্চিত্রের শেষে উ তো লি দৃঢ়ভাবে অস্ত্রোপচার কক্ষে প্রবেশ করেন। তারপর সবকিছু স্বাভাবিক পথে চলে আসে। তারপর ছেলে, ছেলের স্ত্রী এবং মা উ তো লি নাতিকে উত্সাহ দিতে তুমুল উল্লাস ধ্বনি তোলার জন্য সেই পরিবেশনাস্থলে হাজির হন। গোটা চলচ্চিত্র দেখার প্রক্রিয়া যেন একটি সুন্দর, মজাদার ও আনন্দময় স্বপ্ন দেখার মতো।

'মিস গ্র্যাননি' চলচ্চিত্রে বৃদ্ধ হওয়া সংক্রান্ত একটি সামাজিক সমস্যা তুলে ধরা হয়। আসলে সন্তান বড় হওয়ার পর স্ত্রী, সন্তান ও চাকরিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে হয়তো মাঝেমাঝে নিজের মা-বাবার ওপর তেমন দৃষ্টি রাখেন না।

পরিবারে উ মো শুন একজন উপেক্ষিত মানুষ। খুব তরুণ সময় তার স্বামী মারা যান। একাএকা ছেলেকে লালনপালন করেন তিনি। তবে ছেলেকে লালনপালন করে প্রতিষ্ঠিত করা সত্ত্বেও তিনি সন্তানের কাছ থেকে আদর, ভালোবাসা পান নি।

শেষে নিজের নাতি এবং যৌবন সম্পর্কিত সুন্দর স্বপ্নের মধ্যে উ মো শুন মমতার বন্ধন বাছাই করেন। তবে উ মো শুনের ছেলের কথা একটু অপ্রত্যাশিত। তিনি মাকে বলেন, আমার নিজের ছেলেকে আমি নিজেই উদ্ধার করবো। তিনি আশা করেন, মা আবার জীবন কাটাবেন।এবারে কেনো অন্যদের জন্য নিজের জীবন কাটাবেন।

অবশেষে উ মো শুনের শরীরের লাল রক্ত নাতির শরীরে প্রবেশ করে। আসলে এটাই যৌবনের ধারাবাহিকতা। জীবন একটা বৃত্তের মতো। সবকিছু ঘুরেফিরে বৃত্তের মধ্যেই থাকে। যৌবন চিরস্থায়ী নয়। (লিলি/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040