Web bengali.cri.cn   
ইনারমঙ্গোলিয়ার হুলুনবে'র তৃণভূমি, বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ও মনোরম স্থান
  2013-08-10 16:46:41  cri

এখন গ্রীষ্মকাল, এ সময় ছায়া-শিতল, মনোরম প্রাকৃতিক নিসর্গ উপভোগ করা বা এমন জায়গায় ভ্রমণ করা সত্যিই দারুণ মজার ব্যাপার তাই না? চীনের ইনারঙ্গোলিয়ার হুলুনবে'র দিগন্ত বিস্তৃত তৃণভূমির সবুজ ঘাস ও নির্মল বাতাস আর এই তৃণভূমি ঘিরে থাকা প্রকৃতির বিস্ময়কর ছায়া-শিতল বন এমন‌ই এক পর্যটন স্থান। বিস্তীর্ণ সবুজ তৃণভূমিতে ঘোড়ার পিঠে ছুটে বেড়ানো অনেক রোমান্টিক ব্যাপার, আর সাথে যদি থাকে আপনার প্রিয়সখা তাহলে তো একেবারে যোলকলা পূর্ণ। নিঃসন্দেহে এই ভ্রমনে আপনি অভাবনীয় সুখানুভূতি লাভ করতে পারবেন। চলুন তাহলে আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সবাইকে নিয়ে এই অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থানটি একবার ঘুরে আসি।

লিপন. হুলুনবে'র তৃণভূমি চীনের সংরক্ষিত সবচেয়ে সুন্দরতম তৃণভূমির একটি, যার পাশেই রয়েছে বুনো সৌন্দর্যের বিস্ময়কর সৃষ্টি তাসিংআনলিং বন। এই পর্যটন স্থানে যেতে হলে প্রথমে বিমানে করে হুলুনবে'র রাজধানী হেলারে যেতে পারেন। এখান থেকে রওয়ানা হয়ে দিগন্ত বিস্তীর্ণ তৃণভূমির ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে উত্তরপশ্চিম সীমান্ত শহর মানচৌলি যেতে পারেন। শহরটি চীন ও রাশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। রাশিয়ার বহু ব্যবসায়ী এ শহরে বসবাস করে এবং চামড়া কাপড়, তামাক ও রুশ সেট পুতুলসহ বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য কেনাবেচা হয়ে থাকে।

সুবর্ণা. ২০১১ সালের গ্রীষ্মকালে আমি হুলুনবে'র তৃণভূমি ও মানচৌলি শহরে বেড়াতে গিয়েছিলাম। পেইচিং থেকে হুলুনবেতে পৌঁছানোর পর মনে হলো যেন আর এক অবাক বিশ্বে প্রবেশ করেছি। কারণ আমার চোখের সামনে শুধু নীল রঙয়ের আকাশ, সাদা মেঘ ও সবুজ দিগন্তহীন তৃণভূমি। রাতের ঝিরিঝিরি বাতাসে খোলা তৃণভূমিতে চিত হয়ে শুয়ে আকাশের ঝলমলে তারা আর উল্কার পতন দেখা সত্যিই সেটা ছিল এক অপূর্ব রোমান্টিক অনুভূতি। মানচৌলি হচ্ছে চীন ও রাশিয়ার সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত একটি ছোট শহর, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক ঘনিষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ শহরের অর্থনীতিও দ্রুত উন্নত হয়েছে। যদিও তা সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত, তথাপিও শহরটি দারুন পরিপাটি করে সাজানো এবং পথে পথে রয়েছে সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ছোঁয়া। এখানে রাশিয়ার উত্পাদিত নানা রকমের পণ্যদ্রব্য পাওয়া যায়, অনেক চীনা ব্যবসায়ী ভালভাবে রুশ ভাষা বলতে পারে এবং রুশ নাগরিকও চীনাদের বিয়ে করে এখানেই স্থায়ী আবাস তৈরী করে নিচ্ছে। আরেকটি মজার ব্যাপার এখানকার কুকুরগুলো বেশ রুশ স্টাইলের, অর্থাত্ চীনা কুকুরের চেয়ে আরও বড় ও সাদা।

লিপন. এতক্ষণ আমরা হুলুনবে ও মানচৌলি সম্পর্কে মজার সব তথ্য জানার পর নিশ্চই এখানকার বিশ্বখ্যাত তৃণভূমিকে নিয়ে তৈরী কোনো গান শুনার ইচ্ছা আরো বেড়ে গলো তাই না? আসুন তাহলে আমরা সবাই মিলে বুনোপাখি বা wild goose নামের একটি গান উপভোগ করি. চীনা সংস্কৃতিতে এ পাখিটি হচ্ছে চিনের চিঠি আদান প্রদান বা ডাক হরকরার প্রতীক। প্রাচীনকালে যখন পোস্ট অফিস ছিল না, তখন লোকজন এই পাখির মাধ্যমে দূর দূরান্তে থাকা আত্মীয়-স্বজনের কাছে চিঠি পাঠাতো। গানটির সুর শুনে যদিও আপনার দুঃখানুভূতি হতে পারে, কেননা গানটিতে চিরদিনের ন্যায় জন্মস্থান ছেড়ে অন্য কোথাও দূর দেশে চলে যাওয়া মানুষের মনের বিচ্ছেদ যন্ত্রণা প্রতিফলিত হয়েছে। তবুও গানটি আপনাকে আনন্দ দিবে ষোলআনা।

সুবর্ণা. আচ্ছা, বন্ধুরা, সুন্দর অথচ বিচ্ছেদ সুরের গানটি শোনার পর হুলুনবে'র তৃণভূমি সম্পর্কে জানার আগ্রহ আরও বেড়ে গেলো তাই না? চলুন তাহলে এই স্থান সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য যেনে নেই। শুরুতেই বলেছিলাম যে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্ তৃণভূমি। এবারে সত্যিই আন্দাজ করতে পারবেন যে আসলেই এটি কত বড়। কেননা, একটানা পাঁচ দিন ধরে গাড়ি চালিয়ে দৃষ্টি সীমানায় যতদূর চোখ যায় শুধুই ঘাস, জলাভূমি, গরু, ছাগল, হলুদ রঙয়ের ফুল, গাছপালা, হ্রদ আর বনবনানী দেখিছি, কিন্তু তখনও আমরা হুলুনবে'র মাত্র অর্ধেক জায়গা অতিক্রম করতে পেরেছি। এবারে বুঝতে পারছেন নিশ্বয়ই যে এটি আসলেই কত বিস্তীর্ণ ও ব্যাপক। কেন এ তৃণভূমিকে হুলুনবে বলা হয়,তা নিয়েও রয়েছে মজার কিছু কাহিনী। এ অঞ্চলে দুটি বড় হ্রদ রয়েছে, একটির নাম নাম হুলুন এবং আরেকটির নাম বে'। হ্রদ দুটি পূর্ব ও পশ্চিম দিকে অবস্থিত। কথিত আছে যে, হুলুন আর বে নামে তৃণভূমিতে এক প্রেমিক যুগল ছিল। মেয়েটির নাম হুলুন, যে ছিল নাচে গানে পটু আর ছেলে বে'র ছিল ঘোড়া চালানো আর শিকারে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু নির্জণ বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে থাকা একটি ভূতের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রেমিক জুটিকে অবশেষে দুটি সুন্দর হ্রদে পরিণত হতে হয়েছে, আর সেই থেকে হ্রদ দুটি বিস্তৃণ তৃণভূমির একমাত্র পানির প্রধান উতস হয়ে শীতল জলধারা প্রবাহিত করে চলেছে।

লিপন. গল্পটি সত্যি বেশ রোমান্টিক। হলুদ রঙয়ের rape ফুলের ক্ষেত এই অঞ্চল বিশেষত, দক্ষিণ চীনের চিয়াংশি প্রদেশের উইউয়ান জেলার মধ্যে বিখ্যাত। আপনারা যদি কখনো হুলুনবে'র তৃণভূমিতে বেড়াতে আসেন, তখন বিস্ময়ের সাথে দেখবেন যে এ ফুলের ক্ষেত সমুদ্রের মতো বিস্তীর্ণ, যেন ক্যানভাসে আঁকা তৈলচিত্রের অসাধারণ এক ল্যান্ডস্কেপ। এই ল্যান্ডস্কেপের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে নিজেকে সেই সৌভাগ্যবান দর্শক বলে মনে হবে যে প্রকৃতির আঁকা এই বিরল রেপ ফুলের ল্যন্ডস্কেপ দেখতে পেলেন।


1 2 3
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040