Web bengali.cri.cn   
হুয়াংতি ও ছিইয়ুর লড়াই
  2013-04-15 20:00:56  cri

 ইয়ু কুয়াং ইউয়ে

অনেক অনেক হাজার বছর আগের কথা। তখন চীনের হলুদ নদী ও ইয়াংসি নদীর অববাহিকায় নানান জাতি এবং সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করতো। হুয়াংতি ছিলেন হলুদ নদীর অববাহিকায় বাস করা সবচেয়ে বিখ্যাত এবং শক্তিমত্তায় বলীয়ান এক জাতির সর্দার। বিচ্ছিন্ন থাকা সকল খন্ড খন্ড অঞ্চল ঐক্যবদ্ধ করে একটি রাজ্য গঠন করার পর হুয়াংতির নিয়ন্ত্রণ আর ক্ষমতা যেন আরও বহুগুণ বেড়ে যায়, তাঁর শক্তিও যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে দিনে দিনে। কিন্তু সাধারণ জনগণের কাছে তিন শক্তিমান রাজা নন বরং শ্রোদ্ধা, ভালবাসা আর অনুসরণীয় একজন মানুষ হিসেবেই পরিচিতি পায়। কেননা একদিকে জনগণের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী অন্যদিকে তিনি সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখ আর তাদের জীবন জীবিকার উন্নয়ন করাই ছিল একমাত্র রাজব্রত। শুধু তাই নয় রাজ্য শাসনের ক্ষেত্রে তিনি প্রায়শই প্রবীন বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের নিকট থেকে শিক্ষা আর পরামর্শ গ্রহণ করতেন। এভাবেই হুয়াংতি জাতি দিন দিন আরো বেশি সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠে। হুয়াংতির এক ভাই ছিল, তার নাম ইয়ানতি। তিনিও একজন সর্দার এবং নিজ জাতির মানুষের কাছে তারও অনেক সুখ্যাতি ছিল ।

এদিকে ইয়াংসি নদীর অববাহিকায় চিউলি নামে ছিল আরও একটি জাতি। এই জাতির সর্দারের নাম ছিল ছিইয়ু, সেও ছিল ভীষণ ক্ষমতাধর আর শক্তিশালী এক মানুষ। সে কোনো ভাবেই মন থেকে হুয়াংতির হুকুম মেনে দিতে পারে না। হুয়াংতি জাতিকে দিন দিন সমৃদ্ধি আর শক্তিশালী হতে দেখে ছিইয়ুর মনে ঈর্ষা আর ক্ষোভ জন্মাতে থাকে। তার ক্ষোভ এমন তীব্রতর হয়ে ওঠে যে, একদিন সে হুয়াংতি জাতির বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

ছিইয়ুর ছিল ৮১টি ভাই। তাদের মুখ মানুষের, কিন্তু শরীর ছিলো বন্য জন্তুর মতো। তাদের মাথা ও হাত পা লোহার মতো শক্ত। মাথার ওপর সরু শিঙ, চুল তলোয়ারের মতো ধারালো। এ জাতির মানুষদের সবারই চারটি চোখ ও ছয়টি হাত ছিল। এদের প্রধান খাবার ছিল বালু, পাথর আর লোহা। তলোয়ার ও তীর-ধনুক প্রভৃতি অস্ত্র তৈরী এবং অস্ত্র চালনায় তাদের চেয়ে দক্ষ গোটা রাজ্যেই কারোর ছিল না। আর এই শক্তির জোরে সর্দার ছিইয়ু প্রায়ই তাদের প্রতিবেশি অন্যান্য জাতির বিরুদ্ধে আক্রমন করতো।

যুদ্ধ করার বিষয়ে ছিইয়ুর সিদ্ধান্ত স্বগোত্রীয় যোদ্ধারা জানার পর তারাও সবাই একবাক্যে সমর্থন ব্যক্ত করে এবং তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয় যে, তারা অবশ্যই হুয়াংতি জাতিকে পরাজিত করতে পারবে। ফলে ছিইয়ুর মনে লালন করা প্রতিহিংসার আগুনে এবার সত্যিই যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলো।

আকস্মিক আক্রমণ করে বসে ছিইয়ুর সৈন্যরা। শুরু হয় ভীষণ যুদ্ধ। যুদ্ধের শুরুতেই ছিইয়ু ও তার ভাইয়েরা মিলে ইয়ানতির অধিকৃত অঞ্চলের অনেকখানি জায়গা দখল করে নেয়। এই সময়ে ইয়ানতি ও তার সৈন্যরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় এবং অল্প দিনের মধ্যেই ইয়ানতি ও সৈন্যরা ছিইয়ুর কাছে পরাজয় বরণ করে। ইয়ানতি চরম পরাজয় বুঝতে পেরে যুদ্ধ থেকে পালিয়ে তার ভাই হুয়াংতির কাছে আশ্রয় নেয়।

এদিকে হুয়াংতি শুরু থেকেই ছিইয়ুর যুদ্ধংদেহী আচরণকে ঘৃণা করতো এবং যেকোনো ভাবেই তাকে দমন করার জন্য সুযোগের অপেক্ষা করছিল। এবার সে সুযোগ পেয়ে যায়, আর তার নিজের এবং অন্যান্য জাতির সর্দার আর বীরদের নিয়ে বিশাল এক বাহিনী তৈরী করে ছিইয়ুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

কিন্তু ছিইয়ু যুদ্ধের কৌশল জানতো ভালো । এই যুদ্ধের প্রস্তুতি তার দীর্ঘ দিনের। প্রথমে সে নিজ জাতির বিশ্বস্ত লোকদের গোটা রাজ্যের বিভিন্ন জাতি আর সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুপ্রবেশ করিয়ে হুয়াংতিকে একজন খারাপ মানুষ হিসেবে প্রচার করার কৌশল গ্রহণ করে। যাতে বিভিন্ন জাতির জনগণের মধ্যে হুয়াংতির বিরুদ্ধে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এরপর সে তাম্র খনি খুঁজতে চারদিকে লোক পাঠায় এবং সে তামা দিয়ে বিপুল পরিমাণ শক্তিশালী অস্ত্র তৈরি করে। এভাবেই দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি নিয়ে তবে হুয়াংতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

যুদ্ধের প্রথমেই ছিইয়ুর সাহসী সৈন্যরা তাদের তৈরী অস্ত্র ব্যবহার করে বিজয়ের পথে অগ্রসর হতে থাকে। এ অবস্থা সামাল দিতে হুয়াংতি ড্রাগন ও অন্যান্য অদ্ভুত পশুদেরকে এ লড়াইয়ে অংশ নিতে অনুরোধ জানায়। ইংলোং নামের একবীর যোদ্ধা হুয়াংতির বাহিনীর সেনাপতি হয়ে সৈন্যদের নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে যায়। এই ড্রাগন সেনাপতি ছিল বুদ্ধিমান আর সাহসী, সে প্রথমে পানি সংরক্ষণের জন্য একটি বড় বাঁধ নির্মাণ করলো। তারপর সে এক বিশাল ড্রাগণের রূপ নিয়ে আকাশে উড়ে ছিইয়ুর সেনাবাহিনীর দিকে মুষলধারে বৃষ্টিপাত করতে থাকে। ছিইয়ুর সেনাবাহিনী অতি সাহসী হলেও ইংলোংয়ের সৃষ্ট মুষলধারে বৃষ্টি প্রতিরোধ করতে পারলো না। ছিইয়ু তার সৈন্যদের শীঘ্রই কোনো উচু জায়গায় অবস্থান গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান করে। ইংলোং-ও বুঝতে পারলো যে, তারা উচু জায়গায় আশ্রয় নিলে বৃষ্টির কৌশল আর কাজে আসবে না। কিন্তু তাতে অসুবিধা নেই, কেননা একটানা মুষলধারে বৃষ্টি দিয়ে ছিইয়ু ও তার বাহিনীকে অবরুদ্ধ করে রাখা যাবে এবং যখন তাদের খাদ্য আর রসদ শেষ হবে তখন তারা এমনিতেই হেরে যাবে।

এ সময় ছিইয়ুও ইংলোংয়ের অবরোধ ভেঙ্গে দেয়ার উপায় খুঁজছে। সে স্বর্গের পবন দেবতা ও বৃষ্টির দেবতাকে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ জানায়। ছিইয়ু পবন দেবতাকে জিজ্ঞেস করলো, "দেবতা, আপনি কত জোরে ঝড় বইয়ে দিতে পারেন?" পবন দেবতা বললো, "তুমি যা চাও, তার থেকেও বেশি দিতে পারবো।" তারপর ছিইয়ু বৃষ্টির দেবতাকে জিজ্ঞেস করলো, "দেবতা, আপনি কত বেশি বৃষ্টি ঝরাতে পারেন?" বৃষ্টি দেবতা বললো, "তুমি যা চাও, তার থেকেও অধিক বৃষ্টি ঝরাতে পারবো।"এ কথা শুনে ছিইয়ু তো মহাখুশি, সে বললো, "খুব ভালো, তাহলে আমি যখন বলবো তখন আপনারা আপনাদের সকল শক্তি দিয়ে প্রবল ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাত শুরু করবেন।"

1 2 3
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040