Web bengali.cri.cn   
কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের বসন্ত শিবির সম্পর্কে বাংলাদেশের ছাত্র শামিমের অনুভূতি
  2013-03-11 14:16:03  cri

সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন।

চীন আন্তর্জাতিক বেতার ও হানবানের উদ্যোগে কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের বসন্ত শিবির ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত আয়োজিত হয়,এ অনুষ্ঠানের সাথে সংপৃক্ত হতে পেরে আমি ভীষণভাবে আনন্দিত এবং উত্ফুল্ল। ২৮ ফেব্রুয়ারি আমি ঢাকা থেকে দুপুর ১০টার সময় সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে পেইচিংয়ে পৌঁছি। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি এসে সিআরআইয়ের হোটেলে উঠি। রাত্রি যাপনের পর ১ মার্চ সকালে ১০টার সময় বসন্ত শিবিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হই। ছোট পরিসরে বেশ সুন্দর আয়োজন। প্রায় ১ ঘন্টার অনুষ্ঠান শেষ করে সিআরআই-এর মূল ভবন পরিদর্শন করি। তারপর দুপুরের খাবার খেতে যাই। তা শেষ করে একটি সুন্দর বাসে করে পেইচিং ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসি এবং আমরা মোট ৯টি দেশের ২৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করি। এই ক'দিনের মধ্যেই আমাদের মাঝে সে আন্তরিকতা গড়ে উঠেছে তা দেখে আমি অভিভূত। ২ মার্চ সকালে ৮টার সময় জনাব ছাই নানের তত্ত্বাবধানে ক্লাস শুরু করি। অসাধারণ তাঁর শিক্ষাদান পদ্ধতি। যা পূর্বে আমি কখনও দেখি নি। বলে রাখি, এই অনুষ্ঠানে আগত ২৪ জন শিক্ষার্থীকে ২টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি সিনিয়র গ্রুপ অন্যটি জুনিয়ার গ্রুপ। যারা চীনা ভাষায় বেশি পারদর্শী তাদেরকে একটি গ্রুপে, আর যারা একটু কম তাদেরকে অন্য গ্রুপে। প্রতিদিন ক্লাসে আমরা সবাই সঠিক সময়ে উপস্থিত হতাম।

শামিম চীনা মাস্টারের সঙ্গে কুংফু চর্চা করেন

শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং শিক্ষকদের ব্যবহার আমাদের সবাইকে ভাষা শিক্ষায় আরও বেশি উত্সাহিত করে তোলে। জনাব ছাই নান, মিস লি ওয়েই এবং মিস হাও চিয়া লু এই তিন জন আমাদেরকে তাত্ত্বিক বিষয়ে ক্লাস নিয়েছেন। আর ব্যবহারিক বিষয়ে চা শিল্পকলা, হস্তশিল্প, ছবি আঁকা, কাগজ কাটা আর চীনা অপেরার মাস্ক মেকআপ সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ক্লাস আমাদেরকে পরিচালনা করেন চীনা শিক্ষকরা। তাঁদের অসাধারণ দক্ষতা ও শিক্ষাদান পদ্ধতি আমাদের নতুন নতুন বিষয় জানার ব্যাপারে আরও বেশি উত্সাহিত করে তুলেছে। ৪ মার্চ আমাদের ট্রেনিং প্রোগ্রামটি শেষ হয় এবং এ দিনই বিকালে বিদায় পার্টি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে শেষ হয়। অনুষ্ঠানে প্রতিটি দেশের শিক্ষার্থীরা তাদের সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অংশ প্রদর্শনের মাধ্যমে মন মুগ্ধকর করে তোলে। সবাই ভীষণভাবে উপভোগ করেছি। তারপর ৫ মার্চ সকাল ৯টায় আমরা রাজপ্রাসাদ, থিয়ানআনমেন মহাচত্বর পরিদর্শনে যাই। এত সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন জায়গা আমি পূর্বে কখনও দেখিনি। এ দিনই বিকাল ২টায় আমরা চলে যাই সামার প্যালেসে। এর সৌন্দর্য্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। আসলে কি চীনের প্রতিটি স্থান বা জায়গা আমাকে চিন্তার পরিধীকে আরও বিস্তৃত করছে। আমি একজন চিত্রশিল্পী হওয়াতে সব কিছুই অন্যভাবে উপভোগ করেছি। আসলে চীন হাজার বছরের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ একটি দেশ। প্রতিটি মানুষের চীনকে ভাল লাগার কথা। ৬ মার্চ আমরা সকালবেলায় চলে যাই পৃথিবী বিখ্যাত সেই চীনের মহাপ্রাচীর বা গ্রেডওয়্যাল নামে পরিচিত। পূর্বে আমি কখনও দেখিনি এই প্রথম। আশ্চর্য ব্যাপার যখন প্রযুক্তির ছোঁয়া এই বিশ্ব দেখিনি তখন কিভাবে চীনারা এটা তৈরী করেছে তা ভাবলে অবাকই হতে হয়। আসলে এ ধরনের কঠিন কাজ চীনাদের পক্ষেই সম্ভব। এ দিনই ২টায় আমরা পরিদর্শন করি বার্ডনেস্ট এবং ওয়াটার কিউবিক। মন মুগ্ধকর স্থাপত্যশৈলী আমাকে বিমোহিত করেছে। তারপর ৭ মার্চ সকালে ৭টা ২০ মিনিটে আমরা সিয়ামেনে যাওয়ার জন্য পেইচিং ত্যাগ করি। এখানে এসে আমি আরও মুগ্ধ হয়েছি। আমার মনে হয় এটাকে গার্ডেন সিটি বললে ভূল হবে না। আসলে চীনে এসে আমি যা লক্ষ্য করেছি, সেটা হলো সব কিছু পরিকল্পিতভাবে করা। সে কারণে সবকিছুই মান এবং বৈশিষ্ট্যতা পেয়েছে। আসলে চীনাদের ব্যবহার ও আতিথেয়তা মনে রাখার মত। পেইচিং থেকে সিয়ামেন আসতে আমাদের প্রায় ৩ ঘন্টার উপরে লেগেছে। সিয়ামেনে এসে দেখি আবহাওয়া খুব গরম। পেইচিংয়ে এখনও ভীষণ ঠাণ্ডা। যা ভীষণভাবে লক্ষ্যণীয়। গরম কাপড় খুলে পাতলা কাপড় পরিধান করতে হয়েছে। এখানে এসে আমাদের সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে সুবর্ণা নামে একটি মেয়েকে আমরা গাইড হিসাবে পেয়েছি। যিনি কিনা ভাল বাংলায় কথা বলতে পারেন। সার্বক্ষণিক উনার সহযোগিতা আমরা পাচ্ছি। আমরা দু'জন শিক্ষার্থী এখানে এসেছি। আমার নাম শামীম, অন্যজনের নাম জান্নাত, ১১ বছরের একটি ছোট মেয়ে। আসলে বলতে কি চীনাদের সাথে বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশীদের কোথায় যেন একটা হৃদয়ের টান আছে। কেননা মনে হয় খুব সহজেই তারা আমাদেরকে আপন করে নেয়। কারণ পৃথিবীর অনেক দেশ আমি ঘুরেছি। কিন্তু চীন আমাকে ভীষণভাবে আপন করে নিয়েছে মনে হয়, শুধু আমাকেই না প্রতিটি আগত শিক্ষার্থীকে হয়তবা। ৭ মার্চ বিকালে আমরা যোগদান করি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। সুন্দর আয়োজন এবং সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ করে আমরা সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করি। এখানে এসে আমাদের দলটি আরও অনেক বড় হয়েছে। কারণ সিআরআইয়ের অনেক সংবাদদাতা বা কর্মীরা আমাদের সাথে যোগ দিয়েছেন। এই পরিদর্শনে আমাদের সাথে ছিল উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'জন ছাত্রী। তারা আমাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়েছে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে। ৮ মার্চ আমরা সবাই ৯টায় এখানে ক্লাসে যোগ দেই। ২ ঘন্টার ক্লাস ছিল, প্রতিটি মূহুর্ত জানার এবং উপভোগ্য। এই দিন বিকাল বেলায় আমরা কুংফু কারাতের একটি ক্লাসে অংশগ্রহণ করি। কষ্ট হলেও বেশ উপভোগ্য ছিল। কাল ৯ মার্চ আমরা চীনের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম ইংতিং মাটি ভবন পরিদর্শন করবো।

--- গোলাম রব্বানী (শামিম)

ছাত্র বিষয়ক পরিচালক, শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০, বাংলাদেশ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040