Web bengali.cri.cn   
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদশের জিএসপি সিদ্ধান্ত ২৮ মার্চ
  2013-02-18 14:21:32  cri
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা বহাল থাকবে কি থাকবে না – সে বিষয়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে আগামী ২৮ মার্চ। ওই দিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর (ইউএসটিআর) এক শুনানির পর বাংলাদেশের জন্য জিএসপি বা অগ্রাধিকারমূলক সাধারণ ব্যবস্থার আওতায় এ সুবিধা রাখা-না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। এ সুবিধা বাতিলের জন্য যেসব অভিযোগ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে শুনানিতে বাংলাদেশকে সেগুলো খণ্ডন করতে হবে। শুনানির ফলাফল বাংলাদেশের বিপক্ষে গেলে জিএসপি সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে। আর তেমনটি যদি হয়, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডাসহ অন্য যেসব বাজারে বাংলাদেশ একই ধরনের সুবিধা পাচ্ছে সেখানেও। বাংলাদেশকে দেওয়া তাদের জিএসপি সুবিধা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

শুনানিতে অংশ নিতে বাংলাদেশের যে প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে তাদের বক্তব্যের সারসংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যসচিব এবং প্রতিনিধিদলের প্রধান মাহবুব আহমেদ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের ক্ষেত্রগুলোতে অগ্রগতির জন্য সরকার সময় বেঁধে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে ২৮ মার্চের শুনানিতে যাওয়ার আগেই এবং শুনানিতে সেগুলো তুলে ধরবে। প্রতিনিধিদল শ্রমিক অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের অগ্রগতির পরিস্থিতিও উপস্থাপন করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে বুঝাতে চেষ্টা করবে যে জিএসপি সুবিধা বাতিল করলে প্রকারন্তরে বাংলাদেশের শ্রমিকরাই এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই শ্রমিকদের উন্নয়নের স্বার্থেই এ সুবিধা বহাল রাখা দরকার বলে তারা যুক্তি তুলে ধরবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জিএসপি বাতিলের জন্য বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরে আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশন (এএফএল-সিআইও)-এর দায়ের করা একটি রিট পিটিশনটির শুনানি আগামী ২৮ মার্চ অথবা এর কাছাকাছি সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। শুনানির ফলাফল বাংলাদেশের বিপক্ষে গেলে বিদ্যমান জিএসপি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে দেশটি।

বিগত ২০০৭ সালের ২২ জুন দাখিল করা ওই পিটিশনে এএফএল-সিআইও অভিযোগ করে, বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্প, মত্স্যশিল্প এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকাগুলোতে অবস্থিত কারখানাগুলোতে শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে প্রায়ই। সে কারণে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্ত দেশগুলোর তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানায় তারা।

ওই পিটিশনের পর ওই বছরের ৪ অক্টোবর, ২০০৯ সালের ২৪ অক্টোবর এবং ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি শুনানিতে বাংলাদেশ অংশ নিয়ে অভিযোগগুলো খণ্ডন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জিএসপি সুবিধা সাময়িকভাবে বহাল রাখে যুক্তরাষ্ট্র।

জানা গেছে, প্রচলিত ধারাবাহিকতায় পিটিশনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালে। তবে জিএসপি সুবিধা বাতিলের জন্য এএফএল-সিআইও গত অক্টোবর মাসে বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরে আরো একটি আবেদন করে। আর গত ২৪ নভেম্বর সাভারের তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের কারণে এ বছর উত্থাপিত অভিযোগগুলোতে নতুন মাত্রা যোগ হয়।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, জিএসপি সুবিধার আওতায় বাংলাদেশের অল্প সংখ্যক পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা পায়। এ কয়টি পণ্য থেকে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য না হলেও এ সুবিধা প্রত্যাহার করা হলে দেশের ভাবমূর্তির ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে, যার ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও অন্যান্য দেশে বাংলাদেশ যে একই ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকে তাও ভবিষ্যতে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অভিযোগগুলো কার্যকরভাবে খণ্ডন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। শুনানির জন্য গত ২৯ জুন ওয়াশিংটনে পাঠানো প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বেশ কিছু কর্মসূচি নেওয়ার কথা উল্লেখ করেছে। ২৮ মার্চের শুনানির আগেই এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের পাশাপাশি পোশাক ও মত্স্য রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সমিতিগুলো সরকারের তত্ত্বাবধানে প্রায় ২০ লাখ ডলার ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি রক্ষায় লবিস্ট নিয়োগের পরিকল্পনা করছে।

ওয়াশিংটনের শুনানির জন্য গঠিত প্রতিনিধিদলে থাকছেন পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ শহীদুল হক, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান কে এম মমিনুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ড. মো. রুহুল আমিন সরকার, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ চিংড়ি ও মত্স্য ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির একজন করে প্রতিনিধি।(এসআর)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040