Web bengali.cri.cn   
পুরোনো শিল্প নগর চুচৌর পরিবর্তন
  2013-02-11 20:11:24  cri

 চুচৌ হচ্ছে মধ্য দক্ষিণ চীনের হুনান প্রদেশের দ্বিতীয় শহর। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে নির্ধারিত আটটি বড় শিল্প কেন্দ্রের অন্যতম এ শহর। গত কয়েক দশকে চুচৌর শিল্প দ্রুত গতিতে বিকশিত হয়েছে। চীনের প্রথম বিমান ইঞ্জিন, প্রথম আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র আর প্রথম বিদ্যুত্চালিত মোটরগাড়ি - সবই এখানে উত্পাদিত হয়েছে। তবে ভারি শিল্প উন্নয়ন এ শহরের সম্পদ ও পরিবেশকে অতিরিক্ত মাত্রায় ভোগ করেছে। এক সময় চুচৌ চীনের দশটি দূষিত শহরের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কীভাবে 'দূষিত শহর'-এর বদনাম দূর করা যায় -- ২০০৩ সাল থেকে চুচৌ পৌর সরকার তার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। এখন চুচৌ জাতীয় পরিবেশ সুরক্ষার আদর্শ শহর প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। গত দশ বছরে এ শহরের সুন্দর পরিবর্তন ঘটেছে। এখন আমি এ শহর সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলবো।

প্রথমে আমরা চুচৌ শহরের ছিয়াংসুই থাং শিল্প অঞ্চলে যাবো। এ অঞ্চলে একটি হ্রদ আছে, যার আয়তন ২০২ মু অর্থাত্ ১৩.৪৭ হেক্টর। আগে হ্রদে মত্স্য চাষ করতো, এর আশেপাশের জমিতে শাকসবজি চাষ করতো। কিন্তু বহু বছর ধরে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো আর জনসাধারণের জীবনযাপনের বর্জ্য পানি নির্গত হওয়া, নিকট দূষিত জমি, ধূলো আর আবর্জনার মধ্যকার ভারি ধাতুর কারণে হ্রদের পানি দূষিত হয়েছে। চুচৌ আবর্তনশীল অর্থনীতি বিনিয়োগ উন্নয়ন কোম্পানি লিমিটেডের প্রকল্প বিভাগের প্রধান চেন ছাও ইয়াং প্রথম বার এ হ্রদে আসার সময়কার অনুভূতি স্মরণ করে বলেন, "এ প্রকল্পের দায়িত্ব হাতে নেওয়ার পর আমরা এ হ্রদে যখন প্রথম দিন আসি তখন পানি থেকে তীব্র দুর্গন্ধ বের হতো। এর প্রধান কারণ হলো তাতে অতিরিক্ত ক্যাডমিয়াম ছিল।'

এ হ্রদে আর মত্স্য চাষ করা যায় না। আরো গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এ হ্রদ আর হুনান প্রদেশের সবচেয়ে বড় নদী – সিয়াং নদীর দূরত্ব কেবল ৩০০ মিটার। এ হ্রদের পানি যখন সিয়াং নদীতে নির্গত হয়, তখন এটা সিয়াং নদীর ধাতু-দূষণের উতসে পরিণত হয়। এ হ্রদের ভারি ধাতু-দূষণ সংস্কার প্রকল্প গত বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, এখানকার প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার দূষিত পানি আর হ্রদের তলদেশের প্রায় ৭৪ হাজার ঘনমিটার কাদা দূষণমুক্ত করতে হবে। চেন ছাও ইয়াং বলেন, "এ প্রকল্পের প্রথম কাজ হচ্ছে হ্রদের পানি সরিয়ে তলানি পুকুরে রেখে প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগ করা। যখন পুকুরের তলানি পানি গ্রহণযোগ্য মানদণ্ডে পৌঁছায়, তখন তা নির্গত করা যায়। দ্বিতীয় ধাপ হলো আমরা হ্রদের কাদা দূষণমুক্ত করার জন্য প্রথমে হ্রদের পাশে একটি সড়ক নির্মাণ করেছি। তৃতীয় ধাপ হলো কাদা বের করে অস্থায়ী কারখানায় রেখে জলশূন্য করার পর ওষুধ ও উপাদান প্রয়োগ করা। তারপর মাটির নিচে চাপা দেওয়া। এভাবে হ্রদের বিষাক্ত উপাদান পরিষ্কার করা যায়।"

আমাদের সংবাদদাতা দেখেছেন, হ্রদের দূষিত পানি সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। হ্রদের তলদেশের কাদার দূষণমুক্তকরণের কাজ চলছে। হ্রদের তীরে দাঁড়ালেও তীব্র দুর্গন্ধ আর পাওয়া যায় না। ২০১৩ সালের জুন মাসে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তখন এ এলাকায় হাজার টন পর্যায়ের একটি জাহাজঘাটা নির্মিত হবে।

বন্ধুরা, এখন আমরা ছিংসুইথাং শিল্প অঞ্চলের আরেকটি ভারি ধাতু দুষণস্থান -- সিয়াওয়ান বন্দরে যাবো।

গত পঞ্চাশের দশকে ছিংসুই থাং শিল্প অঞ্চলের পরিত্যক্ত পানি প্রধানত সিয়াওয়ান বন্দরের মাধ্যমে সিয়াংচিয়াং নদীতে নির্গত হতো। এটা হুনান প্রদেশের সবচেয়ে বড় দূষিত পদার্থ নিষ্কাশন স্থান হয়েছে। আমাদের সংবাদদাতা সিয়াওয়ান বন্দরে কিছু বিশেষ সরঞ্জাম দেখতে পান। জুকুয়াং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হাংচৌ কোম্পানি লিমিটেডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ওয়াং ইয়াং শি সংবাদদাতাকে জানান, এ সরঞ্জামগুলো বন্দরের পানির গুণগত মান তত্ত্বাবধানের জন্য ব্যবহার হয়।

সিয়াওয়ান বন্দরের পানির গুণগত মান তত্ত্বাবধান কেন্দ্র ২০১১ সালে চালু হয়। এটা হচ্ছে চুচৌ শহরের বুদ্ধিমান পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটি অংশ। এ পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হচ্ছে চুচৌ শহরের পরিবেশ সুরক্ষা কাজের এক লক্ষণীয় অগ্রগতি। কারণ এটার ফলে দূষিত পদার্থ নিষ্কাশন স্থানের তত্ত্বাবধান করার অবস্থা আগের থেকে বদলে গেছে।

চুচৌ শহরের পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক লি বি নোং বলেন, "এ ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ৩৯টি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পরিত্যক্ত পানি, ২২টি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য গ্যাস, ৯টি দূষিত পানি সংস্কার কারখানা, সিয়াংচিয়াং নদীতে নির্গত করা ৫টি বন্দরের পানির গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের ভিডিও তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা ইত্যাদি। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা চুচৌ শহরের পরিবেশ, যেমন বায়ু ও পানির ওপর ২৪ ঘন্টা ধরে অনলাইন তত্ত্বাবধান করতে পারি। সংশ্লিষ্ট সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্ধারিত মান বজায় রেখে বর্জ্য নির্গত করতে হয়।"

বুদ্ধিমান পরিবেশ তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা ছাড়া মহাপরিচালক লি বি নোং আরো বলেন, "আমাদের পৌর সরকার মনে করছে, জিডিপি একটু কম হলেও জনসাধারণের আনন্দময় জীবনের সূচক বাড়ানো উচিত। আমরা কালো জিডিপি চাই না, আমরা সবুজ জিডিপি চাই। একাদশ পাঁচশালা পরিকল্পনা চলাকালে আমরা ১২৩টি দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি এবং ৩২০টি চিমনি ধ্বংস করেছি। চীনের জাতীয় বাগান নগর, জাতীয় স্বাস্থ্যকর নগর আর হুনান প্রদেশের শহরগুলোর স্বাস্থ্য নির্বাচনে চুচৌ পরপর ছয় বছর ধরে প্রথম স্থান পেয়েছে। এখন চুচৌর পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। স্বাস্থ্যকার বায়ুর হার ৯৩ শতাংশেরও বেশি। সিয়াংচিয়াং নদীর চুচৌ এলাকার খাবার পানি সম্পূর্ণ মানদণ্ডে পৌঁছেছে।"

এ শহরের অধিবাসী চেন হুয়া বিগত দশ বছরের পরিবর্তন প্রসঙ্গে বলেন, "চুচৌর পরিবর্তনের ব্যাপারে আমাদের গভীর অনুভূতি আছে। আগে চুচৌ চীনের দশটি সবচেয়ে দূষিত শহরের সারিতে ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে আমাদের পৌর সরকার এ শহরের পরিবেশ উন্নয়নের জন্য জোরালোভাবে সংস্কার কাজ করেছে। যেমন ধরুন, আগে রেল স্টেশনের আকাশ সবসময় থাকতো ছাই রংয়ের। এখন খুব পরিষ্কার হয়েছে। এখন প্রতিদিন অনেক শহরবাসী সিয়াংচিয়াং নদীর দু'তীরে বিশ্রাম করতে যায়।"

চেন হুয়ার কথা থেকে আমরা তাঁর মনের আনন্দ ও অহংকার উপলব্ধি করতে পারে। ২০১২ সালে চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিবেশন -- চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৮তম জাতীয় কংগ্রেসে 'জোরালোভাবে প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক নির্মাণকাজ এগিয়ে নেওয়া'র প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। এর সাহায্যে পুরোনো শিল্প নগর চুচৌর ভবিষ্যত আরো সুন্দর হবে। (ইয়ু/এসআর)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040