Web bengali.cri.cn   
ইউয়ুন্নান প্রদেশের সিশুয়াংবান্নার নান্দনিক দৃশ্য
  2013-02-06 15:45:33  cri

সুবর্ণা: আগেই বলা হয়েছে, সিশুয়াংবাননার মোট আয়তন প্রায় ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা ১১ লাখ ৩০ হাজার। তা চিংহোং শহর, মেং হাই জেলা ও মেংলা জেলা নিয়ে অঞ্চলটি গঠিত। 'তাই' জাতির ভাষায় 'মেং' অর্থ হল 'জেলা'। এখানে বাস-করা সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে 'তাই' জাতির লোকসংখ্যাই সবচে বেশি---- তিন লক্ষাধিক। লাওস ও মিয়ানমারের সাথে এলাকাটির ১০৬৯ কিলোমিটার সীমান্ত আছে।

আলিম: সিশুয়াংবাননায় গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানের সংখ্যা ৪৪টি। ২ লাখ হেক্টরের সংরক্ষিত প্রাকৃতিক এলাকার মধ্যে চার ভাগের এক ভাগ হচ্ছে বনাঞ্চল। বনের ভেতরে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উদ্ভিদের প্রজাতি আছে ৫০০০-এরও বেশি; আছে অর্ধশতাধিক প্রজাতির বুনো ফলমূলের গাছ এবং ৪০টির অধিক প্রজাতির ওষধি গাছ। এ ছাড়া, নিবিড় বনের মধ্যে ৪২৯ ধরনের পাখি ও ৬৭ ধরনের পশু আছে; আছে এশিয়ান হাতি, ভারতীয় বাঘ এবং চিতাবাঘ।

সুবর্ণা: হ্যাঁ, এশিয়ান এলিফ্যান্ট বা এশিয় হাতি প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই, ১৯৭৭ সালে সিশুয়াংবাননায় হাতি সংরক্ষণ এলাকা গঠন করা হয়। এর ফলে এতদঞ্চলে এশিয় হাতির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এশিয়ান গত শতাব্দীর ৮০ দশকে যেখানে এখানে এশিয়ান এলিফ্যান্ট ছিল মোটে ৮০টি; সেখানে বর্তমানে তা বেড়ে ৩০০টিতে দাঁড়িয়েছে।

চিংহং শহরের উত্তর দিকে অবস্থিত মেংইয়াং সংরক্ষিত প্রাকৃতিক এলাকায় ঘন বন দেখা যায়। সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ এশিয় হাতির বিচরণের জন্য বেশ উপযোগী। এ-জন্যে বর্তমানে সেটি এশিয়া হাতি সংরক্ষণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। আপনারা যদি এখানে বেড়াতে আসেন, তাহলে সহজেই হাতির দল দেখতে পাবেন। ঘন বনে হাতিগুলো নিরাপদে বিচরণ করে; এ-দৃশ্য বড়ই আনন্দদায়ক ও মনোরম।

আলিম: আচ্ছা, বন্ধুরা, এশিয়ান এলিফ্যান্টের কথাতো শোনা হলো। এবার গানের পালা। গানের নাম ঘন 'বাঁশ বনের ভেতরে'। গানের কথাগুলো মোটামুটি এমন: আশ্চর্য সুন্দর বাঁশ বনের ভেতরে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করি/ ভীষণ রোমেন্টিক বাঁশ বনের ভেতরে আমি তোমাকে ভালোবাসি/ প্রাকৃতিক ও রহস্যময় বাঁশ বনের ভেতরে আমি তোমাকে খুঁজে বের করি...

সুবর্ণা: শ্রোতাবন্ধুরা, 'তাই' জাতির ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। তাদের আছে নিজস্ব পঞ্জিকা, ভাষা, নাচ ও সংগীতসহ বিভিন্ন সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। 'তাই' জাতির ময়ুর নাচ ও হাতির নাচ খুবই প্রচলিত এবং দৃষ্টিনন্দন। 'তাই' জাতির সংগীত নাচের সাথে যেমন যায়, তেমনি যায় কবিতার সাথেও। 'তাই' জাতির লোকেরা বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বাস করে। এ জন্যে সিশুয়াংবাননায় আপনারা অনেক বৌদ্ধ ধর্মের মন্দির ও প্যাগোডা দেখতে পাবেন। ডিজাইনের দিক দিয়ে মন্দিরগুলো চীনের অন্যান্য অঞ্চলের মন্দির থেকে খানিকটা আলাদা। মন্দিরের ছাদের মাঝখানের অংশটি উঁচু এবং ক্রমশ সরু হয়ে উপরে উঠে যায়; এই অংশটুকু রঙ-বেরঙ-এর মণি-মানিক্য দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়, যা দূর থেকে দেখলে থাই মন্দিরগুলোর মতোই সুন্দর লাগে।

স্থানীয়রা বাঁশ দিয়ে তৈরী মাচান-ঘরে বাস করে। গরমের সময় এসব ঘরের পরিবেশ বেশ আরামদায়ক ও ঠাণ্ডা।

আলিম: 'তাই' জাতির লোকেরা পানি বেশ পছন্দ করে। তারা নিজেদের 'পানির জাতি' বলে ডাকতে পছন্দ করে। কথিত আছে, বুদ্বুদ যেমন ঢেউয়ের সাথে ভেঁসে চলে, 'তাই' জাতিও তেমনি নদীর সাথে ভেসে চলে। 'তাই' জাতির লোকেরা বিশ্বাস করে যে, পানিই হচ্ছে জীবনের উত্স। 'তাই' জাতির মধ্যে প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, দেবতারা পানি ও অন্যান্য পদার্থ মিশিয়ে বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন; তাই পানিই হলো বিশ্বের উত্স।

'তাই' জাতির লোকেরা সেসব স্থানেই বসবাস করে, যেসব স্থানে প্রচুর পানি আছে। 'পাহাড় না-থাকলে শিকার করবে না, নদী না-থাকলে মাচান ঘর নির্মাণ করবে না'—এ-নীতি অনুসরণ করে জীবনযাপন করে 'তাই' জাতির লোকরা।

সুবর্ণা: আলিম ভাই, আমরা জানি বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন ১৪ই এপ্রিল। 'তাই' জাতির নববর্ষের প্রথম দিনও কিন্তু ওই ১৪ এপ্রিল! বিষয়টা বেশ মজার, তাই না? নববর্ষের প্রথম দিনে তাই জাতির লোকেরা বুদ্ধের মূর্তিকে স্নান করায়, ড্রাগনের মাথা-ওয়ালা নৌযান চালনা করে এবং পানি ছিটানো উত্সব পালন করে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল হওয়ায়, এ-অঞ্চলের লোকজনকে দিনে কয়েকবার গোসল করতে হয়। ধান চাষ করতেও এখানে সেচের জন্য অনেক পানি লাগে। তবে, আমার কাছে, পানি ছিটানো উত্সবটি বেশ ভালো লাগে। এটা এক ধরণের খেলা এবং তা বেশ মজার। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ, যেমন লাওস, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে এ-ধরণের উত্সব চলাকালে সবাই একসঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে এবং পরস্পরের প্রতি পানি নিক্ষেপ করে। মাঝে মাঝে তারা গরম পানি ছিটিয়ে দেয় পর্যটকদের শরীরেও। আপনি ভিজে যাবেন, কিন্তু রাগ করবেন না। পর্যটকদের গায়ে অল্প গরমা পানি ছিটিয়ে দেয়ার মানে হচ্ছে, তারা পর্যটকদের উঞ্চ অভ্যর্থণা জানাচ্ছে।

আলিম: বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যেও কিন্তু এক ধরণের পানি ছিটানো উত্সব হয়। সেসব অনুষ্ঠানে অবশ্য কেবল তরুন-তরুনীরা পরস্পরের শরীরে পানি ছুড়ে মারে। সেটাও বেশ মজার এক উত্সব। সে যাক, এবার আবারও গান শোনার পালা। গানের নাম 'সিশুয়াংবাননা'। গানের কথাগুলো মোটামুটি এমন: আমার স্বপ্নে একটি জায়গা আছে, সেটি আমার জন্মস্থান/ সেখানে দীর্ঘ নদী ও উঁচু পাহাড় দেখা যায়/ আকাশে সুন্দর চাঁদ ঝুলে থাকে/ আমি মনে মনে আমার প্রেয়সীকে মিস করি/ কবে যাবো তার কাছে?/ আমার জন্মস্থান সিশুয়াংবাননা/ সে এক রহস্যময় জায়গা, যেখানে আমার প্রেয়সীর সুন্দর মুখ আর উজ্জ্বল চাঁদ আমার মনে গভীরভাবে দাগ কেটে যায়..


1 2 3
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040