Web bengali.cri.cn   
ফুচিয়ানের সামুদ্রিক অর্থনীতি
  2013-01-28 16:22:45  cri

 ফুচিয়ান প্রদেশ হলো চীনের উপকূল বরাবর সবচেয়ে দীর্ঘ প্রদেশ। এ প্রদেশের অর্থনীতির আকারের এক-চতুর্থাংশ হচ্ছে তার সামুদ্রিক অর্থনীতি। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ 'প্রণালীর পশ্চিম তীরের অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন পরিকল্পনা' অনুমোদন করে। এর পর ফুচিয়ান 'প্রণালীর নীল অর্থনৈতিক পরীক্ষা অঞ্চল' প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিয়েছে এবং শক্তিশালী উপকূলীয় প্রদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।

গুয়ানউ গ্রাম

ফুচিয়ান প্রদেশের রাজধানী ফুচৌ শহরের হুয়াংছি উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে গুয়ানউ নামে একটি গ্রাম আছে। সেপ্টেম্বর হচ্ছে সামুদ্রিক গুল্মবীজ বপন করার মৌসুম। এ গ্রাম চীনের বৃহত্তম গুল্ম প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র। কুয়ানউ গ্রামের কমিউনিস্ট পার্টি কমিটির সম্পাদক লিন চেন লোং বলেন, এখন কুয়ানউ গ্রামের উত্পাদিত গুল্মের বীজ চীনের ৬৫ শতাংশ বাজার দখল করেছে। তারা ঐতিহ্যবাহী গুল্মের বন্ধন, গুল্মের নুডলস আর গুল্মের পানীয় উত্পাদন করে। এভাবে গুল্মের মূল্য সংযোজন বহু গুণ বেড়েছে। তাদের বার্ষিক উত্পাদনের পরিমাণ টাকার অঙ্কে ৫ কোটি ইউয়ানেরও বেশি। এ বছর কুয়ানউ গ্রাম আবার সামুদ্রিক শসা প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা আমদানি করেছে। এরপর থেকে তারা প্রতিবছর ২০ টনেরও বেশি শুকনো সামুদ্রিক শসা প্রক্রিয়াকরণ করতে পারবে।

লিন চেন লোং বলেন, "আমরা ১৯৯৩ সাল থেকে গুল্ম প্রক্রিয়াকরণ শুরু করি। উঁচু মানের শুষ্ক গুল্ম প্রক্রিয়াকরণের জন্য আমরা নানা প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি।"

প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১১ সালে ফুচিয়ান প্রদেশের জলজ দ্রব্যের মোট উত্পাদনের পরিমাণ ছিল ৬০ লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ টন। ওই বছর জলজ দ্রব্যের রপ্তানি থেকে আয় হয় ৪০৫ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। গত বছর ফুচিয়ানের চাংচৌ তোংশানের হাইখুই জলজদ্রব্য কোম্পানির শেয়ার জার্মানির ফ্রাংকফুর্টের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ কোম্পানি হচ্ছে চীনের জলজদ্রব্য শিল্পের মধ্যে জার্মান শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত প্রথম শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ কোম্পানির চেয়ারম্যান চেন চেন খুই বলেন, "শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্তির পর আমরা এক কৌশলগত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। এর প্রথম কাজ হলো উত্পাদনের দক্ষতা সম্প্রসারণ করা। আমরা নতুন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কিনেছি এবং দেশ-বিদেশে বিক্রয়ের নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছি। বিনিয়োগকারীরা অতি ভালো সাড়া দিয়েছে। তাঁরা এ খাতের ভবিষ্যত সম্ভাবনার ব্যাপারে আশাবাদী।"

সিয়ামেনের উইউয়ানওয়ান বন্দর

সিয়ামেনের উইউয়ানওয়ান বন্দরে অনেক প্রমোদতরী-অবস্থান আছে। এখন এখানকার নবোদিত সামুদ্রিক শিল্প – প্রমোদতরী সেবা শিল্প দ্রুত বিকশিত হয়েছে। বন্দরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ছাই চি বিন সংবাদদাতাকে বলেন,"জাহাজঘাটার দ্বিতীয় পর্যায়ের সম্প্রসারণ প্রকল্প সবেমাত্র সম্পন্ন হয়েছে। এবার আমরা আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক স্থাপনা যুগিয়েছি। একটা হচ্ছে প্রমোদতরীতে তেল ভরার স্থাপনা। আরেকটা হচ্ছে প্রমোদতরী উত্তোলন করার স্থাপনা। এখন গোটা জাহাজঘাটা বিশ্বের মৌলিক মানে পৌঁছেছে।"

নবোদিত সামুদ্রিক শিল্প প্রাণবন্ত হয়ে উঠার পাশাপাশি ফুচিয়ান প্রদেশ বন্দর অর্থনীতির ওপরও মনোযোগ দিয়েছে। চাংচৌ বিনিয়োগ আকর্ষণ ব্যুরোর অধীনস্থ অর্থনীতি ও প্রযুক্তি উন্নয়ন অঞ্চলের ফুচিয়ান হাওশি ওয়েইমা ইস্পাত কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মহাতত্ত্বাবধায়ক ঔস্ট বলেন, "এ কোম্পানির ৪০০০ টন ভারি মাস্ট ক্রেন বিশ্বের সেরা দশটি ক্রেনের মধ্যে স্থান পাবে। এটির আকার বিশাল। এর উচ্চতা ১০০ মিটারেরও বেশি। এটা প্রধানত সামুদ্রিক পেট্রোলিয়াম নিষ্কাশন করার সময় ব্যবহৃত হয়। এমন কী ৪০০০ টন ক্রেনের শক্তি দিয়ে একবারে ৪০০০টি ট্রাক উত্তোলন করা যায়।"

চাংচৌ শহরে ৭৩ কোটি ইউয়ান ব্যয়ে একটি জাহাজঘাটা নির্মাণ করবে হাওশি ওয়েইমা। সে জাহাজঘাটা সিয়ামেনওয়ান আর দক্ষিণ পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলের বড় ইস্পাতের মালপত্র বহন আর জাহাজগুলোকে সেবা দেবে। ২০২০ সাল নাগাদ সিয়ামেন দক্ষিণ-পূর্ব আন্তর্জাতিক জাহাজ পরিবহণ কেন্দ্রের মূল উপাদান ও কাঠামো মোটামুটিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। ভবিষ্যতে সিয়ামেন পণ্য, অর্থ, প্রযুক্তি ও তথ্য মিলিয়ে চতুর্থ প্রজন্মের আন্তর্জাতিক জাহাজ পরিবহণ কেন্দ্রে পরিণত হবে।

সিয়ামেন বন্দর ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর মহাপরিচালক ছাই লিয়াং ইয়া বলেন,"এখন প্রধানত দুটি কাজ করতে হবে। প্রথমত, হাইছাংয়ে দক্ষিণ-পূর্ব আন্তর্জাতিক জাহাজ পরিবহণ সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। দ্বিতীয়ত, সক্রিয়ভাবে জাহাজ পরিবহণ বিনিময় কেন্দ্র, জাহাজের সামগ্রী সরবরাহকেন্দ্র আর দু'পারের সামুদ্রিক বিষয়সম্পর্কিত সালিসকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ দ্রততর করা।"

গত আগস্টে ফুচিয়ান প্রদেশ 'সামুদ্রিক অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন সম্পর্কিত নানা মতামত' নিয়ে আলোচনা করেছে। এ প্রদেশের সমুদ্র ও মত্স্যশিল্প বিভাগের উপপ্রধান চাং ফু শো বলেন, "২০১৫ সাল নাগাদ ফুচিয়ানের সামুদ্রিক অর্থনীতির আকার হবে ৭৩০ বিলিয়ান ইউয়ান। বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এটা গোটা প্রদেশের মোট উত্পাদনের ২৮ শতাংশে দাঁড়াবে। এভাবে আমরা মোটামুটিভাবে সামুদ্রিক অর্থনীতির শক্তিশালী প্রদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জন করবো।" (ইয়ু/এসআর)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040