Web bengali.cri.cn   
দাভোসে জায়গা বাড়ছে আফ্রিকার
  2013-01-28 16:03:45  cri

  আফ্রিকার দশজন রাষ্ট্রীয় নেতা একসাথে ২০১৩ সালের দাভোস ফোরামে উপস্থিত হয়ে চলতি বছরের দাভোস ফোরামের এক বিশেষ আকর্ষণে পরিণত হয়েছেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয়েছে যে, আফ্রিকা মহাদেশ বিশ্ব অর্থনৈতিক চক্রে মিশে যাচ্ছে।

এক সময় দাভোস ফোরামকে 'ধনীদের ক্লাব' বলা হতো। যারা সেখানে উপস্থিত থাকতেন তাঁরা হতেন হয় সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি, না হয় বড় নেতা অথবা বাণিজ্য খাতের বিখ্যাত ব্যক্তি। ফোরামের জন্য হাজার হাজার মার্কিন ডলারের বার্ষিক ফি প্রদান ছিল আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য বড় বিলাসী ব্যাপার। গত চল্লিশ বছরেরও বেশি সময়ে দাভোসের সঙ্গে আফ্রিকার তেমন সম্পর্ক ছিল না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু'একজন আফ্রিকান নেতা দাভোস ফোরামে উপস্থিত থাকলেও মঞ্চের কেন্দ্রে দাঁড়ানো শিল্পোন্নত দেশগুলোর রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক খাতের তারকাদের তুলনায় তাঁরা সবসময় দৃষ্টি থেকে দূরে রয়েছে। ২০০৯ সালে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও দাভোস ফোরামে ভাষণ দেয়ার সময় বলেন, "আমি আশা করি, আর্থিক সংকট মোকাবিলার সময় কোনো শিল্পোন্নত দেশ সবচেয়ে গরীব দেশের কথা ভুলে যাবে না। আমি আশা করি, দাভোস ফোরাম আরেকটি সুনাম অর্জন করবে। তাকে শুধু ধনীদের ক্লাব না বলে, তাকে গরীবদের দাভোসও বলা হবে।"

সত্যি সত্যিই, আফ্রিকার অনুন্নয়ন আর দাভোসের বিলাসের মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে অনুন্নত দশটি দেশই আফ্রিকায় অবস্থিত। ফলে আফ্রিকাকে বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের তালিকার বাইরে রাখা উচিত না। আফ্রিকার উন্নয়ন ছাড়া বিশ্বের আসল উন্নয়ন হবে না। ২০০৯ সালে জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়নলক্ষ্য নির্ধারণ করে, যাতে বলা হয় ২০১৫ সালের মধ্যে সারা বিশ্বের দারিদ্র অর্ধেকে নামাতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের চূড়ান্ত সময়সীমায় পৌঁছাতে এখনো দু'বছর সময় বাকি আছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন এ বছর দাভোস ফোরামে সহস্রাব্দ উন্নয়নলক্ষ্যের পরের বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা করেন।

২৩ জানুয়ারি ফোরামের উদ্বোধনী দিনে অনুষ্ঠিত 'আফ্রিকায় বিনিয়োগ ঝুঁকি কমানো' শীর্ষক প্রথম আলোচনাসভায় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকোব জুমা এবং নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট গুডলাক জোনাথানের মধ্যে মতভেদ থাকলেও একটি বিষয়ে তাঁদের মধ্যে মতৈক্য হয়েছে। সেটা হলো আফ্রিকা মানে নতুন সুযোগ।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত দু'বছরে আফ্রিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ শতাংশের ওপরে। এটা বিশ্বের গড় প্রবৃদ্ধিহারের চেয়ে অনেক বেশি। আফ্রিকা উন্নয়ন ব্যাংকের অনুমান হলো, ২০১৩ সালে অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি হার হবে ৫.৩ শতাংশ । আফ্রিকা বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি-অর্জন অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এটা আফ্রিকার ভরসা এবং বিশ্বের প্রত্যাশা।

ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতের শিল্পপতি সুনিল ভারতি মিত্তাল বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনিয়োগ করেছেন আফ্রিকায়। তিনি বলেন, "যদিও আফ্রিকায় বিনিয়োগ-পরিবেশ তেমন সন্তোষজনক নয়। তবু সেটা বিনিয়োগকারীদের প্রবেশে বাধা হয়নি। কারণ এখানে বিশাল সুযোগ লুকিয়ে আছে।"

দাভোস ফোরামে আফ্রিকা সম্পর্কিত আলোচ্য বিষয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, আফ্রিকার ওপর বিশ্বের দৃষ্টি ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। আফ্রিকার নেতাদের ব্যাপক অংশগ্রহণ মানে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় আফ্রিকার দেশগুলোর মিশে যাওয়া এবং নিজের উন্নয়ন অর্জনে জরুরি আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এটা হবে আফ্রিকার উন্নয়ন অর্জনে সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি।

দাভোস ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন আফ্রিকার জন্য কতটা নির্দিষ্ট সুফল বয়ে আনবে, তা স্পষ্ট না হলেও এর মধ্য দিয়ে একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। আর সেটি হলো আফ্রিকা বিশ্ব অর্থনৈতিক চক্রে প্রবেশ করছে। আফ্রিকার জন্য এ বছরের দাভোস সম্মেলনের ঐতিহাসিক তাত্পর্য রয়েছে। (ইয়ু/এসআর)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040