Web bengali.cri.cn   
চাঙা হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি
  2013-01-21 18:01:22  cri
নতুন বছরের শুরুতে বিশ্ব অর্থনীতি চাঙা হওয়ার কিছুটা লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, একাধিক কারণে বিশ্ব শেয়ারবাজারে এই উত্থান ঘটেছে। বিশ্ব বাণিজ্যপ্রবাহে গতি কিছুটা জোরালো হয় সদ্যবিদায়ী বছর শেষ হওয়ার আগেই। তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিসকল ক্লিফ আপাতত দূর হওয়ায় সেটা বিশ্ব অর্থনীতিতে তাত্ক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।

গত ১০ জানুয়ারি সাপ্তাহিক লেনদেন শেষে বিশ্ব শেয়ারবাজারের সূচক আট মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্ব শেয়ারবাজারের প্রতিনিধিত্বমূলক নির্দেশিকা হিসেবে খ্যাত এমএসসিআই ওয়ার্ল্ড সূচক ওই দিন শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়ে ৩৪৯ দশমিক ৩০ পয়েন্টে দাঁড়ায়। বিশ্বের ২৪টি উন্নত ও ২১টি উদীয়মান অর্থনীতির প্রধান শেয়ারবাজারগুলোকে সমন্বিত করে গঠিত এ সূচক এর আগে সর্বশেষ গত মে ১০ জানুয়ারির চেয়ে বেশি ছিল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বেশ কয়েকটি কারণে বিশ্ব শেয়ারবাজারে এই উত্থান ঘটেছে। আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত স্পেন সরকারের বিশ্ব বাজার থেকে ঋণ গ্রহণের নিলামে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দর উঠেছে। এর ফলে স্প্যানিশ বন্ডের সুদের হার ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এর অর্থ হলো স্প্যানিশ বন্ডকে আগের চেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে অর্থাত্ ঘাটতি অর্থায়নে স্পেন সরকারের সক্ষমতার প্রতি আস্থা কিছুটা বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, নভেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ব্যাপকভাবে বাড়ার ফলে বাণিজ্য-ঘাটতি প্রায় ১৬ শতাংশ বেড়ে চার হাজার ৮৭০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যেটি এপ্রিল মাসের পর সর্বোচ্চ। ওই সময়কালে বহির্বিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি দাঁড়ায় ২৩ হাজার ১৩০ কোটি ডলারে। এর মধ্যে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ে ৪৬০ কোটি ডলার।

এদিকে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) নীতিনির্ধারণী সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে। যদিও আগে ধারণা করা হচ্ছিল, সুদের হার সামান্য কমিয়ে অর্থপ্রবাহকে আরেকটু শিথিল করা হবে, কিন্তু বাস্তবে সেটা করা হয়নি। আর সেকারণে বেড়েছে ইউরোর দর।

একই সময়ে জাপান সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে, অর্থনীতিকে চাঙা করার লক্ষ্যে দেশটি অবকাঠামো নির্মাণ ও পুনর্গঠনসহ ব্যবসা সম্প্রসারণে ১১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ব্যয় করবে। সরকারের ধারণা, এ অর্থ ব্যয়ের ফলে ছয় লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুই শতাংশ বাড়বে। পাশাপাশি চীনের মূল্যস্ফীতি ২০১১ সালের ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে ২০১২ সালে ২ দশমিক ৬০ শতাংশে নেমে এসেছে।

তবে কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, এসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না যে, বিশ্ব অর্থনীতি দ্রুত চাঙা হয়ে উঠবে। তবে আশাবাদীরা বলছেন, একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়। তারপর আবার তা ঘুরে দাঁড়ায় এবং চাঙা হয়। এভাবে চক্রাকারে অর্থনীতি অগ্রসর হতে থাকে। তাদের ভাষ্য হচ্ছে, মন্দার কালটি বিশ্ব অর্থনীতি পার হয়ে এসেছে এবং এখন চাঙ্গার কালে প্রবেশ করেছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সৃষ্ট আর্থিক সংকটের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের মন্দা নেমে আসে। এর পরের বছর সে মন্দা আরও গভীর হয়। ২০১০ সালে বিশ্ব অর্থনীতি গতি কিছুটা ফিরে পেলেও ইউরোপের আর্থিক সংকটের প্রভাবে সেটা টেকসই হতে পারেনি। এরপর ২০১১ ও ২০১২ সালেও মন্দা প্রবণতা বজায় থাকে। বিশ্বমন্দার এ পরিস্থিতিতে পণ্য ও সেবার চাহিদা কমে যায়, লাখ লাখ লোক বেকার হয়ে পড়ে এবং উত্পাদন কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দেয়।

ইউরোপে যে সংকটটা দেখা দেয়, তা মূলত আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম থেকে সৃষ্ট। আর্থিক বাজারে ফাটকাবাজি মাত্রাতিরিক্ত হয়ে পড়ায় কেবল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিপদে পড়েনি, রাষ্ট্রের জন্যও বিপদ ডেকে এনেছে। আর তাই স্পেন, গ্রিস ও পর্তুগালসহ অভিন্ন মুদ্রা ইউরো ব্যবহারকারী বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ভিত নড়ে ওঠে। এমনকি ইউরোর অখণ্ডতা ও ভবিষ্যত্ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

আর আমেরিকা-ইউরোপের প্রলম্বিত মন্দার বিপরীতে উদীয়মান অর্থনীতিগুলো বিশেষ করে ব্রিক সদস্যদেশগুলো, অর্থাত্ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছিল, তাও পুরোপরি ফলেনি। চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে গত বছর দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৭০ শতাংশে। ভারতের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশের নিচে নেমে আসে। অন্যদিকে ব্রাজিলের প্রবৃদ্ধি ২০১০ সালে সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে একেবারে ২ শতাংশের পড়ে যায়।

কোনো কোনো বিশ্লেষকের ধারণা, বেশিরভাগ মানুষের প্রবণতা হলো নতুন বছরের প্রথম দিকে সুখবর খোঁজা। বিশ্ব অর্থনীতি চাঙা হওয়ার যে আভাস দেখা যাচ্ছে, সেটা হয়তো সে মানসিকতারই প্রভাবে। তবে বছরের প্রারম্ভে দেখা দেওয়া চাঙ্গাভাব স্থায়ী হবে কিনা তা দেখতে অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। (সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, ব্লুমবার্গ)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040