|
ক. হংকং চীনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ আর্থিক কেন্দ্র, শপিং স্বর্গ ও পরিবহন বন্দর হিসেবে বিশ্বখ্যাত। এখানকার পণ্যদ্রব্য শুল্কমুক্ত হওয়ার কারণে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা শহরটির প্রতি আকৃষ্ট হন। হংকংয়ের চীনা নাম 'সিয়াংকাং', 'হংকং' হচ্ছে ক্যানটোনিস ভাষার উচ্চারণ। চীনা ভাষায় এর অর্থ 'সুগন্ধী বন্দর'। হংকংয়ের নাম সম্পর্কে কয়েকটি ধারণা প্রচলিত আছে। প্রথমত নামটি সুগন্ধীদ্রব্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রাচীনকালের সোং ও ইউয়ান রাজবংশের আমলে চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের তুং কুয়ান শহরের সুগন্ধীদ্রব্য বিশ্ববিখ্যাত ছিল। তখন হংকং দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলের একটি ছোট বন্দরের মাধ্যমে চীনের সুগন্ধীদ্রব্য বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করা হতো। পরে লোকজন এ বন্দরকে 'হংকং' বলে ডাকা শুরু করে।
খ. দ্বিতীয় ধারণা অনুসারে, সিয়াংচিয়াং নদীর সাথে কয়েকটি ছোট নদী মিলিত হবার ফলে একটি দ্বীপের সৃষ্টি হয়। এই ছোট দ্বীপটিকে লোকেরা সিয়াংকাং বা হংকং বলে ডাকতে শুরু করে। সে যাক, হংকং প্রধানত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। একটি অংশের আয়তন ৮১ বর্গ কিলোমিটার; চিউ লোং উপদ্বীপের আয়তন ৪৭ বর্গ কিলোমিটার এবং সিনচিয়েসহ অন্যান্য ছোট দ্বীপের মোট আয়তন ৯৭৬ বর্গ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে হংকং-য়ের মোট আয়তন ১১০৪ বর্গ কিলোমিটার। আমাদের পর্যটক দলের গাইড জনাব লিউ বললেন,
ক. 'হংকংয়ের অধিকাংশ অঞ্চলে পাহাড় দেখা যায়; এখানে সমতল ভুমি খুব কমই আছে। এখানকার লোকসংখ্যা এক কোটি ত্রিশ লাখেরও বেশি। তবে, তাদের বাসস্থানগুলোর আয়তন সাধারণত খুবই কম। হংকংয়ের একটি ফ্লাটের প্রতি বর্গমিটারের দাম কমপক্ষে ৭০ হাজার ইউয়ান। অর্থাত ৩০ বর্গমিটারের একটি ছোট ফ্লাট কিনতে গেলেও এখানে ২৫ লাখ ইউয়ান লাগবে।'
খ. গাইডের কথা শুনে আমি অনেক অবাক। তবে রাতে হোটেলে প্রবেশ করার সময় তাঁর কথার মর্ম বুঝতে পেরেছি। হোটেলের কক্ষে মাত্র একটি বিছানা; অন্যান্য আসবাবপত্রের আকারও অনেক ছোট এবং ওয়াশরুমও খুবই সংকীর্ণ। একজন লোক কোনোরকমে ভেতরে দাঁড়াতে পারবে।
ক. হংকং-য়ের গল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আগে শ্রোতাদের একটা গান শোনালে কেমন হয়? গানের নাম 'প্রাচ্যের মুক্তা'। গানের কথা এমন: ছোট নদী ধীরে ধীরে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়/ অবশেষে সিয়াংচিয়াং নদীতে গিয়ে মিশে যায়/ প্রাচ্যের মুক্তা, আমার প্রেমিকা, তুমি কি আগের মতোই রোম্যান্টিক আছো?/ চাঁদের আলোয় সুন্দর বন্দর, অন্ধকার রাতে বাসাবাড়ির বাতিগুলো কী দারুণ উজ্জ্বল....
ক. গানতো শোনা হলো। প্রিয় শ্রোতা, চলুন আবার হংকংয়ে ফিরে যাই। চিউ লোং ও সিয়াংকাং দ্বীপের মধ্যে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া বন্দরের রাতের দৃশ্য দারুণ সুন্দর। এর দু'পাশে উচুঁ উঁচু ভবন দাঁড়িয়ে থাকে। রাতের বেলা উঁচু ভবনের জানলা দিয়ে বাইরে তাকালে দেখা যায় নানা রঙের বাতিতে সাজানো হংকংকে। দৃশ্যটি বড়োই সুন্দর।
খ. শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা যদি এখানে বেড়াতে আসেন, তাহলে রাতে ভিক্টোরিয়া বন্দরের দুই তীরে অবশ্যই হাঁটবেন। সেটি হবে আপনাদের জন্য চমত্কার একটি অভিজ্ঞতা। সমুদ্রের বাতাসের ভেতর দিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকার হাত হাত রেখে হেটে যাওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি দু'তলার স্টার ফেরিতে বসে ভিক্টোরিয়া বন্দরের দু'পাশের সুন্দর ভবন ও পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করেছি। সত্যিই সে অভিজ্ঞতা অনেক মজার। বসন্তকালে হংকংয়ের লোকেরা চীনাদের গুরুত্বপূর্ণ উত্সব বসন্ত উত্সব উদযাপন করতে ভিক্টোরিয়া বন্দরের কাছে আতশবাজি পোড়ায়। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। ভিক্টোরিয়া বন্দরের অপর দিকে আরেকটি সমৃদ্ধ ব্যবসাকেন্দ্র আছে; এর নাম চোংহুয়ান। সেখানে বিশ্বের নানা ব্যাংকের অফিস আছে। চোংহুয়ান হচ্ছে হংকংয়ের বিখ্যাত আর্থিক ও ব্যবসা এলাকা। চোংহুয়ানের শপিং মলটি বিশাল এবং এখানে বিশ্বের বিখ্যাত ব্র্যান্ড যেমন এলভি, কুচি, অ্যাপল ইত্যাদির পণ্যদ্রব্য পাওয়া যায়।
ক. আমি শুনেছি, চোংহুয়ান এলাকার একটি রাস্তা খুবই বিখ্যাত। এর নাম হুয়াংহৌ পূর্ব রাস্তা। গত শতাব্দীর ৯০এর দশকে চীনের তাইওয়ান প্রদেশের গায়ক লুও তা ইয়ো এ-রাস্তা নিয়ে একটি গান রচনা করেছিলেন। তখন এ-গানটি চীনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আমরা এখন শ্রোতাবন্ধুদের সঙ্গে এ-গানটি শুনবো।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |