|
ক. সিহু হ্রদটি অবস্থিত শহরের পশ্চিম দিকে। এ অঞ্চলে পাহাড়, হ্রদ আর অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান মিলে সৃষ্টি হয়েছে এক অপূর্ব দৃশ্যের। প্রতিবছরই আগ্রহী দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সিহু হ্রদে বেড়াতে আসেন। ২০১১ সালের জুন মাসে সিহু হ্রদ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের বিশ্ব উত্তরাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
খ. হাংচৌ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশ্বখ্যাত। তবে, এই সৌন্দর্যের মূল কারণ সিহু হ্রদ। হ্রদের তিন দিকে পাহাড়, পূর্ব দিকে হাংচৌ শহর। সিহু হ্রদের আশেপাশে মোট ১০টি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এসব স্থানের প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তারপরও আমরা চেষ্টা করবো শ্রোতাদের কাছে সে সৌন্দর্য প্রকাশ করতে। তবে তার আগে একটি গান শুনে নিলে কেমন হয়? গানের নাম নানপিংওয়ানচোং।
ক. নানপিংওয়ানচোং সিহু হ্রদের কাছে অবস্থিত একটি দর্শনীয় স্থানের নাম। চীনা ভাষায় নানপিং হচ্ছে হাংচৌ শহরের একটি পাহাড়ের নাম। আর ওয়ানচোং একটি বড় ঘন্টার নাম। নানপিং পাহাড়ের নিচে একটি মন্দির আছে। এ-মন্দিরের বড় ঘন্টাটিই ওয়ানচোং। প্রাচীনকাল থেকে চীনাদের সন্ধ্যাবেলায় ঘন্টা বাজানোর অভ্যেস আছে। এ ঘন্টার শব্দ বেশ উঁচু এবং স্পষ্ট। তো, বলছিলাম গানের কথা। গানটিতে বলা হয়েছে: আমি তাড়াতাড়ি বনে প্রবেশ করি/ দেখেছি নিবীড় বন/ আমি তাকে খুঁজতে পারি না/ তবে বাতাসে বনের শাখার আন্দোলন দেখেছি...
খ. আচ্ছা, সুন্দর গানটি শোনার পর এখন সিহু হ্রদের তথ্য জানিয়ে দিচ্ছি। সিহু হ্রদের আয়তন প্রায় ৬.৫ বর্গকিলোমিটার, দক্ষিণ থেকে উত্তর পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩.২ কিলোমিটার এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত এর বিস্তার প্রায় ২.৮ কিলোমিটার। পাহাড়ের আড়ালে সিহু হ্রদ। পাহাড়, হ্রদ ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ এ-স্থানটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা। সিহু হ্রদ পর্যটন এলাকায় দুটি কজওয়ে আছে। চীনা ভাষায় এগুলো নাম 'সুদি' আর 'বাইদি'। এ দুটি কজওয়ে সিহু হ্রদকে পাঁচটি অংশে ভাগ করে। ভাগ হওয়া ছোট হ্রদগুলোর নাম: ওয়াইসিহু, হৌসিহু, লিসিহু, নানহু ইত্যাদি। এর মধ্যে ওয়াইসিহু'র আয়তন সবচে বড়। সিহু হ্রদের হাঁটা পথ দিয়ে একবার ঘুড়ে আসলে অতিক্রম করা হয় প্রায় ১৫ কিলোমিটার। এ হ্রদের গড় গভীরতা ২.২৭ মিটার।
ক. হ্রদের কাছে পাহাড় থাকে। কুশান পাহাড় হল সিহু হ্রদে বৃহত্তম প্রাকৃতিক দ্বীপ, তার আশেপাশে তিনটি কৃত্রিম দ্বীপ দেখা যায়, এ তিনটি দ্বীপ ওয়াইসিহু হ্রদের কেন্দ্রীয় এলাকায় নির্মিত হয়। ফলে সিহু পর্যটন এলাকার এক পাহাড়, দুটি প্যাগোডা, তিনটি দ্বীপ, তিনটি কজওয়ে আর পাঁচটি হ্রদের অবকাঠামো গড়ে উঠেছে।
খ. হাংচৌ শহরের সুন্দর দর্শনীয় স্থানকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য, চীনা গণব্যাংক প্রকাশিত এক ইউয়ানের রেনমিনপিতে সানথানইনইউয়ে'র ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। সানথানইনইউয়ে'র অর্থ হল তিনটি ছোট প্যাগোডা ও চাঁদের ছায়া। সিহু হ্রদের নিচের পলিমাটির পরিমাপ করার জন্য প্রাচীনকালে সোং রাজবংশের লোকরা সিহু হ্রদের সবচে গভীর এলাকায় তিনটি ছোট প্যাগোডা নির্মাণ করে। এগুলোর মাধ্যমে হ্রদের নিচে পলিমাটির পরিমান হিসেব করা হয়। প্রতি বছরের শারদীয় উত্সবে লোকেরা এ তিনটি প্যাগোডার মাঝখানে মোমবাতি জ্বালায়। প্রতি প্যাগোডায় পাঁচটি গুহা আছে। মোমবাতি জ্বালালে দূর থেকে দেখে চাঁদের মতো উজ্জ্বল মনে হয়। আরো মনে হয় হ্রদের ছায়াসহ চাঁদের সংখ্যা ৩৩টি। এ ধরনের রহস্যময় দৃশ্য শুধু শারদীয় উত্সবে দেখা যায়।
ক. কী আশ্চর্য! এ-কথা আমি প্রথমবারের মতো শুনলাম!! এর নাম হল সানথানইনইউয়ু, তাইনা? ঠিক আছে। তাহলে এখন শ্রোতাবন্ধুদেরকে আরেকটি সুন্দর গান শোনাই। গানের নাম 'সিহু হ্রদের বৃষ্টি'। গানের শিল্পী চীনে অতি জনপ্রিয় গায়িকা চাং লিয়াং ইং। তাঁর কন্ঠ খুবই মিষ্টি ও শক্তিশালী। যে কোনো ধরনের গান গাইতে পারেন এই শিল্পী।
খ. গানের কথায় বলা হয়েছে: বৃষ্টি অবিরাম ঝরে/ সিহু হ্রদের উপর কুয়াশার আস্তরন/ তুয়ানছিয়াও সেতু ও কাগজের ছাতার মাধ্যমে আমার মনের দুঃখ প্রকাশিত হয়/ কে নৌকায় বসে আমার জন্য মনের গল্প লেখে?
গানের কথাগুলো নেয়া হয়েছে সিহু হ্রদ নিয়ে রচিত একটি সুন্দর রূপকথা থেকে। আগে গানটি শোনা যাক; পরে রূপকথায় আসবো।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |