Web bengali.cri.cn   
চেক প্রজাতন্ত্রের একজন চিত্রকরের চীনা জীবন সম্পর্কে
  2012-09-10 16:32:44  cri

তিনি একজন চিত্রকর। এর পাশাপাশি তিনি একজন 'চীনা অনুরাগী'। চীনের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও চিত্রের ওপর তার কৌতুহল অত্যন্ত বেশি। তা ছাড়া এসব ক্ষেত্রে তার জ্ঞানও অনেক। সুতরাং অনেকে তাকে 'চীন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ' বলে অভিহিত করে। তিনি একজন চীনাকে বিয়ে করেছেন। এখন তার পরিবার পেইচিংয়ের থাংচো জেলায়। বতর্মানে এ দম্পতি চীনা-চেক চিত্রশালা ব্যবস্থাপনা করছে। এই চিত্রশালা সম্প্রতি চালু হয়েছে।

এ ব্যক্তির নাম ইরি। তিনি চেক প্রজাতন্ত্রের নাগরিক। কিন্তু তিনি চীনকে তার দ্বিতীয় জন্মস্থান মনে করেন। তিনি বাকি জীবন চীনে কাটানোর পরিকল্পনা করেছেন। সম্প্রতি সি আর আইয়ের একজন নিজস্ব সংবাদদাতা ইরির সাক্ষাত্কার নেন। সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, চীনের সংস্কৃতির ওপর তার কৌতুহল ছিল ছোটবেলা থেকে। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে তিনি ছবি আঁকাতে পছন্দ করেন। একদিন তিনি হঠাত্ টের পান, তিনি তার চারপাশের চীনা পণ্য পছন্দ করতে শুরু করেন। বিশেষ করে প্যাকিং কাগজে চীনা ভাষার ওপর তার কৌতুহল বেড়ে যায়। তা ছাড়া, তিনি চীনের চিত্রও খুব পছন্দ করেন। চীনে আসার আগে তিনি চীনের অনেক বিখ্যাত চিত্রকরের ছবি অনুশীলন করেছেন। চীনের বিখ্যাত চিত্রকর ছি বাই সি তার শ্রদ্ধার পাত্র। চীনের চিত্র অঙ্কন রপ্ত করার জন্য তিনি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল পাস করার পর গ্রাগের ছালি বিশ্ববিদ্যায়ে চীনা ভাষা শিখতে যান। তিনি ভালভাবে জানেন, চীনা চিত্রের আসল মর্ম পুরোপুরি বুঝতে চাইলে প্রথমে চীনা ভাষা শিখতে হবে এবং চীনা ভাষা রপ্ত করতে হবে।

১৯৯৫ সালে ইরি একাই চীনের কেন্দ্রীয় চিত্র ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। তখন থেকে তিনি চীনের চিত্র অঙ্কন শুরু করেন। তিনি বলেন, চীনের ঐতিহ্যবাহী চিত্র তার খুব ভাল লাগে। চীনের কেন্দ্রীয় চিত্র ইনস্টটিউটে তার শেখার প্রধান বিষয় হলো চীনের ঐতিহ্যবাহী চিত্র। এ ধরনের চিত্রে অনেক কৌশল ব্যবহার করতে হয়। তিনি বলেন, তিনি প্রতিদিন কমপক্ষে ছ' ঘন্টা চিত্র আঁকেন। কয়েক বছর তিনি বাঁশ ছাড়া আর কিছু আঁকেন না। তিনি একটানা কয়েক বছর ধরে কেবল বাঁশ আকার চর্চা করতে থাকেন। বাঁশ আঁকতে আঁকতে বেশ কয়েক বার তিনি ভাত খেতে ভুলে যান। তিনি বলেন, তার বাঁশ আঁকার দক্ষতা উন্নত করার জন্য তিনি ছুটির দিনে পেইচিংয়ের কয়েকটি পার্কে আসল বাঁশ দেখতে যান। প্রাকৃতিক বাঁশ দেখার পর তার চিত্র আঁকার দক্ষতা ও কৌশল উন্নত হয়েছে।

চীনে আসার আগে ইরি কয়েক বছর পশ্চিমের তৈলচিত্র অঙ্কন শিখেছিলেন। তৈলচিত্রের প্রভাবে চীনের ঐতিহ্যবাহী চিত্রের প্রতি ইরির উপলব্ধি অন্য রকম। গত কয়েক বছরের চর্চার ফলে তিনি আস্তে আস্তে উপলব্ধি করেন যে, চীনের ঐতিহ্যবাহী চিত্রের স্টাইলের মিল আছে তার নিজের উন্মুক্ত চরিত্রের সঙ্গে। তিনি ধীরে ধীরে চীনের ঐতিহ্যবাহী চিত্রকে পশ্চিমা তৈলচিত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করার চেষ্টা করেন। তার আঁকা সব চিত্র অত্যন্ত প্রাণবন্ত। স্পষ্টভাবে দেখা যায়, তার সমস্ত চিত্রে পশ্চিমা তৈলচিত্রের ছায়া ফুটে উঠে।

চীনের কেন্দ্রীয় চিত্র ইনস্টিটিউটে ইরির শিল্পকলার মান দ্রুত গতিতে উন্নত হয়। কিন্তু এই ইনস্টিটিউটে তিনি শুধু শিল্পকলার কৌশল শিখেছেন, তা নয় তিনি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস - ভালবাসাও অর্জন করেছেন। তার সহপাঠী থান খুয়েন ইং পরে তার স্ত্রী হয়েছেন। দু'জনের মধ্যে ভালবাসা খুব আন্তরিক। চিত্র আঁকার ক্ষেত্রে তারা দু'জন পরষ্পরকে সাহায্য করেন। মাঝে মাঝে একটি চিত্র নিয়ে দু'জনের মধ্যে মত বিনিময় হয়। তারা পরষ্পরকে সম্মান করেন। চীনের কেন্দ্রীয় চিত্র ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক হওয়ার পর ইরি থান খুয়েন ইংকে চেক প্রজাতন্ত্রে নিয়ে তাদের বিয়ে সম্পন্ন করেন। তাদের সংসার জীবন শান্ত ও সরল। এক সাক্ষাত্কারে ইরি বলেন, চীনে তিনি তার শিল্পকলা ভালভাবে উন্নয়ন করতে পারেন। তিনি সব সময় চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত। চীনে থাকলে চীনের ঐতিহ্যবাহী চিত্র আঁকার ক্ষেত্রে তিনি যেমন সুযোগ পান, তেমনি তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে হয়।

দু হাজার পাঁচ সালে ইরি দম্পত্তি ছেলেকে নিয়ে পেইচিংয়ে ফিরে আসেন। তারা পেইচিং উপকণ্ঠের থাংচৌ জেলার সংছুয়াংয়ে বসবাস করেন। সংছুয়াং এমন একটি জায়গা যেখানে চীনের অনেক আধুনিক চিত্রকর থাকেন। এখানে চিত্র আঁকার পরিবেশ ভাল। সংছুয়াংয়ে আসার পর ইরি চিত্র আঁকার আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। তার স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর তিনি সংছুয়াংয়ে একটি চেক-চীনা চিত্রশালা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার স্ত্রী থাং খুয়েন ইং বলেন, তিনি আশা করেন, এই চিত্রশালা চীন ও চেক প্রজাতন্ত্রের মধ্যকার সংস্কৃতি ও শিল্পকলা যোগাযোগের প্ল্যাটর্ফমে পরিণত হবে।

গত মে মাসে চীনা–চেক আধুনিক চিত্রশালার উদ্বোধন হয়। থাং খুয়েন ইং এই চিত্রশালা পরিচালক হয়েছেন। কেন তিনি এই চিত্রশালার পরিচালক হন নি - এই প্রশ্নের উত্তরে ইরি হাসতে হাসতে বললেন, চিত্র আঁকা তার সবচেয়ে ভাল লাগে। তার বন্ধুবান্ধবদের চোখে ইরি সরল ও অকপট মানুষ। তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো চিত্র আঁকা। এ ছাড়া তিনি অন্যান্য ব্যাপারে মাথা ঘামাতে চান না।

এতক্ষণ চেক প্রজাতন্ত্রের আধুনিক চিত্রকর ইরি সম্পর্কে শুনলেন।

এখন আরেকটি প্রতিবেদন শুনবেন। এটির শিরোনাম: 'ছুংছিয়াংয়ে পাকিস্তানের আমিরের স্বেচ্ছাসেবক জীবন'। পরিবেশন করছি আমি—

জুলাই মাসে ছুংছিয়াং আবহাওয়া খুব গরম। পাকিস্তানের ছাত্র আমির ঠিক এই গরমের দিনে ছুংছিয়াংয়ে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করতে শুরু করেন। তিনি এখন ছুংছিয়াংয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর তিনি আবাসিক এলাকায় ছুটি কাটানো স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষাদান করতে আসেন। কেন গ্রীষ্মকালীন ছুটির দিনে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করেন - এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বেশি সামাজিক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা এবং এসব ছাত্র-ছাত্রীকে সাহায্য করা তার স্বেচ্ছাসেবক কাজের প্রধান লক্ষ্য।

তিন বছর আগে তিনি পাকিস্তান থেকে চীনের ছুংছিয়াং আসেন। বতর্মানে তিনি মোটামুটি অনর্গল চীনা ভাষা বলতে পারেন। কিন্তু ক্লাসে ভর্তি ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে তাকে শারীরিক ভাষা ব্যবহার করতে হয়। মাঝে মাঝে ইংরেজি ভাষাও ব্যবহার করা হয়। প্রতি ক্লাসের আগে তিনি অনেক প্রস্তুতি নেন। তার বন্ধুদের সাহায্যে তাকে সীমিত চীনা ভাষায় সংশ্লিষ্ট তথ্য খুঁজতে হয়। তিনি মনে করেন, এসব ছাত্র-ছাত্রীকে পড়ানোর সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো ক্লাসকে আকর্ষণীয় করে তোলা। তা ছাড়া তাদের জ্ঞান গ্রহণের সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষার পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। শিক্ষার প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য তিনি প্রতিদিন লজেন্স নিয়ে আসেন ক্লাসে। কেউ যদি প্রশ্নের ভালো উত্তর দিতে পারে তাহলে তিনি তাকে একটি লজেন্স দেন পুরস্কার হিসেবে। এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, এখানকার ছেলে-মেয়েরা চমত্কার। তিনি তাদের সঙ্গে নিজের জানা ব্যাপার ভাগাভাগি করতে পছন্দ করেন। এসব ছেলে-মেয়ের সঙ্গে আদান-প্রদান করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের সঙ্গে আদান-প্রদান করার মধ্যে পাথর্ক্য রয়েছে। কারণ এখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান লাভ করা এবং কোনো নতুন জিনিস জানার কৌতুল খুব বেশি।

এক সাক্ষাত্কারে আমির বলেন, তিনি চীন সম্পর্কে আরও বেশি জানতে চান। কেবল বই বা টেলিভিশনের মাধ্যমে নয় এসব ছেলে-মেয়ের কাছ থেকে বাস্তব চীন সম্পর্কে জানতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040