Web bengali.cri.cn   
একজন মার্কিন নারী শিক্ষকের পরিবারের ভালবাসা সম্পর্কে
  2012-09-10 16:31:55  cri

চীনের ফুজিয়েন প্রদেশের নিনডে শহরে একটি পাহাড়ি গ্রাম আছে। এই গ্রামে 'ভালবাসা পরিবার' নামক একটি অনাথাশ্রম আছে। একদিন একজন মার্কিন শিক্ষক এই 'ভালবাসা পরিবারের' ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ইংরেজি ভাষা শিখাচ্ছিলেন। ঠিক তখন বাইরের খেলার মাঠে আরও তিন জন বিদেশি স্কুলের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে বল বা অন্যান্য খেলাধুলা করছিল। এ তিন জন শিক্ষক বেইছির পরিবারের সদস্য। এসব ছেলে-মেয়ে এই 'ভালবাসা পরিবারের' ছেলে-মেয়ে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অনাথ, কেউ কেউ প্রতিবন্ধী।

এই গ্রামের শিয়ু ই জেন এ অনাথাশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। অনাথাশ্রমের আরেকটি নাম 'ভালবাসা পরিবার'। বতর্মানে এই অনাথাশ্রমে মোট ৫১জন অনাথ ও প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়ে আছে। দু'হাজার দশ সালের অগাস্ট মাসে মার্কিন শিক্ষক নিনডে শহরের নমার্ল ইন্সটিটিউটে শিক্ষাদান করতে আসেন। তখন থেকে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে এখানকার ছেলে-মেয়েদেরকে দেখতে আসেন। এখানকার ছেলে-মেয়েরাও তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে অত্যন্ত পছন্দ করে। আস্তে আস্তে দু'পক্ষের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়।

বেইছি একজন মার্কিন নাগরিক। তিনি ও তাঁর পরিবার এসেছে যুক্তরাষ্টের নিউইয়র্ক থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে বেইছি একজন চমত্কার শিক্ষক ছিলেন। চীনে আসার আগে তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শিক্ষক ছিলেন। ভাষা প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে তাঁর অনেক অভিজ্ঞতা আছে। এ ক্ষেত্রে তিনি অনেক নিবন্ধও প্রকাশ করেছেন। দু'হাজার দশ সালের অগাষ্ট মাসে তিনি তাঁর পরিবার নিয়ে চীনে আসেন। এর আগে তিনি কোনো দিন চীনে আসেননি।

এক সাক্ষাত্কারে বেইছি বলেন, তিনি চীনে শিক্ষাদান করতে আসেন। এর পাশাপাশি তাঁর পরিবার চীনে 'নিজের শিকড়' খুঁজতে এসেছেন। তিনি বলেন, তাঁর স্বামীর পুর্বপুরুষ চীনের কুওয়াংতং প্রদেশের। চীন তাঁর দ্বিতীয় জন্মস্থান। চীনের প্রতি তাদের বিশেষ অনুভূতি আছে। তিনি সংবাদদাতাকে বলেন, তাঁর স্বামী হলেন কিউবার কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য। চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির প্রতি তাঁর স্বামীর বিশেষ অনুভূতি আছে। এ জন্য তিনি বিশেষভাবে মাও জে তংয়ের জন্মস্থান শাওসেন পরিদর্শন করেছিলেন ।

তিনি বলেন, নিনডে নর্মাল ইন্সটিটিউটে শিক্ষাদানের সুযোগ পেয়ে তিনি অত্যন্ত খুশি। চীনে আসার আগে তাঁর একজন মার্কিন সহকর্মী ডাননি চীনের অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা দান করেছিলেন। তিনি নিনডে শহরে অনেক ছবি তুলেছিলেন। ডাননির তোলা ছবিগুলো বেইছিকে গভীরভাবে আকর্ষণ করে। তিনি নিনডে শহরের দৃশ্য খুব পছন্দ করেন। তখন তিনি মনে মনে ভাবেন, তিনি অবশ্যই ভবিষ্যত একদিন চীনের এ শহরে কাজ করতে আসবেন। দু'হাজার দশ সালের অগাস্ট মাসে তাঁর এই আকাংক্ষা বাস্তবায়িত হয়।

সম্প্রতি সংবাদদাতা তাঁর বাসায় এসে দেখতে পান, তাঁর বাসার দেয়ালে চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অনেক ছবি ঝোলানো আছে। গোটা রুম সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। সংবাদদাতা দেখেন, এ সব ছবির মধ্যে রয়েছে পেইচিং আপেরোর একটি বড় আকারের ছবি। এক কথায় তাঁর অভ্যর্থনা কক্ষ পুরোপুরি চীনা ধাঁচে সাজানো। বেইছি সংবাদদাতাকে বলেন, তিনি চীনকে পছন্দ করেন, বিশেষ করে চীনের সংস্কৃতি পছন্দ করেন। তিনি বলেন, তিনি পেইচিং আপেরো দেখতে পছন্দ করেন। চীনে আসার আগে চীনের সংস্কৃতির ওপর তাঁর খুব আগ্রহ ছিল। চীনে আসার পর চীনের সংস্কৃতির ব্যাপারে তাঁর কৌতুহল আরও বেড়েছে।

চীনে আসার আগে বেইছি কিছু চীনা ভাষা শিখেছিলেন। কিন্তু সেটুকু ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত সীমিত। চীনে আসার পর তাঁর পরিবার অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল। কোনো দোকানে কিছু কিনতে গেলে তিনি দোকানিদের কথা বুঝতে পারতেন না। কিন্তু ইন্সটিটিউটের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে অনেক সাহায্য করেছেন। তিনি তাদের কাছ থেকে অনেক চীনা ভাষা শিখেছেন। এখন বেইছি সাবলীলভাবে চীনা ভাষা বলতে পারেন।

নিনডে নর্মাল ইন্সটিটিউটের বিদেশি ভাষা বিভাগ বেইছির জন্য বিশেষভাবে একজন সহকারি নিয়োগ করেছে। তা ছাড়া আরও চাঁর জন ছাত্র-ছাত্রী তাঁর সহকারি হিসেবে কাজ করে। তাদের সাহায্যে বেইছি ও তাঁর পরিবারের সমস্যা অল্প সময়ের মধ্যে সমাধান হয়ে যায়। ইন্সটিটিউট আয়োজিত বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য বেইছিকে প্রতি বার আমন্ত্রণ জানানো হয়। অন্যদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের ইংরেজি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বেইছি মাঝে মাঝে ইংরেজি ভাষার সেমিনারের আয়োজন করেন। ইংরেজি ভাষা চর্চার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য তাঁর উদ্যোগে একটি 'ইংরেজি কর্নার' স্থাপিত হয়েছে। তা ছাড়া প্রতি সপ্তাহে এক বার করে বেইছি বিনামূল্যে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে স্প্যানিশ ভাষার প্রশিক্ষণ দেন। তিনি সংবাদদাতাকে বলেন, ইন্সটিটিউটে তারা একটি বড় পরিবারের মতো। তাঁর স্বামী এখানকার পুরুষ শিক্ষকদের দেখলে সবসময় 'ভাই' বলে সম্বোধন করেন।

বেইছি সংবাদদতাকে বলেন, চীনে তাঁদের অনেক বন্ধু আছে। তাঁর ইন্সটিটিউটের চীনা সহকর্মী টম তাঁর পরিবারের বন্ধু। যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে আসার পর টম তাদের পরিবারকে অনেক সাহায্য করেছেন। বেইছির স্বামী টনি সংবাদদাতাকে বলেন, তাঁর ছেলে ও মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার ব্যাপারে টম অনেক সাহায্য করেছেন। তিনি তাঁদের ছেলে-মেয়ের সব ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়েছেন।

বেইছি ও টনির একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় ছেলে চায়ালো সপ্তম শ্রেণীর আর মেয়ে শায়ালিন দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল। তাদের চীনা ভাষার মান উন্নত করার জন্য চীনে আসার পর তাদেরকে আবার একই শ্রেণীতে এক বছর বেশি পড়তে হয়েছে। বেইছি সংবাদদাতাকে বলেন, এখন তাঁর ছেলে-মেয়ে খুব ভাল চীনা ভাষা বলতে পারে। বিশেষ করে শায়ালিন সাবলীলভাবে চীনা ভাষা বলতে পারে।

সংবাদদাতার সঙ্গে যখন কথাবার্তা চলছিল ঠিক তখন শায়ালিন তার শোবার ঘর থেকে বেরিয়ে অভ্যর্থনা কক্ষে আসে। সে সংবাদদাতাকে বলে, তার চীনা ভাষার কোর্স সবচেয়ে ভাল। বলতে বলতে সে একটি খাতা সংবাদদাতাকে দেখায়। সংবাদদাতা লক্ষ্য করেন, শায়ালিনের হাতের লেখা বেশ ভাল। কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তর চীনা ছাত্র-ছাত্রীদের মতো।

শায়ালিন সংবাদদাতাকে বলে, স্কুলে সে সাধারণত ইংরেজি ভাষায় তার পড়ার সাথীদের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু সে চীনা ভাষায় অন্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পছন্দ করে। চীনা ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভাল। বেইছি সংবাদদাতাকে বলেন, চীনের সংস্কৃতি গ্রহণের জন্য তাঁর বাসায় সব সময় চীনা খাবার তৈরি করা হয়। সে বলে, চীন তাদের পরিবার। নিনডে শহরে তাদের পরিবারের জীবন অত্যন্ত আরামদায়ক এবং শান্ত। এখানকার সবকিছু তাদের কাছে প্রিয় এবং এখানকার সবকিছু সে পছন্দ করে।

সে সংবাদদাতাকে আরো বলে, গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর তার পরিবার নিনডে শহর ছেড়ে চীনের অন্য শহরে যাবে। সে বলে, তারা অবশ্যই চীনে বসবাস করতে থাকবে। একজন ভাষার দূতের দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়ে সে অত্যন্ত খুশি। এর পাশাপাশি সে চীনে তাদের আত্মীয়স্বজনকে খুঁজতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040