Web bengali.cri.cn   
একজন ক্যনাডিয়ান নারী শিক্ষক বাবালা সম্পর্কে
  2012-09-10 16:30:56  cri

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অধিক থেকে অধিকতর বিদেশি চীনে কাজ করতে আসছেন। চীনের গঠনকাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ সব বিদেশি নানা ধরনের অবদান রেখে চলেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই চীনকে খুব ভালবাসেন। এমন কি তারা আজীবন চীনে থাকতে চান। সত্তর বছর বয়স্ক ক্যানাডিয়ান শিক্ষক তাদের মধ্যে একজন ।

বতর্মানে বাবালা গুয়াংতং প্রদেশের ছানচিয়াং শহরের সমুদ্র বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন। কিছু দিন আগে সি আর আইয়ের নিজস্ব সংবাদদাতা ক্যানাডিয়ান শিক্ষক বাবালার এক সাক্ষাত্কার নেন। চীনকে কেমন লাগে এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চীন হলো একটি অত্যন্ত স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ও অলৌকিক দেশ। চীনে দেখার মতো অনেক সুন্দর জায়গা আছে। চীনের ইতিহাস সুর্দীঘকালের। চীনের সংস্কৃতি প্রগাঢ়। ছানচিয়াং একটি সুন্দর শহর। তিনি এখানকার সবকিছুকে ভালবাসেন। এখন তাঁর শরীর ভাল। বাকী জীবন চীনে কাটাতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বাবালার বয়স সত্তরেরও বেশি। তিনি এখন ছানচিয়াং শহরের কুয়াংতং সমুদ্র বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষার একজন শিক্ষক। গত ২০ বছর ধরে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। বাবালা প্রসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, দু'হাজার নয় সালে বাবালা চর্ম ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তিনি ক্যানসারের সঙ্গে সংগ্রাম করার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ান। সুতরাং তাকে 'নরম্যান বেথুনের' মতো একজন বিদেশি শিক্ষক বলে আখ্যায়িত করা হয়।

সাক্ষাত্কারে বাবালা বলেন, তিনি ১৯৯২ সালের প্রথম দিকে ছানচিয়াং শহরে আসেন। এখানকার চার ঋতুর সবুজ পরিবেশ এবং নীল আকাশ তাকে আকর্ষণ করে। তখন থেকে তিনি ছানচিয়াংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বলেন, তিনি ছানচিয়াংয়ের সবকিছুকে পছন্দ করেন।

বাবালার ব্যাপারে কুওয়াংতং সমুদ্র বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশংসার অন্ত নেই। তারা বাবালাকে খুব শ্রদ্ধা করেন। শিক্ষক শিউ সংবাদদাতাকে বলেন, গত ২০ বছর ধরে বাবালা ছানচিয়াংয়ে পড়াচ্ছেন। এখানে তার মতো এত লম্বা সময় কাজ করেছেন এমন বিদেশি মানুষ আর নেই। তিনি উন্নত দেশের আরামদায়ক জীবন এবং কাজকর্মের ভাল পরিবেশ পরিত্যাগ করে ছানচিয়াং শহরে এসেছেন। ছানচিয়াং একটি ছোট শহর। এখানকার অবস্থাকে ক্যানাডার সঙ্গে তুলনা করা যায় না। কিন্তু ছানচিয়াংয়ে পড়ানোর ২০ বছরে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে খুব পছন্দ করেন। উল্লেখযোগ্য, বাবালার দৈনন্দিন জীবন অত্যন্ত সরল। প্রতি বছর তিনি চীনের কিশোর-কিশোরী উন্নয়ন তহবিলে কাছে টাকা প্রদান করেন। তিনি সক্রিয়ভাবে ছানচিয়াং শহর বা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেন। চীনের যে কোনো অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে তিনি ইতস্তত না করে দুর্গত অঞ্চলের প্রতি তাঁর সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি যখন ছানচিয়াং শহরে শিশু কল্যাণ তহবিল গড়ে তোলার খবর শুনেন, তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তা ছাড়া, যখন ছানচিয়াং শহরে কোনো কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়, তখন বাবালা অবশ্যই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে যান।

এক সাক্ষাত্কারে কুওয়াংতং সমুদ্র বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি ভাষা ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট গুও শিয়ে হং বলেন, বাবালার পড়ানোর কৌশল অন্য বিদেশি শিক্ষকদের থেকে ভিন্ন। তিনি ভালভাবে জানেন, চীনা ছাত্র-ছাত্রীরা কি কি চান। সুতরাং তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের চাহিদা মোটানোর জন্য অনেক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। সাধারণত একটি ক্লাসের জন্য তিনি আগে থেকে অনেক প্রস্তুতিমূলক কাজ করেন। তাঁর প্রতিটি ক্লাস প্রাণবন্ত। দীর্ঘকাল ধরে তাঁর ক্লাস ভাষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের আকর্ষণ করছে।

কুয়াংতং সমুদ্র বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় হলো একটি বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানে ইংরেজি ভাষা শিখার পরিবেশ আরও সুন্দর করে তোলার জন্য বাবালার উদ্যোগে প্রতি শুক্রবার ইংরেজি কর্লারের আয়োজন করা হয়। যারা ইংরেজি ভাষা বলার চর্চা করতে চান এই ইংরেজি কর্লারের তাদের জন্য সুযোগ যুগিয়ে দেয়। বাবালা সে দিন ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে ইংরেজি ভাষায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তা ছাড়া, তিনি নিজের বেতন দিয়ে একটি ছোট ইংরেজি লাইব্রেরি স্থাপন করেছেন। এই লাইব্ররিতে সহস্রাধিক ইংরেজি বই রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা লাইব্রেরি থেকে বই ধারও করতে পারেন। এই লাইব্রেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী এমন কি বাইরের মানুষকে আকর্ষণ করে। ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য প্রতি বুধবার বাবালা এই লাইব্ররিতে থাকেন। তাঁর এই ইংরেজি লাইব্রেরি স্থাপিত হওয়ার পর ইংরেজি ভাষা-ভক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি পারষ্পরিক মত বিনিময়ের প্ল্যাটর্ফম তৈরি হয়েছে।

বাবালার চমত্কার কৃতিত্বের কারণে ছিনচিয়াং সমুদ্র বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েক বার তার বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তিনি প্রতিবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের সদিচ্ছা বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি সংবাদদাতাকে বলেন, একজন বিদেশি শিক্ষক হিসেবে তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো কিভাবে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সাহায্য করা এবং তাদের সমাস্যার সমাধান করা যায় সেটি। তিনি বলেন, "কোনো কোনো মানুষের জন্য হয়তো বস্তুগত প্রেরণা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমার পক্ষে তা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপর নয়।" তিনি আরো বলেন, চীনে আসার জন্য হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করাকেও তিনি তুচ্ছ জ্ঞান করেছেন কেবল টাকার জন্য নয়। তিনি বলেন, মানুষের জীবনে টাকা গুরুত্বপূর্ণ বটে, কিন্তু একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নয়।

বাবালার বয়স এখন সত্তর। এত বেশি বয়সেও কেন শিক্ষাদানের প্রতি তাঁর এত নিষ্ঠা - এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষাদানের প্রতি ভক্তি 'ভালবাসা' থেকে। তিনি বলেন, তিনি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ভালবাসেন। তিনি তাঁর শিক্ষার ব্রতকে ভালবাসেন। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কিছু করতে পারেন বলে তিনি অত্যন্ত খুশি। তিনি আরও বলেন, যখন তিনি ক্লাসে প্রবেশ করেন তখন তাঁর মন প্রফুল্ল হয়ে উঠে। তিনি বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে থেকে তিনি মনে শান্তি পান।

কুয়াংতং সমুদ্র বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈদেশিক বিষয়ক একজন কর্মকর্তা সংবাদদাতাকে বলেন, গত ২০ বছর ধরে বাবালা এখানকার শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ভালবাসা ও সম্মান পেয়ে আসছেন। সবাই তাঁর মহান ব্যক্তিত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি ছিনচিয়াং শহরের 'সম্মানীয় নাগরিক' পদবী অর্জন করেছেন। তা ছাড়া তিনি কয়েক বার 'কুয়াংতং প্রদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিদেশি শিক্ষকের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার' ও 'দক্ষিণ কুয়াংতং মৈত্রী পুরুস্কার' লাভ করেছেন। বাবালাকে স্থায়ী চীনা অধিবাসী হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার জন্য কুয়াংতং সমুদ্র বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট মহলে আবেদনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাঁর আশা মোটানোর জন্য চীনের সংশ্লিষ্ট মহল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040