Web bengali.cri.cn   
কুয়াংযৌ ----তিনটি রাজবংশের রাজধানী
  2010-10-24 15:05:53  cri

এশিয়া অলিম্পক পরিষদ ও কুয়াংচৌ এশিয়া গেমস সাংগঠনিক কমিটির যৌথ উদ্যোগে গঠিত " এশিয়া পথ" নামক একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া সফর করছে। ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থানকালে প্রতিনিধি দল স্থানীয় অলিম্পক কমিটির কাছে " এশিয়া পথ" স্মারক প্রতীক ও কুয়াংচৌ এশিয়া গেমস ২০১০—এর মঙ্গল প্রাণী ও প্রতীক হস্তান্তর করেছে।

ব্রুনেইয়ের অলিম্পিক কমিটি সম্প্রতি জানিয়েছে, কুয়াংচৌ এশিয়া গেমসে অংশ গ্রহণকারীদের সংখ্যা এখনও নিধারর্ণ করা হয়নি, কিন্তু ব্রুনেই এশিয়ার এই ক্রীড়ার মহা সমাবেশে যোগ দিতে অত্যন্ত আগ্রহী।

" আমি এশিয়া গেমসে ছোট মালিক" শিরোনামে কুয়াংচৌ শহরের " ছোট মেয়র" নিবার্চন কমর্সূচী সম্প্রতি চূড়ান্ত বাচাই পযার্য়ে উন্নীত হয়েছে। মোট ৩০ জন প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও ৩০জন মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রী আগামী মে মাসে অনুষ্ঠেয় সেমি ফাইনাল প্রতিযোগিতায় যোগ দেবে। প্রিয় বন্ধুরা, এতক্ষণ কুয়াংচৌ এশিয়া গেমস সম্পর্কিত কয়েকটি সংক্ষিপ্ত খবর শুনলেন। এখন আপনারা শুনতে পাবেন একটি প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটির শিরোনাম : " কুয়াংযৌ ----তিনটি রাজবংশের রাজধানী

শ্রোতা বন্ধুরা, গত সপ্তাহের এ অনুষ্ঠানে আমরা কুয়াংচৌ শহর সম্পর্কে কিছুটা জানিয়ে দিয়েছি। এখানে উল্লেখযোগ্য , কুয়াংচৌ চীনের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। এ শহরে চীনা প্রবাসীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। তাহলে কুয়াংচৌর ইতিহাসের দিকে একটি নজর দেয়া যাক। যখন ইতিহাস তত্ত্ব মহলে কুয়াংচৌর মূল্যয়ন করা হয় তখন দুটো বিষয় অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। প্রথমত: কুয়াংযৌ " তিনটি রাজবংশের রাজধানী" , দ্বিতীয়ত: কুয়াংচৌ " সমুদ্রে রেশম পথের" উত্পত্তিস্থল । আজকের এই অনুষ্ঠানে কুয়াংচৌ শহর সম্পর্কে একজন নৃবিজ্ঞনীর বিবরণ শুনতে পাবেন। তাঁর বিবরণ থেকে আমরা কুয়াংচৌ শহরের ইতিহাস ভালভাবে জানতে সক্ষম হবো।

প্রাচীন কালে কুয়াংচৌ নানইউয়ু, নানহ্যান ও নানমি এ তিনটি বাজবংশের রাজধানী ছিল। এ তিনটি রাজবংশের মধ্যে নানইউয়ু রাজ্য কুয়াংচৌর ইতিহাসের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। কুয়াংতুং প্রদেশের সাহিত্য ও ইতিহাস গবেষণালয়ের সদস্য হুয়াং মিও জান যিনি ১৯৭৬ সাল থেকে কুয়াংচৌ অঞ্চলের পুরার্কীতি ও প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তিনি বলেন, কুয়াংচৌর ইতিহাস দীর্ঘকালের। সুতরাং কুয়াংচৌ চীনের একটি বিখ্যাত শহর। তিনি বলেন,

কুয়াংচৌর দক্ষিণে দক্ষিণ সাগর এবং উত্তরে ইউয়ুসিও পাহাড়। খৃষ্টপূর্ব ২১৪ সালে যখন ছিং রাজবংশের রাজার পাঠানো পাঁচটি দলের বাহিনী দক্ষিণ চীনে দমন করতে আসতো তখন একটি বাহিনী কুয়াংচৌতে এসে পড়ে। তারা বাইইউয়ু পাহাড়ের মাঝখানের একটি খালি স্থানে একটি শহর তৈরী করল। শহরের নাম ছিল প্যানইউয়ু। প্যানইউয়ুই আজকের কুয়াংচৌ শহর। এ কথাও বলা যায়, কুয়াংচৌ শহরের ইতিহাস ২২২৩ বছরের ।

খৃষ্টপূর্ব ২০৬ সালে ছিং রাজবংশের উত্খাত হয় । দু'বছর পর ছিং রাজবংশের প্রাক্তন জেনারেল চাও ডো নানইউয়ু রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। রাজধানীর নাম প্যাইউয়ু। তখন নানইউয়ু রাজ্যের ভূভাগ খুব বিশাল ছিল। আজকের কুয়াংতুং , কুয়াংসির বেশির ভাগ , ফুজিয়ান, হুনান, গুইচৌ ও ইয়ুনান প্রদেশের আংশিক অঞ্চল এবং ভিয়েতনামের উত্তর অঞ্চল নানইউয়ু রাজ্যের ভূভাগ ছিল।

নানইউয়ু রাজ্যের প্রতিষ্ঠায় চীনের লিননান অঞ্চলের সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল আদিম সমাজে আধুনিক উত্পাদন প্রযুক্তি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গড়ে তোলা হয়। যার ফলে উত্পাদনের বিকাশ ও সমাজ অগ্রগতি তরান্বিত করা হয়। চেয়ারম্যান মাও জে ডং এক সময় এভাবে চোও ডোওকে মূল্যায়ন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, চোও ডোও চীনের লিননান অঞ্চলের সেরা মানুষ ছিলেন। হুয়াং মিও জান বর্ণনা করে বলেন

চোও ডোও ও তাঁর সঙ্গীরা তখনকার মধ্য চীন থেকে আধুনিক সংস্কৃতি ও আধুনিক চাষ প্রযুক্তি এবং হাতিয়ার লিননান অঞ্চলে নিয়ে আসেন। এর পর কুয়াংচৌ অঞ্চলের অর্থনীতি মধ্য চীনের সমান হয়ে গেল । আমরা এই সময়পর্বকে লিননান অঞ্চলের উন্নয়নের সময়পর্ব বলে মনে করি।

বহু তথ্য ও পুরার্কীতি থেকে প্রতীয়মান হয়েছে যে, নানইউয়ু রাজ্য লিননান অঞ্চলের সভ্যতা স্থাপনের সময়পুর্ব ছিল। ১৯৮৩ সালে নানইউয়ু রাজ্যের দ্বিতীয় রাজা---চোওডোর নাতি চৌও মেইর সমাধি কুয়াংযৌ শহরের ইউয়ুসিও অঞ্চলে উদ্ধার করা হয়েছে। তার সমাধির সব পুরার্কীতি অক্ষত রয়েছে। নানইউয়ু রাজার সমাধির উদ্ধারকে গত অর্ধশতাব্দীতে চীনের পাঁচটি বড় প্রত্ন উদ্ধারের অন্যতম বলে মনে করা হয়। হুয়াং মিও জান সে সময় কুয়াংযৌর প্রত্ন দলের পরিচালক ছিলেন। তিনি এ কাহিনী স্মরণ করে বললেন,

"ওয়েন রাজার ভ্রাম্যমাণ সিলমোহর " প্রাচীন কালে রাজার সঙ্গে থাকা একটি সিলমোহর ছিল। বাইরে পরিদর্শনের সময় রাজা সব সময় এটা সঙ্গে রাখতেন। নানইউয়ু সমাধিতে যে সিলমোহর উদ্ধার করা হয়েছে তা সবচেয়ে সুন্দর।

থাং রাজবংশের পর চীনে দশটি স্থানীয় প্রশাসন দেখা দেয়। খৃষ্টাব্দ দশম শতাব্দীতে লিও ইয়াং লিননান অঞ্চলে রাজ্য গড়ে তুললেন। রাজ্যের নাম " নানহান" । কুয়াংচৌ এই রাজ্যের রাজধানী। বতর্মানের কুয়াংতুং, কুয়াংসি, হাইনান, হুনান ও গুয়েচৌর কোন কোন অঞ্চল এবং ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চল এ রাজ্যের ভূভাগ ছিল। "নানহান" রাজ্যের ইতিহাস মাত্র ৫৫ বছরের হলেও গবেষকদের মতে এই ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কুয়াংচৌ যাদুঘরের ইতিহাস বিষয়ক গবেষক জেন হং চিন বললেন,

তখন উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য দেশে ঘনঘন যুদ্ধ চলছিল। জনসাধারণের জীবন ছিল খুব কষ্টকর । সমাজ ও অর্থনীতির পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থির ছিল। কিন্তু নানহান রাজ্যের পরিস্থিতি অর্ধশতাব্দী ধরে স্থিতিশীলতা টিকিয়ে রেখেছিল। সুতরাং লিননান অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য নানহান রাজ্যের অবদান উল্লেখযোগ্য।

নানহান আমলে অবাধ বাণিজ্যের মৌলিক নীতি প্রচলিত হত। সে সময় লিননান অঞ্চলে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কুয়াংচৌর অবস্থান প্রতিষ্ঠার সূত্রপাত হল।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040